‘বয়কট’ আন্দোলনের মুখে পড়া শিক্ষকদের সম্পর্কে কী ভাবছে ঢাবি?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের বয়কটের মুখে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় ৮০ জন শিক্ষক। আন্দোলন পরবর্তী বয়কটের শিকার হওয়া এসব শিক্ষকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনকে। বয়কটের শিকার হওয়া এসব শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বিরত থাকলেও সম্প্রতি বেশ কয়েকজন নিজ বিভাগে ফিরেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট থেকে বয়কটের শিকার এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জুলাই আগস্টের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের হুমকি দেওয়া, নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরকারকে তথ্য দেওয়াসহ প্রভৃতি অভিযোগ ছিল। এসব শিক্ষকরা সবাই আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় অনেক শিক্ষক ইতোমধ্যে নিয়মিত কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এই বয়কট আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আজিজুল হক। তিনি জানান, আমাদের বিভাগের অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান চান এবং মাহবুবুর রহমান লিটুর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল। ফলে শিক্ষর্থীরা তাদের বয়কট করলে প্রশাসন একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে তদন্ত করে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে এই দুই শিক্ষকের দোষ প্রমাণিত হয়। তারা এখনো ক্লাশ-পরীক্ষার বাইরে আছেন। তবে কতদিন এভাবে থাকবে, সেটার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। 

এদিকে ক্লাস পরীক্ষায় ফিরতে পেরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল বাছিরসহ বিভাগটির চারজন শিক্ষক। যাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অভিযোগ তোলার পর প্রশাসনের সমন্বয়ে সেটার সমাধান হয়। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন শিক্ষকের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলার পর সাময়িকভাবে ওই শিক্ষকরা ক্লাস পরীক্ষার কার্যক্রমে ফিরতে না পারলেও পরবর্তীতে প্রশাসনের সমন্বয়ে তারা পুনরায় ক্লাসে ফিরেছেন।

আন্দোলন পরবর্তী বয়কটের শিকার হওয়া শিক্ষকদের কোনো তালিকা প্রশাসনের কাছে আছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা জানান, সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা কঠিন। কারণ ইতোমধ্যে বয়কটের শিকার হওয়া অনেক শিক্ষক ইতোমধ্যে ক্লাসে ফিরতে পেরেছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাত্র শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।

“এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আবেগকে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। অনেক শিক্ষকের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ অনেক বেশি। আবার কারো বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কিছুটা নমনীয় হয়ে ক্লাসে আসতে সম্মত হয়েছে। কাজেই কতজন ক্লাস পরীক্ষার বাইরে আছেন এই সংখ্যাটা এখনই বলা যাবে না। সব ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও আমরা সম্পূর্ণ বিষয়কে খুব প্রফেশনালি সমাধান করার চেষ্টা করছি।”

অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা আরও বলেন, এর বাইরে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনদেরকেও বিষয়টি সহজভাবে সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। এটার জন্য কোনো নির্দিষ্ট আইন বেধে দেয়া হয়নি। কয়েকটি সত্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা এটার বিষয়ে কাজ করছেন। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা ছিলেন। এই কমিটি আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিবেন। সেখানে অভিযুক্ত শিক্ষকদের অপরাধের বিষয়ে তদন্ত হবে। সাথে অন্য কেউ জড়িত রয়েছেন কিনা, থাকলে কি কি কাজ করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সিন্ডিকেট থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। অর্থাৎ কিছু প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, আবার কিছু প্রক্রিয়া 

নিয়মিত কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল এবং প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান। তবে চলতি সেমিস্টারে নিজ বিভাগ ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্সে নিজের কোনো কোর্স না থাকায় এখনো নিয়মিত বিভাগে আসেন না সাবেক উপাচার্য মাকসুদ কামাল।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি জানান, আওয়ামী মতাদর্শ ধারণ করলেও কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত হইনি। শিক্ষার্থীরা আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করবে এমন কোনো কার্যক্রমের সাথে আমার সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে চলতি সেমিস্টারে আমার কোনো কোর্স নেই। তাই আপাতত গবেষণা ও বই লেখার কাজে ব্যস্ত রয়েছি।

তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে শিক্ষকদের বয়কট আন্দোলনের মুখে পড়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরাও জড়িত আছেন বলে জানা গেছে। কলা অনুষদের একজন সিনিয়র অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যারা বয়কটের শিকার হয়েছেন তাদের সবাই কিন্তু অন্যায়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এখানে পেছন থেকে বিভাগেরই অন্য শিক্ষকরা ছাত্রদের দিয়ে আন্দোলন করিয়েছেন। কারণ, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তারা বিভাগে না থাকলে অন্যদের সুবিধা হবে। প্রভাব থেকে শুরু করে এখানে অর্থনৈতিক অনেক সুবিধার বিষয় রয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে অবশ্যই সেটার একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত।

যেসব শিক্ষকরা এখনো ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না, তাদের বিষয়ে প্রশাসনের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমরা সেটা সত্য উদ্‌ঘাটন কমিটির মাধ্যমে সেটা যাচাই বাছাই করব। অভিযোগ প্রমাণ হলে সেটা সিন্ডিকেট থেকে সিদ্ধান্ত আসবে। তার আগে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাবে না।


সর্বশেষ সংবাদ