এখনো পানিবন্দি ঢাবির বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:১৪ PM , আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:২১ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ (একাংশ) কয়েকটি হলের শিক্ষার্থীরা পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টিতে জমা পানিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি জমে থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টিপাত এবং রাতে ভারী বর্ষণের ফলে ঢাবির বেশ কয়েকটি হল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়। এতে স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সাথে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। দেখা দিয়েছে পানির সংকটও।
সরেজমিনে বিভিন্ন হলে গিয়ে দেখা যায়, এখনো কয়েকটি হলের শিক্ষার্থীরা পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। গতকাল রাত থেকে পানি জমলেও এখনো পানি নামেনি। এজন্য পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে দায়ী করছে শিক্ষার্থীরা।
কুয়েত মৈত্রী হলের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বৃষ্টির পানি শিকদার মনোয়ারা ভবনের সামনে পর্যন্ত চলে এসেছে। পানি মাড়িয়ে কোথাও বের হওয়া যাচ্ছে না। হলে খাবার পানি নেই। গোসল করার পানিও শেষ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর ফোন বন্ধ হয়ে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। হল প্রশাসনের এসব বিষয়ে কোন তৎপরতা দেখছি না।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলই ক্যাম্পাসকে জানান, বৃষ্টির কারণে আমাদের মেয়েদের দুটি হল এবং সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট সব অকেজো হয়ে পড়েছে। ফোনে চার্জ নেই। আমি খুব প্রয়োজনীয় একটা কাজেও বাইরে যেতে পারিনি। পানি না থাকায় গোসলও করতে পারছি না।
জহুরুল হলের এক শিক্ষার্থী জানান, গতকাল ভারী বর্ষণের পর থেকে হলের মাঠ, মাঠের আশেপাশের অংশ এবং হল থেকে পলাশি যাওয়ার রাস্তা সব পানিতে ঢুবে যায়। হাঁটু সমান পানি হওয়ার কারণে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের চলাচলের জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি হলের টিনশেড অংশের টয়লেট গুলোতে পানিত উঠে যায়, যার ফলে এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ মো: আবদূর রহিম জানান, আমি হল পরিদর্শন করেছি। শুধু হলে না রাতে আমার বাংলোতেও পানি উঠে গিয়েছিলো। এটা একটা দুর্যোগ তারপরও কী করা যায় এ বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি। বিদ্যুতের ব্যাপারে আমি সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। যেখানে পানি জমেছে ঐসব স্থানে আমাদের কোনো ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন নেই। তবুও আমি কর্মচারীদের সতর্ক করে দিয়েছি। এখন আবার কথা বলবো। আশা করি আর বৃষ্টিপাত না হলে পানি নেমে যাবে।
সলিমুল্লাহ মুসলিল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইকবাল মামুন জানান, পানি জমেছে সে বিষয়ে আমি অবগত আছি। এটা শুধু আমাদের হলের সমস্যা নয় সারা বাংলাদেশের একই অবস্থা। এখন দুর্যোগের সময় একটু সমস্যা তো হবেই। রাস্তার পানি নেমে গেলে হলের সামনের পানিও নেমে যাবে। হলের বিদ্যুৎ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।
মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুন নাহার জানান, আমাদের হলের অবস্থা আসলে খুবই খারাপ। রাতে তো মেয়েদের হলে পানি উঠে গিয়েছিল। পানি নামছে তবে আমাদের দুই হল এবং সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সব পানি একটি মাত্র চ্যানেল দিয়ে বিজিবি কেয়ার্টায় হয়ে ঝিগাতলা দিয়ে বুড়িগঙ্গায় যাচ্ছে। ফলে, যে গতিতে পানি নামছে বিকেল নাগাদও পানি সরবে না। ইলেক্ট্রিক মেশিনে পানি উঠে গতকাল রাতে আর্থিং হয়ে ব্লাস্ট হয়ে গেছে। এজন্য ওনারা লাইন বন্ধ করে রেখেছেন। পানি না কমলে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, খাবার পানি নতুন করে তুলতে না পারায় খাবার পানিও শেষ পর্যায়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকল্প পানি পানি আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ থেকে বিকল্প বিদ্যুতের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ভয়ের ব্যপার হলো, আজকেও যদি বৃষ্টি হয় তাহলে আবারও একই অবস্থ হবে।
আমাদের অফিসিয়াল বেশ কিছু নথিপত্রও ভিজে গেছে। কিন্তু সেগুলোও রোদে দেওয়ার সুযোগ নেই। হাউজ টিউটর বিল্ডিং এর নিচতলায় পাননি উঠে গেছে। আমরা আসলে খুব মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি মুদি দোকানের চাল-ডালসহ অনেককিছু ভিজে গেছে। মেয়েদের সাংস্কৃতিক কক্ষের হারমোনিয়ামসহ অনেককিছু পানিতে ভিজে গেছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা না। এটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মেয়েদের মৈত্রী হল এবং বঙ্গমাতা হল আমাদের সবচেয়ে বড় কনসার্নের বিষয়। আমরা সেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়েছি। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা অস্থায়ী বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এসময় তিনি এ দুরবস্থার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করেছেন।