পরিবেশে রক্ষায় দুই চবি শিক্ষার্থী
প্লাস্টিকের বিনিময়ে বই, বইয়ের বিনিময়ে গাছ
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ১২:৫৮ AM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ১২:৫৮ AM
প্লাস্টিকের বিনিময়ে বই, বইয়ের বিনিময়ে গাছ উপহারের উদ্যোগ নিয়েছেন আসাদুজ্জামান বুলবুল ও মো. মাসুদ রানা নামের দুই শিক্ষার্থী। তারা দু’জনেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বুধবার (২১ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে ‘প্রজেক্ট গ্রন্থমঙ্গল’ শুরু করেন তারা। এতে প্লাস্টিক জমা দিয়ে পছন্দসই বই নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলে বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণু অনুপ্রবেশ করছে মানুষেরই অসচেতনতার কারণে। ফলে ক্যান্সার, স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা ও বিকলাঙ্গ’সহ নানান সমস্যার তৈরী হতে দেখা যাচ্ছে। এসব সমস্যার মূলে পরিবেশে প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি বহুলাংশে দায়ী বলে মনে করছেন আয়োজকরা।
আর প্লাস্টিকের বিনিময়ে বই উপহার দিয়ে সচেতনতামূলক এই কর্মসূচি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। মানুষকে প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করে পুনর্ব্যবহার করা এবং বই উপহার দেওয়ার ধারণাটিকে ব্যতিক্রমী চিন্তা বলছেন অনেকেই।
চবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীর ৫১ শতাংশ প্লাস্টিকের উৎপাদন হয় এই এশিয়াতেই। ক্ষতিকর এই প্লাস্টিকের শেষ গন্তব্য হচ্ছে সমুদ্র অথবা মাটি।
আসাদুজ্জামান বুলবুল ও মো. মাসুদ রানা
তিনি বলেন, প্লাস্টিক মাটিতে না পচেও মাটিতে ক্ষতিকর জীবাণু ছেড়ে দেয়। পরিবেশে অপচনশীল বিভিন্ন বর্জ্য অতিবেগুনি রশ্মি এবং পরিবেশে থাকা অন্যান্য উপাদানের মিথস্ক্রিয়ার ফলে অতিক্ষুদ্র কণা এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি করে। ‘বিসফেনল’ এমনই একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যা খালি চোখে দেখা যায় না। এগুলো খাদ্য শৃঙ্খলের সাহায্য আমাদের শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। মানুষ ও অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেম নষ্ট করছে। ফলে মানুষ ও অন্যান্য জীবের প্রজননক্ষমতা কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে দারিদ্র্যতার কথা বলেন বুলবুল। তিনি বলেন, ঘনবসতি বেশি হওয়ায় বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের মানুষ আর্থিকভাবে খানিকটা দুর্বল। ফলে সস্তায় যা পাওয়া যায় তাই ব্যবহার করে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ এই প্লাস্টিক সহজে বানানো, ব্যবহার এবং পরিবহন করা যায়। পাওয়া যায় হাতের নাগালে।
প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার রোধ করে আমাদের খাদ্য শৃঙ্খল রক্ষা করতে প্লাস্টিকের বিনিময়ে বই উপহারের এই কর্মসূচি জানিয়ে মো. মাসুদ রানা বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে আমরা এই প্লাস্টিক ব্যবহার করছি এবং পরিবেশে ছেড়ে দিচ্ছি। যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাহলে আমরা কিভাবে নিজেদের বুদ্ধিমান দাবি করি? বুদ্ধিমানরা এভাবে নিজেদের ক্ষতি করতে পারে না।
মাসুদ রানা জানান, আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরণের বই আছে৷ সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই। আমরা এটি শুরু করেছি তবে এটি চলমান থাকবে। আমাদের অনেক সহযোগিতা প্রয়োজন। এই কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে তাঁদের প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানাতে চাই।
প্লাস্টিকের বিনিময়ে কেন বই দেওয়ার বিষয়ে মাসুদ রানা বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশের মাটিতে চাল,ডাল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল খাদ্যশস্যই উৎপাদিত হয়। সে ভূমিকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক সমুদ্রের নিচে জমা হতে হতে মহা বিপর্যয় নিয়ে আসছে। একদিন এমন সময় আসবে যখন সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের সংখ্যা বেশি হবে। সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করে দিলে মাছ একটা সময় বিলীন হয়ে যাবে। তখন আমরা কি খাবো? মাছের অভাব আমরা বাঙালি হিসেবে কিভাবে পূরণ করবো?
প্লাস্টিকের পোড়ানোকেও বিপদজনক জানিয়ে তিনি বলছেন, এই প্লাস্টিক এতটাই ক্ষতিকারক যে এটি পোড়ালেও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার ৮-১০ শতাংশের জন্য এটি দায়ী। যা বায়ুমণ্ডল ও ওজোনস্তরের ক্ষতিও করছে। কারণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তনশীল এই আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেক প্রাণী বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।
এ নিয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ রফিকউজ্জামান বলেন, এই সচেতনতা ধীরে ধীরে আমাদের অভ্যাসে রূপ লাভ করবে বলে বিশ্বাস করি। প্লাস্টিকের বিনিময়ে বই উপহার শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বরং সারা দেশের শিক্ষার্থীদের প্লাস্টিকের ব্যবহারে এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সচেতন করবে।
এছাড়াও বইয়ের বিনিময়ে নেওয়া প্লাস্টিকগুলো কিভাবে পুনর্ব্যবহার করা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে এই দুই বন্ধু জানান, আমাদের এই কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্যে হলো সচেতনতা বৃদ্ধি। আমরা সংগৃহীত প্লাস্টিক দিয়ে ফুলের টপ, শোপিজ বা অন্য কিছু। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে ফুলের চারা লাগিয়ে আমরা এগুলো রিসাইকেল করবো। এছাড়াও আমরা বইয়ের বিনিময়ে গাছ উপাহার দিব শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও এতে সহযোগিতায় ‘পাশে আছি ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি এনজিও।