অধ্যাপক তাহের হত্যার আসামিকে বরখাস্ত করলো রাবি প্রশাসন
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৩, ০৩:৫৩ PM , আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩, ০৪:০৩ PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার আসামি একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দীনকে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রবিবার (৯ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল মামলা নং- ৩৮/০৭ এম. জি. আর. নং- ১০/০৬ মতিহার থানার ২/০৬ নং মামলায় মহামান্য বিজ্ঞ আদালত আপনাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট উক্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখায় সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৪২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদানের তারিখ অর্থাৎ ২২-০৫-২০০৮ তারিখ হতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক-এর পদ ও চাকরি থেকে আপনাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হলো।
যেকোনো দিন কার্যকর হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি।
রাষ্ট্রপতির কাছে করা প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি বুধবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাকর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে বলে শনিবার জানিয়েছেন জেলার নিজাম উদ্দিন। জেল কোড অনুযায়ী, চিঠি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি নিহত অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির শিক্ষকদের পশ্চিমপাড়া আবাসিক কোয়ার্টার থেকে নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের। ওই বাসায় তিনি একাই থাকতেন। কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম তার দেখাশোনা করতেন। পরদিন বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের গলিত মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
আরও পড়ুন: ছুটিতে বাকৃবির ১৮ শতাংশ শিক্ষক, ১৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
অধ্যাপক তাহেরের করা একটি জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন ও রাবির ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তারা বলেন, “অধ্যাপক ড. এস তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গবেষণা জালিয়াতির কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহিউদ্দিন হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। বালিশ চাপায় খুনের পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের লাশ বাসার পেছনে নেওয়া হয়। লাশ গুমের জন্য জাহাঙ্গীররের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় বাসার পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে অধ্যাপক তাহেরের লাশ ফেলে দেওয়া হয়।”
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসি ও দুজনকে খালাস দেয়।
দণ্ডিত অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল ও তার স্ত্রীর ভাই সালাম। তবে বিচারে খালাস পান ছাত্রশিবিরের নেতা সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সি।
পরবর্তীতে দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল ও সালামের রায় কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে তাদের দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাই কোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখে।