ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ শতাংশই নারী শিক্ষার্থী: উপাচার্য
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩০ AM , আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৭ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় নারীরাই এগিয়ে আছে। গত তিন বছরের সমীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী ৫২ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৪৮ শতাংশ। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে আয়োজিত ‘স্বর্ণপদক ও বৃত্তি প্রদান- ২০২২’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠান শুরু হয় সম্মিলিত জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী নৃত্য পরিবেশন করে ঢাবির নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে স্বাগত বক্তৃতার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বেগম রোকেয়া শুধু নারী জাগরণের পথিকৃৎ নয় আমি বলবো তিনি পুরুষ জাগরণেরও পথিকৃৎ। কারণ তিনি যে স্কুলটি করেছেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল যেটি তার স্বামীর নামে করেছেন।
আরও পড়ুন: ঢাবির ৫ ছাত্রী হলে পুরুষ নিরাপত্তা প্রহরীদের ‘হয়রানি’ যেন নিত্যসঙ্গী
তিনি বলেন, নারী জাগরণের জন্য যোগ্য নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন এবং নারী নেতৃত্বের তো আরও বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশে সেদিকটা উন্মোচন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিসিশন মেকিং এ যদি নারী নেতৃত্ব না আসে তাহলে যতই নারী নেতৃত্বের কথা আমরা বলি সেটি কিন্তু কার্যকর হবে না। নারী জাগরণ যতদিন অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত না হবে, যতদিন পর্যন্ত নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি শানিত না হবে ততদিন পর্যন্ত নারী জাগরণ কার্যকর হবে না। কারণ অর্থনীতি ও মুক্তি দুটি সমার্থক শব্দের ন্যায়। সেজন্য অর্থনৈতিক মুক্তি ব্যতীত নারী মুক্তির কথা ভাবতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পুরুষদের তুলনায় আমাদের দেশে নারীরা অনেক এগিয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে গত তিন বছরের সমীক্ষায় নারী শিক্ষার্থী ৫২ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৪৮ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন পুরস্কার, শিক্ষক নিয়োগসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতায় নারীরা এখন এগিয়ে। শুধু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই নয় আমার উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) থাকাকালীন সময়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও ৫৬ শতাংশ নারী দেখেছি। সুতরাং নারীরা এখন সব দিক থেকেই এগিয়ে রয়েছে।
এসময় তিনি বেগম রোকেয়াকে একজন বড় গবেষক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বেগম রোকেয়া তার সুলতানা’স ড্রিম রচনায় স্বপ্নের মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি তুলে ধরেছেন সূর্যের রশ্মি ব্যবহার করে কিভাবে সোলার এনার্জি তৈরি করা যায়। এবং সেই শক্তি কিভাবে কৃষি খাতে ব্যবহার করা যায় সেই কথাও তিনি বলে দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে তিনি এই রচনায় ধারণা দিয়েছেন।
স্মারক বক্তার বক্তব্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রুবানা হক বলেন, নারীর প্রধান পরিচয় -একটি যৌনবস্তু এবং সন্তান উৎপাদনের মাধ্যম। সুতরাং তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের দরকার নেই। নিজস্ব বক্তব্য বলে কিছু নেই। তার কথা বলারও দরকার নেই। সে কথা বললেই। সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন: ঢাবির ছাত্রী হলে নেই মিল সিস্টেম, ভোগান্তির সঙ্গী বাড়তি খরচও
“আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গী নারী বিপজ্জনক। সে বাকস্বাধীনতা পেলে সমাজকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারবে। সুতরাং তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চুপ করিয়ে রাখতে হবে। অনেকে ভাবেন নারী নির্ভরযোগ্য নয়। আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তার নেই। বাস্তব বুদ্ধি-বিবেচনা তার কম। সাহস কম। সুতরাং তার স্বাধীন মত প্রকাশ, বিকাশ নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে।পুরুষেরা একবার যা করে দেখিয়েছে তা করে দেখানোই সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। নতুন কিছু করা হলে তাকে স্বীকার করতে চায় না সমাজ-পরিবার-স্বজন। অনেক ক্ষেত্রে শিষ্টাচারের জাল বিছিয়ে নারীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা। বিনয় আর শ্রদ্ধার কারাগারে আটকে রেখে নারীর কণ্ঠরোধ করা হয়।”
তিনি বলেন, নারীর জন্য এ রকম ভয়াবহ অপমানজনক ধারণা, কথা আর মতাদর্শ ধর্ম আর সংস্কৃতির নামে চারদিকে ছড়ানো। নারীর অস্তিত্বই যেন প্রধান সমস্যা। সে কারণে অনেক ধর্মীয় ওয়াজ বা বক্তৃতায় সবসময় নারীর চলাফেরাই মূখ্য আলোচনার বিষয় হিসেবে থাকে। অন্য কোনো সমস্যাই এসব বিষয়ে বিষোদ্গার থেকে বাণিজ্যিক ধর্মীয় বক্তাদের বিরত রাখতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যে নারী এত 'নিকৃষ্ট প্রাণী' সে এসব 'উদ্যোগী পুরুষের'ও মা। ছোটবেলা থেকে শুনতে শুনতে নারীর ভেতরেও এগুলো অবধারিতভাবে গেঁথে থাকে। এর পর তার নিজের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে দাঁড়ানো খুবই কঠিন হয়ে যায়। আত্মসম্মানবোধ বা আত্মোপলব্ধি উপরিউক্ত চিন্তার কাঠামোতে একটা পাপের কাজ। নীরব থাকা না থাকায় নয়, নারীর সে লড়াই আরও অনেক ভেতরের। মূলত তিনটি প্রক্রিয়ায় চলে নারীকে চুপ করিয়ে রাখার এ রাজনীতি।
তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নেতৃত্ব এবং রাজনীতিতে মহিলাদের অনুপস্থিতি এমনভাবে নিশ্চিত করা হয় কোথাও যেন তার প্রতিনিধিত্ব না থাকে তেমন ব্যবস্থা গড়ে রাখা হয় সর্বত্র। পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিশ্বব্যাপী নারীদের প্রতিনিধিত্ব খুব কম। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়টি পুরুষদের হাতেই পড়ে। ফলে বিশ্বজুড়ে নারীরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে, কিন্তু তাদের সুরক্ষার নীতিগুলি পুরুষের তৈরি। পদ্ধতিগত লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে পুরুষরাই মহিলাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়।
অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আরজু আফরিন ক্যাথি। উপাচার্য তার হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন। এছাড়া সাতজন মেধাবৃত্তি এবং একজন কল্যাণ বৃত্তি পেয়েছেন।
রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ড. নিলুফার পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও শিক্ষকবৃন্দ।