ঢাবি অধ্যাপককে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন প্রশাসনের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একই বিভাগের শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে তথ্যানুসন্ধান কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দিন আহম্মদ স্বাক্ষরিত গত ২৬ সেপ্টেম্বরের এক বিজ্ঞপ্তিতে সূত্রে জানা যায়, রেজিস্ট্রার অভিযুক্ত অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বরাবর একটি চিঠিতে তার বিরুদ্ধে করা তথ্যানুসন্ধান কমিটি ও ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে তদন্ত চলাকালীন অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আজিজুর রহমানকে ইসলাম বিদ্বেষী এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে বিভাগ থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিভাগে স্লোগান দিলে বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন তেড়ে এসে শিক্ষার্থীদের জিহাদী বলে আখ্যায়িত করে।
চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে পূর্বেও এমন অভিযোগ থাকায় এবং বার বার সেগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটায় শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক আজিজুর রহমান ও অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের পদত্যাগসহ ৩ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। তাদের দাবিগুলো ছিল, অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বসম্মানে পদত্যাগ করা, ইসলামবিদ্বেষী অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমানকে প্রশাসনিক এবং অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের তা অফিসিয়ালি অবগত করা এবং কতিপয় শিক্ষকের মধ্যে সংগঠিত অপ্রশাসনিক অন্তর্কোন্দলের অতীত এবং বর্তমানের অভিযোগের পুনরায় তদন্ত করে শিক্ষার্থীরা যাতে এই আনপ্রফেশনাল কালচারের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক নিপীড়নের স্বীকার না হয় সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া।
আরও পড়ুন: ছাত্র রাজনীতির সংস্কার চায় সব সংগঠন, রূপরেখা দিচ্ছে না কেউ
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু তথ্যানুসন্ধান কমিটি হয়েছে তারাই বের করুক আমার অপরাধ কী। বিভাগের কোন শিক্ষক ধর্ম বিদ্বেষী তাঁকে নাকি আমি আশ্রয় দিয়েছি এটাই আমার অপরাধ। তথ্যানুসন্ধান কমিটি আমাকে ডাকলে আমার কাছে উত্তর রয়েছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে চাই না।’
আগেও অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ছিল নানা অনিয়মের অভিযোগ। ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান নাছরিন নাহার ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠিতে অধ্যাপক কামাল উদ্দিনকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও নৈতিক স্খলনজনিত বলে উল্লেখ করেন।
ওই চিঠিতে বশেমুরবিপ্রবির তৎকালীন চেয়ারম্যান নাছরিন আক্তার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাছাই কমিটি থেকে অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের নাম প্রত্যাহারের দাবি করে বলেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক নিয়োগ বাছাই বোর্ড ২০১৮ সালে গঠিত হয়েছিলো। বিধি মোতাবেক সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক নিয়োগ বাছাই বোর্ড পুনর্গঠন না হওয়ায় ঐ নিয়োগ বাছাই বোর্ডই চলমান আছে। কিন্তু ওই নিয়োগ বাছাই বোর্ডের একজন সদস্য জনাব ড. মো. কামাল উদ্দিন বিভিন্ন সময় চাকরিপ্রত্যাশী এবং আপগ্রেডেশন প্রত্যাশী প্রার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা (নারী সহকর্মীদের কুপ্রস্তাব দেওয়া ও যৌন হয়রানি করা, আর্থিক সুবিধা দাবি করা, মাদক দ্রব্য যেমন। মদ আনানো) দাবি করেন এবং প্রত্যাশা পূরণ না হলে চাকরি এবং আপগ্রেডেশন না দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন।
আরও পড়ুন: চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী তামিম হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবি উপাচার্যের
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এমনকি উনাকে বিভিন্ন পরীক্ষা কমিটিতে রাখার জন্য চাপ দেন। পরীক্ষা কমিটির বহিরাগত সদস্য হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকম হয়রানি যেমন মেয়েদের মৌখিক পরীক্ষায় জর্জেট শাড়ি পরতে বলা, ছেলেদের দিয়ে মদ আনিয়ে পান করার মত জঘন্য কাজ করা যেটা বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
এছাড়াও তাঁর কথা মতো যে-সব শিক্ষার্থী চলবে, সেসব শিক্ষার্থীকে নিয়োগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল সাইকোলজিতে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
এছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থীকে ২০০৭ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে (অভিযোগ প্রমাণিত) ড. মো. কামাল উদ্দিনকে ২০০৮ সালে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তার নিজের বিভাগের শিক্ষকরা উপাচার্যের কাছে তার দুর্নীতি ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করে অনাস্থা প্রকাশ করেন কয়েকবার। বিভিন্ন নিয়োগ বোর্ডে দুর্নীতি করে যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে ঢাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এই শিক্ষকের ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সাল থেকে চেয়ারম্যান থাকাকালীন কর্মচারী নিয়োগে সম্পূর্ণ অনিয়ম করায় আমি তার নামে মামলাও করি। সেই মামলা এখনও চলমান আছে। এছাড়া নানা সময়ে তিনি বিভিন্ন অনিয়মের সাথে যুক্ত থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেঁচে গেছেন।