আমার ক্যাম্পাসে রক্ত কেন, প্রশ্ন আয়মানের

আয়মান সাদিক
আয়মান সাদিক  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের প্রায় সবগুলো ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের বিগত কয়েকদিন ধরে চলা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে। সোমবার দুপুরে ঢাবির বিজয় একাত্তর হলের সামনে থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লাঠিসোঁটা, রড, হকিস্টিক, জিআই পাইপ, স্ট্যাম্পসহ দেশীয় অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে ছাত্রলীগের হাতে বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগের হামলা ও মারধরে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর এমন সশস্ত্র হামলা সারা দেশব্যাপী উঠেছে নিন্দার ঝড়। এ তালিকায় এবার শামিল হয়েছেন টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়ামন সাদিক। আয়মান বিশ্ববিদ্যালয় লোগোতে রক্তের চিত্র অঙ্কন করা একটি ছবি শেয়ার করে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! আমার ক্যাম্পাসে রক্ত কেন? প্রতিবাদ জানাই।’’

আয়মানের এমন পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল। এখন পর্যন্ত তার ওই পোস্টে দুই লাখ ৯ হাজার ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মন্তব্য করেছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ। এইচ এম শাহাদাত চৌধুরী নামে একজন ব্যবহারকারী ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘ছাত্রজনতা হেরে গেলে হেরে যাবে দেশ। তাই চলমান আন্দোলনে পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। ছাত্রদের পাশে থেকে তাদের যৌক্তিক অধিকার আদায় করে দিন।’

এর আগে, গত ১৩ জুলাই প্রথমবারের মতো কোটা আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আয়মান সাদিক। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিজের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা।

তিনি বলেন,  কোটা আন্দোলন ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল। তখনও আমি প্রোপারলি এ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছি। মেধা হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোটা। এটাতে কোনো ডাউট থাকা উচিত না।

এদিকে, এদিন ছাত্রলীগের হামলা ও মারধরে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বর, টিএসসি এলাকায় হামলায় আহত হয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে হাসপাতালের ভেতরেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ফলে ওই এলাকায়ও ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপেরে ঘটনা ঘটে।

এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হেলমেট পরিহিত একজনকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি করতেও দেখা যায়। এছাড়া ওই এলাকায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।

একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।

এর প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

দুপুর থেকে বিকেল অবধি চলা এই সংঘর্ষের পর লাঠিসোঁটা হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মহড়া দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষের পুরোটা সময়ই এবং ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা দেশেও পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

 

সর্বশেষ সংবাদ