‘সাময়িকভাবে’ নিয়োগ পেয়েছিলেন ঢাবির আগের দুই ভিসিও

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল
অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য পদে ‘সাময়িকভাবে’ নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে এ নিয়োগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আজ রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এ ধরনের ‘সাময়িক’ কিংবা ‘ভারপ্রাপ্ত’ নিয়োগের সমালোচনা করেছেন শিক্ষাবিদরা।

জানা যায়, অধ্যাপক মাকসুদ কামালের মতো শুরুতে ‘সাময়িকভাবে’ দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট কর্তৃক তিন জনের একটি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচিত হয় এবং সেখান থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেন চ্যান্সেলর, অর্থাৎ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এ ধরনের নিয়োগে স্বাধানীভাবে প্রতিষ্ঠান চালাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। সরকারও হয়তো সেটাই চান। এ জন্যই সম্ভবত সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ধরনের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। পরে তাদের একটা সিস্টেমের মধ্যে নেওয়া হয়।

তবে এর ব্যতিক্রমও আছে এবং তা হলো, অনেক সময় সরকার তার পছন্দনীয় ব্যক্তিকে সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই দশক সময় ধরে কোন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয়নি। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝেমধ্যেই সরকার মনোনীত ব্যক্তিকে সরাসরি ভিসি পদে নিয়োগ দিয়েছেন চ্যান্সেলর। ফলে গত প্রায় তিন দশক ধরে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়, এতে তৈরি হচ্ছে নানা বিতর্ক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, সারাদেশের অসংখ্য কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে। সরকার নিশ্চিয়ই যেকোনোভাবে এ ধরনের নিয়োগে লাভবান হচ্ছেন। আমি বলবো, সবকিছুর একটা মেয়াদকাল থাকে। নির্দিষ্ট মেয়াদ এবং সুষ্ঠু পদ্ধতির নিয়োগে এক ধরনের শক্তি থাকে। যেটা এ ধরনের নিয়োগে থাকে না; যেটা থাকে সেটা হলো ‘আজ্ঞাবহ’।

তিনি বলেন, এ ধরনের নিয়োগে স্বাধানীভাবে প্রতিষ্ঠান চালাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। সরকারও হয়তো সেটাই চান। এ জন্যই সম্ভবত সরকার একটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ধরনের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। পরে তাদের একটা সিস্টেমের মধ্যে নেওয়া হয়। তবে ঢাবির উপাচার্য হিসেবে বর্তমানে যাদের নাম শুনেছিলাম, তাদের মধ্যে তিনি নিঃসন্দেহে যোগ‍্যতম। তবুও ৭৩-এর অধ‍্যাদেশ মেনে নিয়োগ পেলে উনার জন্য এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক মঙ্গলজনক হতো। আশা করি তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন উচ্চতায় উঠবে এবং তাতে দেশ উপকৃত হবে।

আরও পড়ুন: ঢাবির ২৯তম উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, প্রজ্ঞাপন জারি

শিক্ষকরা মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনভাগের এক ভাগেরও কম শিক্ষক সরাসরি রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের পক্ষে সক্রিয়। অন্যদিকে, উপাচার্য হওয়ার পরে অনেকেই রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট থেকেছেন।

উপাচার্য নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয়ের ঢামাঢোল এড়াতে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগের একটি উদ্যোগ নিয়েছিলো। তবে বলা হয়েছিল, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই প্রক্রিয়ার বাইরে থাকবে। পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই কমিটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথমবার ‘সাময়িকভাবে’ ঢাবির উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। আর অধ্যাপক আখতারুজ্জামান প্রথমবার ‘সাময়িকভাবে’ নিয়োগ পান ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। এরপর ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ পদে দায়িত্বপালন করেন।

উপাচার্য একটা নির্বাচনের ব্যাপার। তিনি সিনেটে যখন অধিকাংশ শিক্ষকের ভোটে নির্বাচিত হবেন, তখন তার একটা আত্মবিশ্বাস থাকবে। নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগ হলে উপাচার্যকে আজ্ঞাবহ হতে হয় না।

এ দুই উপাচার্যের ‘সাময়িক’ নিয়োগে অধ্যাপক আরেফিন ছিলেন সাড়ে ৪ বছরের বেশি। আর অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ছিলেন দুবছর। এরপর দুজনেই চার বছরের জন্য পূর্ণ নিয়োগ পেয়েছিলেন। চার বছরের নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মনোনীত তিন ব্যক্তির প্যানেল থেকে তারা দুজনেই নিয়োগ পেয়েছিলেন।

আগামী ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরপর আগামী ৪ নভেম্বর থেকে উপাচার্য পদের ‘সাময়িক’ নিয়োগে দায়িত্ব নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, উপাচার্য একটা নির্বাচনের ব্যাপার। তিনি সিনেটে যখন অধিকাংশ শিক্ষকের ভোটে নির্বাচিত হবেন, তখন তার একটা আত্মবিশ্বাস থাকবে। নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগ হলে উপাচার্যকে আজ্ঞাবহ হতে হয় না। তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, মত প্রকাশ করতে পারেন। নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগে তিনি যেভাবে কাজ করতে পারতেন, প্রজ্ঞাপনের নিয়োগে তিনি সেটা পারবেন না।


সর্বশেষ সংবাদ