স্মারকলিপি দেয়ার পর শিক্ষার্থীদের জানালেন প্রক্টর

ড. ওয়াহিদুজ্জামানের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস

অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন
অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্রীদের নেকাব খুলে ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) নিতে বাধ্য করা, এক শিক্ষার্থীর ভাইভা না নেওয়া এবং ওই শিক্ষার্থীকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকা নিয়ে দোষারোপ করার ঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান চাঁনের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৩০ আগস্ট) উপাচার্যের কার্যালয়ে এ স্মারকলিপি দেয় তারা। এরপর এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান।

অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান জানান, যারা স্মারকলিপি দিতে গিয়েছে তাদের কথা ভিসি স্যার শুনেছেন এবং তিনি এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁনের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এখানে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে আসছে যে, ধর্ম পালনের অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।

স্মারকলিপি প্রদানের পর শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. এম মাকসুদুর রহমান বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে বা যে মন্তব্য করা হয়েছে এ টি তার একান্ত নিজস্ব বক্তব্য। এটি কোনো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য না। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বৈষম্য সৃষ্টির জায়গা নয়। এখানে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। এছাড়া যে শিক্ষার্থীর ভাইভা নেয়া হয়নি; তা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এক বিক্ষোভ শেষে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এসময় ঘটনার পূর্ণ তদন্ত শেষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে পুনরায় ভাইভা দেওয়ার ব্যবস্থা করাসহ অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাকে সেই শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি জানানো হয়েছে।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস, প্রেজেন্টেশন এ পরীক্ষার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র নির্বিঘ্নে হিজাব-নিকাব পরিধান করার পরিবেশ নিশ্চিত করা, সম্প্রতি শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ৩য় বর্ষের ভাইভা বোর্ডে নিকাব বা হিজাব পরিহিতাদের হেনস্থার সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ, হেনস্থার শিকার শিক্ষার্থীকে উগ্রবাদী আখ্যা দিয়ে তাকে বাসায় লেখাপড়া করতে বলা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামানের ভিক্টিম ব্লেমিং ও রেসিস্ট মন্তব্যের কারণে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে।

স্মারকলিপিতে জানানো হয়েছে, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৩য় বর্ষের ভাইভা বোর্ডে নিকাব ও হিজাব পরিহিতাদের হেনস্থার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন ভুক্তভোগীকে উগ্রবাদী দলের সদস্য হিসেবে অপবাদ দিয়ে ভিক্টিম ব্লেমিং করেছেন এবং পর্দানশিন মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না এসে বাসার পড়াশোনা করবে বলে রেসিস্ট মন্তব্য করেছেন। যার ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং নিকাব ও হিজাব পরিহিতাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।

এতে বলা হয়, কিছুদিন পূর্বে বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে দেয়া একটি নোটিশ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উক্ত নোটিশে পরিচয় শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার অজুহাতে সব ধরনের পরীক্ষা ও ক্লাসে, বিভাগের সকল শিক্ষার্থীকে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

এই নোটিশের ফলে বিভাগের প্র্যাক্টিসিং মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়েছে। নোটিশের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। মুসলিম হিসেবে আমরা এই ঘটনায় মারাত্মকভাবে ব্যথিত হয়েছি এবং এটিকে ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের দানা বেঁধেছে।

বিষয়টির সমাধান চেয়ে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান এবং আমাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদে আমরা আপনার নিকট ৭ দফা দাবি তুলে ধরছি।

আমরা প্রত্যাশা করছি অভিভাবকত্বের দাবি থেকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের সংকটাপন্ন ক্যারিয়ার বাঁচাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কোন ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করবেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে ৭দফা দাবি পেশ করে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষকদের সামনে নেকাব না খোলায় ভাইভা দিতে পারেননি এক শিক্ষার্থী এবং অন্য আরেক শিক্ষার্থীকে জোর করে নেকাব খুলে ভাইভা নেওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রকাশ করে।

এরপর ভাইভা বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন সেই দুই নারী শিক্ষার্থীকে উগ্রবাদী দলের সদস্য হিসেবে মন্তব্য করে এবং যারা পর্দা করে তাদের তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে বাসায় থেকে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন তিনি।

গত মাসের শেষে দিকে ২০১৯-২০ সেশনের তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা পরবর্তী ভাইভার সময় এ ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এ নিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলোচনায় আসে বিষয়টি।


সর্বশেষ সংবাদ