জাবিতে ঘুরতে এসে ছাত্রলীগের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার নোবিপ্রবির শিক্ষিকা

জয়পাল ও মারুফুল হাসান মারুফ
জয়পাল ও মারুফুল হাসান মারুফ  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ঘুরতে এসে নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী সহযোগী অধ্যাপক ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম এলাকায় এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ৪৭তম ব্যাচের মার্স্টাসের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী মারুফুল হাসান (মারুফ) ও লোক প্রশাসন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক জয়পাল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা জানিয়েছেন, তিনি তার এক ছেলে বন্ধুকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম এলাকায় ঘুরতে যান। এসময় বাইকযোগে মারুফ ও জয়পাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঐ শিক্ষিকাকে বহিরাগত কিনা জানতে চায়। ঐ শিক্ষিকা বহিরাগত জানতে পেরে তাদের কাছে থাকা টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় ওই শিক্ষিকা ছিনতাইকারীদের ছবি ও  বাইকের ছবি তুলে রাখেন।

পরবর্তীতে ওই শিক্ষিকা তার পরিচিত সহকর্মীদের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমতাহানা মৌ এর সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর সহকারী অধ্যাপক মুমতাহানা মৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাসেল মিয়া স্বাধীনের সহায়তায় অভিযুক্তদের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এসময় অভিযুক্ত জয়পাল ও মারুফ বাংলা বিভাগে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বিকাশের মাধ্যমে ছিনতাইকৃত টাকা পাঠায়।

বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমতাহানা মৌ বলেন, ওই শিক্ষিকা আমার পূর্ব পরিচিত নয়। নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত একজন শিক্ষকের মাধ্যমে আমি ঘটনাটি জানতে পারি। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের দুইজন শিক্ষার্থী এই ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। তারা বাইকযোগে এসে এই ছিনতাই কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ঘটনাটি জানালে তারা অভিযুক্তদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারে। পরে রাতে ওই শিক্ষিকাকে অভিযুক্তরা ছিনতাইকৃত টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। ওই শিক্ষিকা ও আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রক্টরকে বিষয়টি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে।

বাংলা বিভাগের সভাপতি শামিমা সুলতানা বলেন, ঘটনার সাথে বিভাগের এক শিক্ষার্থী জড়িত ছিল। ঐ শিক্ষার্থী আমার কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছে। আমার কাছে লিখিত বা মৌখিক কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বিষয়টি দেখছে।

নোবিপ্রবি’র ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষিকা বলেন, আমি প্রক্টরের কাছে মৌখিক অভিযোগ করে এসেছি। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত মারুফুল হাসান বলেন, এ ঘটনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। এই ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই।

আরেক অভিযুক্ত জয়পাল বলেন, তারা অপ্রীতিকর অবস্থায় ছিল এবং ধূমপান করছিল। আমরা তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করি। ওই মহিলার সাথে থাকা লোকটি নিজেকে ৪২ ব্যাচ ও মহসিন হলের ছাত্র দাবি করলে আমরা তাদের জেরা করতে থাকি ও তাদের নিরাপত্তা শাখার হাতে তুলে দিতে চাই।

এসময় তারা নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মিষ্টি খাওয়ার জন্য আমাদের কিছু টাকা দেয়। পরে ওই শিক্ষিকা বাংলা বিভাগে অভিযোগ জানালে আমরা ভুল স্বীকার করে মিষ্টি খাওয়ার জন্য দেওয়া টাকাটা বিকাশের মাধ্যমে ফেরত পাঠিয়েছি  বলেও জানান এই অভিযুক্ত।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ঘটনাটি জেনেছি। ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষিকার সাথে কথা বলেছি। তিনি অভিযোগ করতে চাননি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই ঘটনা ব্যবস্থা নিবে। অভিযুক্তদের আগামী দুই এক দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে।


সর্বশেষ সংবাদ