শেষ কর্মদিবসে ৩৭ নিয়োগ, নতুন বিতর্ক নিয়ে বিদায় চবি ভিসি শিরীণের

অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার
অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার  © টিডিসি ফটো

অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৫ বছরেরও বেশি সময়। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নেতিবাচক ইস্যুতে সামনে আসে এই অধ্যাপকের নাম। দায়িত্বের শেষ দিনে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। বরাবরের মতো এ নিয়োগেও ধার ধারেননি নিয়মনীতির।

ফলে নতুন বিতর্ক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন বাংলা বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক। আর নিয়োগপ্রাপ্ত বেশির ভাগ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরা সবাই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। অস্থায়ী ভিত্তিতে এদের নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এদিকে, চবির ১৯তম ভিসি হিসেবে বুধবার (২০ মার্চ) যোগদান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ড. মো. আবু তাহের। সেই হিসেবে অধ্যাপক শিরীণ শাসনের অবসান হয়েছে। 

শেষ দিনে এসে যে নিয়োগগুলো এগুলোকে অবৈধ বলছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য। তারা বলছেন, নিয়ম–নীতি না মেনেই এইসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, অধ্যাপক শিরীণ আখতারের দীর্ঘ ৫ বছরে বেশিরভাগ সময়ই ছিলেন বিতর্কে। নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ প্রতিনিয়তই লেগেছিল শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে। আর এসব অনিয়ম-অভিযোগ থেকে বের হতে পারেননি ভিসি হিসেবে নিজের শেষ কর্মদিবসেও।

২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ভিসির দায়িত্ব নেওয়ার শুরুর পর থেকে সিন্ডিকেটের অনুমোদনে ১৩০ জন শিক্ষক এবং ২৩৮ জন কর্মচারী নিয়োগে পেয়েছেন। অপরদিকে কোনোপ্রকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ১১৫ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ৫৭ জন। সর্বমোট ৫৪০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে গেছেন নিজের শাসনামলে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, শেষ দিনে ৩৭ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে। এভাবে নিয়োগ দিতে আলাদা কোনো নিয়োগ বোর্ড বসানোর প্রয়োজন পড়ে না। রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার পর ভিসি তা অনুমোদন দেন। এরপর অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এসব পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে নিয়োগপ্রাপ্তরা এর বিপরীতে আবেদন করে নিয়োগ স্থায়ী করার সুযোগ পান। এরই সুযোগ নিয়েই সদ্য বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিকভাবে লোকবল নিয়োগ করে আসছিলেন বলে অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে সদ্য বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে কোনো অনিয়ম নেই। এসব বিষয়ে রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। তবে চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নূর আহমদকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সেলের প্রধান সৈয়দ মনোয়ার আলী বলেন, নিয়োগের বিষয়ে আমি জেনেছি। সোমবার এবং মঙ্গলবার দুইদিনে মোট প্রায় ৩০ জনকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের অর্ডার হয়েছে। তবে আমরা এখনো কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পাইনি। লেটার পেলে সেল থেকে সেটা অনুমোদন দেব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন বলেন, আমরা সিন্ডিকেট থেকে একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম যাতে করে কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তকে না মেনে তিনি নিজের মনগড়া নিয়োগ দিয়েই গেছেন। সিন্ডিকেটে কমিটি গঠনের ওই তারিখের পর থেকে যতগুলা এরকম নিয়োগ হয়েছে প্রত্যেকটাই অবৈধ।

এদিকে নতুন ভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় দিনে চবি সাংবাদিক সমিতির সাথে মতবিনিময়কালে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এসময় নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ হবে। এখন থেকে যারা যোগ্য এবং মেধাবী তারাই নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাবে।

ভিসি হিসেবে শেষ দিনে শুধু অধ্যাপক শিরীণ আখতারই নয় সাবেক আরেক ভিসি অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীও শেষ সময়ে এসে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁরা এখনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত।


সর্বশেষ সংবাদ