২৩ দিনের ছুটি শেষে খুলেছে রাবি, প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস
ছুটি শুরু হওয়া মাত্রই যেন স্পন্দনহীন হয়ে পড়ে সহস্র প্রাণের কলরবে মুখরিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। জনাকীর্ণ ক্যাম্পাসটিতে আচমকাই নেমে আসে জনমানবহীন কোনো এক গহীন অরণ্যের নীরবতা। তবে প্রতিবারই ছুটি শেষে শিক্ষার্থীদের পদচারণা পেলেই আবারও নতুন করে প্রাণ খুঁজে পায় চিরচেনা এই ক্যাম্পাস।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ২৩ দিনের ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৭ মে) থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই আবাসিক হলসহ বিভিন্ন মেসগুলোতে ফিরে এসেছেন।করছেন একাডেমিক ক্লাস।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় বন্ধু-বান্ধবদের ঈদের স্মৃতি রোমন্থন, জমানো গল্প, গান আর আড্ডায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরচেনা জায়গাগুলো। এ যেন চিরচারিত ব্যস্ততায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে চিরসবুজ মতিহার চত্বর।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড, আমতলা, টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মার্কেট, ইবলিশ চত্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বর, শহীদ মিনার চত্বর, স্টেশন বাজার, বধ্যভূমি, পুরনো ফোকলোর মাঠ, সাবাস বাংলাদেশ মাঠ, চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণসহ ক্যাম্পাসের সবখানেই যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণের ছোঁয়া। পূর্বের ন্যায় বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে গল্প, গান আর আড্ডায় মুখরিত হয়েছে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা চত্বর।
আরও পড়ুন: ২১ দিনের ছুটি শেষে খুলেছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়
ক্লাস-পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন সবকিছু মিলিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন জীবন। তবে এখানেও একঘেয়েমির মাঝে এসে যায় মানসিক ক্লান্তি। মনটা বারবার ছুটে যেতে চায় চেনা শেকড়ের কাছে। তাইতো সবাই ছুটির দিনগুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। বাবা-মা আর প্রিয় মুখগুলোর সাথে মধুর সময় কাটানোর জন্য উৎসুক হয়ে থাকেন সবাই। তাই ছুটির সময় হলেই সবার মধ্যে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়।
যাদের বাড়ি ক্যাম্পাস থেকে তুলনামূলক একটু দূরে তারা তো অনেক সময় ছুটি শুরুর দু-একদিন আগেই চলে যান। কিন্তু দেখতে দেখতে চোখের নিমিষেই যেন শেষ হয়ে যায় ছুটির দিনগুলো। ছুটির মধ্যে কাটানো স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো সঙ্গে নিয়ে আবারও ফিরতে হয় সেই চিরচেনা ক্যাম্পাসে।
এবারের ছুটি কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম। কেননা অন্যান্য ছোটখাটো ছুটির সময় অনেকেই টিউশনি, পার্ট টাইম জব, কোচিংসহ নানা কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে বাড়িতে যান না। কিন্তু এবারের লম্বা ছুটিতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও কাছের মানুষদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ছুটি কাটাতে বাড়িতে গেছেন।
তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের একটাই কথা প্রিয় ক্যাম্পাস ছাড়া ভালো লাগে না। বাড়ির প্রতি রয়েছে ভালোবাসা কিন্তু প্রিয় বিদ্যাপীঠের প্রতি অন্যরকম টান। ক্লাস, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরা, গান, আড্ডা সবকিছু তাদের যেন আচ্ছন্ন করে রাখে। ক্যাম্পাসে ফিরতে পারলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে তাদের।
আরও পড়ুন: ছুটি শেষে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণবন্ত তিতুমীর কলেজ
এবারের ছুটির সময় কেমন কেটেছে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াকুব আলী বলেন, ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়াটা অনেক আনন্দের। আবার ঈদ শেষে পরিবার ও বাল্যবন্ধুদের ছেড়ে আসাও অনেক কষ্টের। এখন দুই রকম অনুভুতি হচ্ছে। পরিবার ছেড়ে আসার কষ্ট ও প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আনন্দ।
আরেক শিক্ষার্থী নাদিম হোসেন বলেন, এবারের ঈদে বাসায় গিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি বাবাকে মাঠের কাজে সাহায্য করার। কারণ দূরে থাকি বলে হরহামেশাই বাবাকে সাহায্য করতে পারি না। সব সময় চেষ্টা করেছি বাবা মায়ের কাছাকাছি থাকতে। পাশাপাশি আমার স্কুল বন্ধু ও এলাকার ছোট-বড় সবার সাথে থেকে আনন্দ করেছি।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ বলেন, অনেকদিন পর একটা বড় ছুটি নিয়ে বাসায় ছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে থাকায় বাবা-মা ও অন্যান্য সকলের প্রতি চরম মায়া তৈরি হয়। ফলে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় কেমন জানি মন খারাপ হয়ে যায়। তবে ক্যাম্পাসে এসে বন্ধুদের সাথে দেখা হলে খারাপ মন আবার ভালো হয়ে যায়।