পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে রাবির আট ‘ডিসকলেজিয়েট’ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:১১ PM , আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:১১ PM
মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের আটজন শিক্ষার্থী। বিভাগের শিক্ষক কর্তৃক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাদের ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের সামনে অনশনে বসেন তারা। এর আগে, বিভাগের সামনে থেকে এক পদযাত্রা বের করেন। পরে প্রশাসন ভবনের সামনে মিলিত হয়ে অনশনে বসেন তারা।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর থিসিস ও নন-থিসিস পর্যায়ের আট শিক্ষার্থী। তারা হলেন- মেহেদী হাসান, ফয়সাল আহমেদ,তানভির, জয়শ্রী, রিতু পর্না, ফারজানা ইয়াসমিন, ফাতিমা আফরিন মিম ও অনামিকা। একই ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেলের বিরুদ্ধে তারা এ অভিযোগ তুলেছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আটজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম অ্যাটেন্ডেন্স দেখিয়ে ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে, যেটা তাদের জানানো হয়নি। নিয়মিত ক্লাস করার পরও এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। শ্রেণিশিক্ষক প্রতিদিন ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ডিপার্টমেন্টে আসেন, যেখানে তিনি তাদের সাড়ে ৯টা থেকে ক্লাসে থাকতে বলতেন। কর্মচারী ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকে শুনে তার ভিত্তিতে অ্যাটেন্ডেন্স দিতেন। এ নিয়মের ফলে শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্লাসে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অনুপস্থিত হিসেবে চিহ্নিত হন।
তাদের ভাষ্য, গোপনে মাত্র দু’দিন সময় দিয়ে চারজন শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষার ফরম পূরণের করানো হয়েছে। বাকি আট শিক্ষার্থীকে এ প্রক্রিয়া থেকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে, যা তারা ফরম পূরণের একদম শেষের দিন নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করেছেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি (রোববার) তাদের পরীক্ষার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনশনে বসা মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রতি মাসের শেষে আমাদের কাছ থেকে অ্যাটেন্ডেন্স খাতায় স্বাক্ষর নেওয়া হতো। শিক্ষকের ওপর আস্থা রেখে আমরা স্বাক্ষর করে দিতাম। পরবর্তীকালে এ স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ইচ্ছাকৃতভাবে কম অ্যাটেন্ডেন্স দেখিয়ে আমাদের ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে। শুরু থেকেই আমাদের ডিসকলেজিয়েট করার এবং পরীক্ষা না দিতে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। শ্রেণিশিক্ষক বারবার বলতেন, তোমরা কীভাবে পরীক্ষা দাও আমি দেখে নিব।’
ফাতিমা আফরিন মিম বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ডিসকলেজিয়েট করে আমাদের জীবনকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে উঠব না। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ক্লাস নিতে ১২টার পরে শিক্ষক আসেন। আমাদের কোর্স অসম্পূর্ণ রেখে ক্লাস শেষ করা হয়েছে। চারুকলায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের উপর অন্যায় করা হয়। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও সমাধান চাই।’
এ বিষয়ে শিক্ষক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। ক্লাস তো আরো কয়েকজন শিক্ষক নিয়েছে, আমি তো একা নিউনি। আপনারা অফিসে এসে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কাগজপত্র সব রেডি আছে। তারা ক্লাস করার পরে মাস শেষে অ্যাটেন্ডেন্স শিটে স্বাক্ষরও করেছে। সব প্রমাণ আছে। এখন তারা যদি ক্লাস না করে, তাহলে আমি কীভাবে কী করব? ‘দয়া করে’ উপস্থিতি দেখানোর ক্ষমতা আমার নেই। তাদের সঙ্গে তো আমার ব্যক্তিগত খারাপ সম্পর্কও নাই।’
আরো পড়ুন: ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: ঢাকার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আগ্রহ বেশি
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘একজন শিক্ষক কি এভাবে কাউকে ডিসকলেজিয়েট করতে পারে? তারা ক্লাসে অনিয়মিত ছিল। নিয়ম অনুযায়ী তারা ডিসকলেজিয়েট হয়েছে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক বলেন, ‘আমরা তাদের আশ্বস্ত করার পরও তারা মানতে নারাজ। আমরা তাদের অনুষদের ডিনের সঙ্গে কথা বলেছি এবং দ্রুত প্রশাসন ভবনে আসার নির্দেশনা দিয়েছি।’
এর আগে, ঘটনার সমাধানে হস্তক্ষেপ কামনা করে গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো সমাধান না পাওয়ায় আজ তারা আমরণ অনশনে বসেন।