শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন কেটে সাঈদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান বেরোবি শিক্ষকের

সংঘর্ষে নিহতক রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ
সংঘর্ষে নিহতক রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ  © ফাইল ফটো

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইলিয়াছ প্রামানিক বলেছেন, অতীতে আমরা এক বা দু’দিনের বেতন কেটে পদ্মা সেতু নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছি। এবার যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা, ও কর্মচারী ১০ দিনের বেতন কেটে বেরোবির প্রথম শহীদ- আবু সাঈদের বাবার পাশে দাঁড়াই, তাহলে হয়তো তার আত্মা শান্তি পেতে পারে। 

গণমাধ্যমে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, আবু সাঈদের নির্মম হত্যাকাণ্ড আজ সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। এ ঘটনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ জুলাই পর্যন্ত বিদ্যমান শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আবু সাঈদ ছিলেন, একজন গরীব বাবার কনিষ্ঠ সন্তান। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যদি সময় পান, তাহলে সাঈদের বাবার কান্নার ভিডিও ক্লিপটি দেখবেন। আমি নিজেও ওরকম একটা পরিবারে থেকে এসেছি। এই পরিবারগুলো কত কষ্ট করে যে তাঁদের সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগায়, তা আমি জানি। 

তিনি বলেন, ছেলেটাকে ১০-১৫ ফুট দূর থেকে তাঁর পাতা বুকে পরপর রাবার বুলেট ছুড়ে আহত করা হলো, অনেক ‘বীরত্ব’ দেখিয়েছে তাঁরা। আমার ঘরের সামনে আমার ছেলের নিথর দেহ পড়ে রইল, আর আমরা সবাই স্ট্যাটাস দিচ্ছি— ‘আমি লজ্জিত, আমি অসহায়, আমি নিন্দা জানাচ্ছি’;। কিন্তু এ স্ট্যাটাস দিয়ে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে না। আবু সাঈদের বাবা তাঁর ছেলেকে আর ফিরে পাবেন না। তবে আমাদের সুযোগ আছে, তার দরিদ্র বাবার পাশে দাঁড়ানোর।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এ শিক্ষক বলেন, সাঈদ চত্বরের পাশে একদিন আমাকেও পুলিশ মাটিতে শুইয়ে পিটিয়েছিল। আমার অপরাধ ছিল, আমি আমার এক ছাত্র পিয়ালকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। সেদিন পুলিশের একটি মারও পিয়ালের গায়ে লাগতে দিইনি; সব মার আমার পিঠে পড়েছিল। সেটিই ছিল আমার শিক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বড় সার্থকতা। 

এটি ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ছিলাম একে অপরের ঢাল স্বরূপ। পিয়াল ছাত্রলীগ করতো, আর আমি আওয়ামী লীগ করি না। তবুও আমাদের বন্ধন ছিল স্বর্গীয়; দলমত নির্বিশেষে আমাদের সম্পর্ক ছিল ছাত্র-শিক্ষকের, যেখানে ছিল অগাধ বিশ্বাস। ছাত্রদের কেউ আক্রমণ করলে তারা আমাদের আচলে এসে লুকাত, নিরাপদ বোধ করত। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের সম্মানের প্রশ্নে ছাত্ররাও এক ইঞ্চি পিছু হটত না। কিন্তু এক যুগের  ব্যবধানে আজ আমাদের এই সম্পর্কটার মধ্যে অনেক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আজ শিক্ষকের সামনে ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করে, কি বীভৎস! ছাত্রদের ভয়ে শিক্ষকরা রুমের ভেতর আটকা থাকে। এ মধুর সম্পর্কটা এত খারাপের দিকে গেল কীভাবে? যাহোক বিচার পাব কিনা জানি না, কারণ সে দিনের সে অন্যায়ের আমরা কোন বিচার পাইনি, উল্টো ফৌজদারি মামলা হয়েছিল আমাদের  বিরুদ্ধে । 

আরো পড়ুন: সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে ব্র্যাক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে দিল পুলিশ

ড. ইলিয়াছ প্রামানিক বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো- আমাদের কিছু করা উচিত। ফেসবুকে এভাবে স্ট্যাটাস দিয়ে দায়মুক্তির চেয়ে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানো উত্তম। শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির প্রতি অনুরোধ, দয়া করে এ মাসের মধ্যেই একটি উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সাঈদের বিষয়ে দুপুরে সভায় বসবেন বলে জানা গেছে। এর আগেই তার পরিবারকে সাহায্যের জন্য কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষকদের ১০ দিনের বেতন কেটে নেওয়ার এ প্রস্তাব দিলেন সহযোগী অধ্যাপক ড. ইলিয়াছ প্রামানিক।

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence