রাবি ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ২ মাসেও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন

ফুয়াদ আল খতিব
ফুয়াদ আল খতিব  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ১৮৪ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী ফুয়াদ আল খতিবের রহস্যজনক মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল হল প্রশাসন। এতে বলা হয়েছিল, দশ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে। তবে কমিটি গঠনের ২ মাস ১০ দিন অতিবাহিত হলেও তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ এখনো শেষ হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই হলের আবাসিক শিক্ষক ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. হুমায়ুন কবির।

এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবিরকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের এ কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আবাসিক শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম, ড. মো. ইসমাইল হোসেন ও কে. এম. মনিরুল ইসলাম।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বিভিন্ন কারণে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বিলম্ব হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে হল প্রভোস্টের কাছে জমা দিয়েছে, যেটি এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে ছুটি থাকায় এবং হল প্রভোস্ট বিভাগের ট্যুরে বাহিরে থাকায় তদন্ত প্রতিবেদন কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে তদন্ত প্রতিবেদন কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে হল প্রভোস্ট ট্যুর থেকে চলে আসলে দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। 

এ বিষয়ে শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. একরামুল ইসলাম বলেন, হলের তদন্ত প্রতিবেদন এতটা গুরুত্বপূর্ণ না, পুলিশের রিপোর্টটা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাদের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু তারা সেইভাবে রেসপন্স করছে না। হল প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনের কাজও প্রায় শেষের দিকে। ফুয়াদের বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য আমি হাতে পেয়েছি এবং তদন্ত কমিটি বরাবর হস্তান্তরও করেছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই আমরা তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর জমা দিতে পারব।

তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে মৃত ফুয়াদের পরিবার। এ বিষয়ে ফুয়াদের ভাই মো. আব্দুল ফাত্তাহ্রা ফি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেউ তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না। আজ দিবে, কাল দিবে বলে আমার ভাইয়ের মৃত্যুর দু’মাস পরেও তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি। এটা আমাদের জন্য হতাশাজনক। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ফুয়াদ তাদের সন্তানের মতো। তারা তাদের একটি মেধাবী সন্তানকে হারিয়েছে, কিন্তু তাদের সন্তানের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে তাদের কোনোরকম উদ্যোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আর বিলম্ব না করে, দ্রুত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, আমরা এখনো হল থেকে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন পায়নি, তবে হল প্রশাসন জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। আর পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের জন্য ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তর নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো হাতে পায়নি বলে পুলিশের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নিয়ে কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলের ১৮৪ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী ফুয়াদ আল খতিবকে জ্ঞানহীন অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ নিয়ে যান তার সহপাঠীরা। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ময়নাতদন্ত শেষে গত ১১ ডিসেম্বর তার মরদেহ গাইবান্ধায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানাজার নামাজ শেষে জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নিজ গ্রামে তার মরদেহ দাফন করা হয়। হল থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের সময় তার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল এবং তার বুকসহ বিভিন্ন স্থানে কালশিটে দাগ ছিল। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এটি কি কোনো সাধারণ মৃত্যু না কি অস্বাভাবিক মৃত্যু?


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence