২৫ বছরে পদার্পণ করল ঢাবির বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ PM , আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ PM
বিশ্বব্যাপী আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আজ রবিবার (১ ডিসেম্বর) একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বিভাগটির একাডেমিক ও বাস্তবিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিভাগটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও একতা প্রতিষ্ঠায় অবদান বিশেষ করে '২৪ পরবর্তী আন্দোলনে তৎকালীন আন্ত:ধর্মীয় সংকটে যে উন্মাদনা কাজ করছিল সেই সময়ের অবদান তুলে ধরা হয়।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, আমি অর্থনীতির ছাত্রী ছিলাম। আমাদেরকে ইকুয়েশন, ক্যালকুলেশন নিয়ে পড়তে হতো। কিন্তু দিনশেষে ইকুয়েশন, ক্যালকুলেশনের চেয়ে বড় করে দেখা হয় আলোকিত মানুষ হওয়া। এই আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্যই কাজ করে বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ। আশা করি এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা আলোকিত মানুষ হয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, আমি একজন বলা অনুশাদের ডিন হিসেবে গর্বের সাথে বলছি বিশ্বধর্ম সংস্কৃতি বিভাগ কলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাণবন্ত একটি বিভাগ। আমরা যে বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই সেটা হচ্ছে শিক্ষকদের পাঠ-পঠনের সাথে গবেষণা। আমি মন থেকে বলছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদভুক্ত এই বিভাগটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণার পরিমণ্ডলে যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই এটি ২৫ বছরের একটি নবীন বিভাগ হলেও বিভাগটি আমাদের প্রত্যাশার অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন দর্শন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী নুরুল ইসলাম। বিভাগটির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার বাবা ১০ দিন বয়সে মাকে হারান। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, আমি মুসলিম মায়ের গর্ভে জন্মেছি কিন্তু হিন্দু মায়ের কাছ থেকে মাতৃস্নেহ পেয়েছি। কাজেই আমি হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের কাছে ঋণী। তুমি এই ঋণ শোধ করো। আমি বললাম কীভাবে? তিনি বললেন, তুমি আন্থঃধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য কাজ কর। সেদিনই আমি ওয়াদা করেছিলাম আমার জীবনটাকে আমি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির পথে পরিচালিত করব। তখনকার সেই ১৯৬১ সাল থেকেই আমার আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির পথে আমার যাত্রা শুরু। এরপর আমি বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করি।
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে আমি দর্শন বিভাগ থেকে ধর্মতত্ত্বের উপর ঢাবিতে একটি বিভাগ খোলার প্রস্তাব দিই যা ১৯৮৩ সালে ফ্যাকাল্টিতে পাশ হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একাডেমিক কাউন্সিলে তা পাশ হয়নি। কারণ হিসেবে তৎকালীন ভিসি আমাকে ডিপার্টমেন্টভিত্তিক বই ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবের কথা তুলে ধরেন।
তাঁর অনেক সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার ফলে বিভাগটি ১৯৯৬ সালে একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন পায় এবং ১৯৯৯ সালের ১ ডিসেম্বর বিভাগটির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু সায়েম বলেন, পৃথিবীর ধর্মগুলোকে বলা হয় ট্রেজার্স অব উইজডম (জ্ঞানের ভাণ্ডার)। সেগুলোকে অবজ্ঞা করে আমরা সভ্য মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারব না। আজকের সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থায় সেটিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে স্লোগানে সবাই একত্রিত হয়েছিল কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আবারও সেই অশান্তি এবং একই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন মিল নাই। (বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে) মিল কীভাবে করা যায় সেই জন্যই স্যার (কাজী নুরুল ইসলাম) এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সোনার বাংলা বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ গড়তে হবে। এবং এই সোনার মানুষ গড়ার জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিভাগের অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। বিভাগের প্রভাষক ইনজামাম মাহবুব মজুমদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানটিতে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।