সঙ্কট-সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

নিম্নমানের খাবার, বিশুদ্ধ পানি, অপরিষ্কার ওয়াশরুম, দুর্বল ওয়াইফাই, আবাসন সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলো। এসব সমস্যা নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের। সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হলেও দেখা যায় না কোনো ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ। এমনকি সমস্যা নিয়ে হল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও শিক্ষার্থীদের কথা আমলে না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে একাধিক হল প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের বিরুদ্ধে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে তারা আগে থেকেই অবগত। এখন তারা বিভিন্ন হলগুলোতে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ দিচ্ছেন। এসব সমস্যা সমাধানে তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন। সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে চলতি সপ্তাহে একটি বৈঠক হওয়ারও কথা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিম্নমানের খাবার, অপরিচ্ছন্ন ওয়াশরুম, দুর্বল ওয়াইফাই, বিশুদ্ধ খাবার পানি, গ্রন্থাগারে পড়ার পরিবেশের অভাব, স্যাঁতস্যাঁতে ও সিলিং খসেপড়া কক্ষ এবং ছাত্র রাজনীতিসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হলগুলো। এতে আবাসিক শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মত তাদের।

শিক্ষার্থীরা বলেন, হলের এসব সমস্যা ছাড়াও প্রধান আরেকটি সমস্যা হলো আবাসন সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ১৪টি হল। এর মধ্যে দুটির কাজ শেষ হলেও অজানা কারণে শিক্ষার্থীদের ওঠানো হয়নি। বাকি ১২টি হলের মধ্যে সাতটি ছাত্রদের, পাঁচটি ছাত্রীদের। এসব হলগুলোতে আনুমানিক সাড়ে ৫ হাজারের মতো আসন রয়েছে, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯  শতাংশ। প্রয়োজনের তুলনায় এটা খুবই কম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের এক ছাত্রী জানান, আবাসিক হলে তারা নানাবিধ সমস্যায় দিন পার করছেন। চাহিদার তুলনায় হলে সিট কম রয়েছে। যার কারণে ছোট একটি সিটে দুইজনও থাকতে হচ্ছে। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ব্যবহারের পানি সংকট, নেই পর্যাপ্ত ফিল্টারের ব্যবস্থা। নিম্নমানের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবার, মশার আধিপত্য, ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেও স্পিডের নাজুক অবস্থা। এসব সমস্যার নিয়ে হল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান থাকেন আলাওল হলে। তিনি বলেন, আমাদের হলেও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ৩টি পানির ফিল্টার। যার ২টি থেকে অনেক সময় পানি আসে না। পশ্চিম ব্লকের প্রথম তলায় ১টি টয়লেট ব্লক এবং দ্বিতীয় তলায় আরও ১টি টয়লেটের দরজা ভাঙা। এ দুই তলায় প্রায় ১১০ জনের জন্য সচল রয়েছে মাত্র ৪টি টয়লেট, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এছাড়া ডাইনিংয়ের খাবার খুবই নিম্নমানের। অনেক সময় খাবারের মধ্যে পোকা পড়ে থাকে। এগুলো দেখে খাবারের প্রতি রুচি থাকে না।

শাহজালাল হলের শিক্ষার্থীরা জানান, এ হলের পানি এতটাই আয়রন যুক্ত যে এটা দেখতে কমলা কালারের মতো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দীন জানান, আমাদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে উপাচার্য মহোদয়কে হলের বিভিন্ন সমস্যার কথা অবহিত করা হয়েছে। হলগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় সমস্যাগুলো সমাধান করবো। শিক্ষার্থীদের যাতে এরকম সমস্যায় ভুগতে না হয়, সে চেষ্টা করবো। 

হলগুলোর সমস্যা নিয়ে বর্তমান প্রশাসন কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. অহিদুল আলম। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা হলে যে সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে, আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পারছি।

প্রক্টর অহিদুল আলম বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা শনাক্ত করেছি। বিভিন্ন কাজের মধ্যে হলগুলোর সমস্যা সমাধানের কাজও হাতে নিয়েছি। তবে হলের সমস্যাগুলো আসলে প্রভোস্টদের দেখে কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা। এখন নতুন করে প্রভোস্ট নিয়োগ হচ্ছে। আমরা তাদের সাথে বসে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী দ্যা ডেইল ক্যাম্পাসকে বলেন, এ সপ্তাহে আমরা ডিন ও প্রভোস্টদের সমন্বয়ে একটি মিটিংয়ের পরিকল্পনা করেছি। আশা করছি তাদের সাথে বসে হলগুলোর সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো।


সর্বশেষ সংবাদ