বৈষম্যহীন দেশ গড়তে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জাবি সমন্বয়কদের
ফ্যাসিস্ট কাঠামো সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে 'জাতীয় ঐক্য'র আহ্বান জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এর সমন্বয়করা। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার এক লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে উৎখাত করতে সমর্থ হয়। তবে এটি আমাদের কাঙ্ক্ষিত বা চূড়ান্ত অর্জন ছিল না। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন ও রক্তের বিনিময়ে কেবল ফ্যাসিস্টের উৎখাত নয় বরং চেয়েছে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ। যা সরাসরি আপামর ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক ১ দফার অংশ। বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবচেয়ে জরুরি 'জাতীয় ঐক্য'।
সেখানে আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনই পারে দল-মতের ঊর্ধ্বে গিয়ে ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সংস্কারের প্রশ্নে জাতিকে "ঐক্যবদ্ধ" করতে। ফ্যাসিবাদী কাঠামো টিকিয়ে রাখতে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জাতিকে বিভাজন করার ঘৃণ্য প্রয়াসের অংশ হিসেবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তার অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডে লাশের রাজনীতি ও গণপদত্যাগ এর নাটিকা মঞ্চায়িত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৩ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কতিপয় সমন্বয়কের পদত্যাগের বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের বা ক্ষমতা ভাগাভাগির যে জাতীয় জোয়ার শুরু হয়েছে এটি তারই অংশ। জাতিকে বিভাজনের এই অপরাজনীতির ফলে যে-সব সংগঠিত অংশীজনের রাজনৈতিক সুবিধা হাসিল হচ্ছে বা হবে তা এখন সবার কাছে স্পষ্ট।
এছাড়াও কোটা সংস্কার থেকে ১ দফা দাবির এই পথপরিক্রমায় প্ল্যাটফর্মটিতে বিভিন্ন দল-মতের মানুষ যুক্ত হলেও তাদের সকল ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপের স্পিরিট ধারণ করবে না সেটিই বরং প্রত্যাশিত। অনেকে নিজ দলীয় বা ব্যক্তি উদ্দেশ্যে ফেরত যেতে চাইবে।
এই প্ল্যাটফর্ম কোনো ব্যক্তি-বিশেষের নয়, এই প্ল্যাটফর্ম গণমানুষের। তাই কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অপরাধ, নৈতিক স্খলন বা পদত্যাগের মতো দায়-সারা ঘটনায় সে গণমানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত বা মুক্ত হতে পারে কিন্তু গণমানুষের প্ল্যাটফর্ম তাতে অবৈধ হয় না। কিন্তু দেশব্যাপী ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে কতিপয় নামে-বেনামে, সমন্বয়ক পরিচয়ে গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবুও এই প্ল্যাটফর্ম গণঅভ্যুত্থানের অসম্পন্ন দায় নিয়ে এখন অবধি শহিদ ও অঙ্গ হারানোদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসার টাকা নেই, কিস্তি শোধের চিন্তায় ঘুম নেই দ্বীন মোহাম্মদের
লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে শহিদ ও আহতদের রক্তের ঋণ কাঁধে নিয়ে ক্যাম্পাস ও রাষ্ট্র সংস্কারে সকল অংশীজনকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ও জানান সমন্বয়কেরা। একই সাথে ৩টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আগামীর কর্মপরিকল্পনার কথা বলা হয়। উদ্দেশ্যগুলো হলো: আহত ও শহিদ পরিবারের হক আদায়, ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী ও জুলাই গণহত্যায় অংশগ্রহণকারীর বিচার নিশ্চিত এবং ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ ও নতুন বাংলাদেশ গঠনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান নিশ্চিত করা।