আমরা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে কাজ করতে পারি না: অধ্যাপক সামাদ

  © টিডিসি ফটো

উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ শুধুই একজন সমাজ সংস্কারক ছিলেন না, তিনি সমাজ পরিবর্তনও করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, শিক্ষক দোকানদার, শিক্ষার্থীরা হলো খরিদদার। এটা কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থা ও আমাদের কাজ দেখলেই সত্যতা প্রমাণ পাওয়া যায়। আমরা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে কাজ করতে পারি না। নিজেদের দূর্বলতা আমরা কোনভাবে ঢাকার চেষ্টা করি। 

আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র মিলনায়তনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষের দর্শন উল্লেখ করে বাংলার সকল কবিদের কবিতা ও লেখনি উল্লেখ করে বলেছিলেন, 'বাংলার ধর্ম দর্শন উন্মুক্ত চিন্তা প্রকাশ করে এটা ইউরোপের আবদ্ধ দর্শন নয়।' এজন্য তিনি শান্তিনিকেতন স্থাপন করেছিলেন বাঙালি দর্শন, শিক্ষাকে পাশ্চাত্যের কাছে তুলে ধরার জন্য। এখানে তিনি এত টাকা ডোনেশন করেছিলেন যে, তারা জমানো সকল অর্থ, একটা কেনা বাড়িও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এভাবেই তিনি বাংলার মানুষের সমাজ পরিবর্তন করতে, মানুষের সামাজিক ও অর্থিক উন্নয়ন ঘটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। 

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের লেখাগুলো এত উপমা বহন করে যে একজন নব্য লেখকের জন্য এসব পড়াটা খুব জরুরি। লেখার মান হিসেবে সেই উনিশ শতকে তিনি যা দেখিয়েছেন সেগুলো এই আধুনিক যুগে এসেও কেউ তার ধারেকাছেও যেতে পারছে না। রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকীতে আমাদের চাওয়া থাকবে সবাই যেনো উনার লেখা পড়ে নিজেদের ক্ষুরধার আমরা লেখনির মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য কাজ করি। সমাজের কল্যাণে, সুন্দর সমাজ বিনির্মানে কাজ করে যাই।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি সমাজে নারী জাগরণ, ব্রাহ্মণ-শুদ্রের বৈষম্য হ্রাস, কৃষি সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। তিনি বুঝতে শিখিয়েছেন প্রকৃতি ও প্রাণই (ব্রহ্ম) সকলের মূলে রয়েছে।  আমাদের কর্মপ্রবাহ কৃষি নির্ভর ছিলো বলে রবীন্দ্রনাথ কৃষক, শ্রমিক, মজুরদের কাছে টানার চেষ্টা করেছেন যদিও তার বাধা ছিলো অনেক বেশি। এমনকি তিনি তার সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন কৃষি বিষয়ে গবেষণা করতে। পরবর্তীতে তিনি তার সন্তানকে দেশে এনে কৃষির উন্নয়নে নিয়োজিত করেন। 

রবীন্দ্রনাথ সমবায় প্রথা ও কৃষি ব্যাংক চালু করেন৷ ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প প্রথম রবীন্দ্রনাথই চালু করেছিলেন যা পরবর্তীতে ড. মোহাম্মদ ইউনুস চালু করেন। যদিও রবীন্দ্রনাথ সুদ নিতেন না ফলে তার নোবেল বিজয়ের অনেক টাকা এই খাতে ব্যায় হয়ে যায়। তিনি নারীর মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। 'স্ত্রীর পত্র' বা 'হৈমন্তী' গল্পে তিনি এসবের বিস্তারিত বলেছেন। নারীকে গৃহের বাইরে আনা, সংসার থেকে মুক্ত করা, নারীর স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন। আবার শেষের দিকে তিনি নারীর করণীয় সম্পর্কেও বলেন। তাদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হবার আহবান জানান।

তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথের ১৯ শতকের সমাজ সংস্কারক হিসেবেও অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি বুঝেছিলেন বাইরের আন্দোলন করে এটা সম্ভব না, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন জরুরি। তাই তিনি লেখনির মাধ্যমে সমাজ দর্শন প্রকাশ করেছেন। আবার তিনি বুঝেছিলেন, সমাজের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা ছাড়া সমাজের সংস্কার সম্ভব না, মানুষের মুক্তি, উন্নতি সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ হিসেবে তিনি শাওতাল ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য শৃনিকেতন প্রতিষ্ঠান গড়া, সমবায় প্রথা চালু, কৃষিতে অল্প শ্রমে বেশি উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালানো। আবার শিক্ষা ক্ষেত্রেও তিনি বিপ্লব সাধনের চেষ্টা করেছেন। তিনি বিশ্বভারতী, শ্রীনিকেতন গড়ার মাধ্যমে উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। তিনি উন্মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। আর এই এই শিক্ষাব্যবস্থার ফসল হলেন ইন্দিরা গান্ধী, অমর্ত্য সেনের মতো ব্যাক্তিরা। 

সমাজের শ্রেণি বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে তিনি মনে করতেন, জন্ম হলেই সে ব্রাহ্মণ নয় বরং ব্রাহ্মণ হবে তার কাজের পূর্ণতার মাধ্যমে। আগে মন্দিরে শ্রুদ্ররা প্রবেশ করতে পারতো না, এই প্রথা রবীন্দ্রনাথ বাদ দিতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে গান্ধীজী অনশন করে সেটা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। ব্রাহ্মণ যেনো শ্রুদ্র বা বৈশ্যদের জড়িয়ে ধরতেও কার্পণ্যবোধ না করেন সেই চেষ্টাও তিনি করেছিলেন। আবার যখন মুসলমানদের কাছে হিন্দু নেতারা ভোট চাইতে যেতো কিন্তু তখন মুসলমানরা মুখ ফিরিয়ে নিতো। রবীন্দ্রনাথ তখন মুসলমানদের পক্ষ হয়ে বলেছিলেন, তোমার (হিন্দুরা) যাদের (মুসলমান) স্পৃশ্য ভাবছ তাদের কাছে ভোট চাইলে তো অবশ্যই তারা মুখ ফিরিয়ে নিবে। কেন তাদের স্পৃশ্য ভাবছ তোমরা যুগের পর যুগ ধরে? আবার নিজেদের প্রয়োজনে ঠিকই ভোট চাইতে এসেছ?

এভাবেই রবীন্দ্রনাথ ছোট গল্প, কবিতা, উপন্যাসের মাধ্যমে সমাজ দর্শন পরিবর্তন করে সংস্কারের চেষ্টা করেছেন। তখনকার সমাজ ছিলো পাশ্চাত্যের আদলে তৈরি যা বৃটিশরা করে দিয়েছিলো। তিনি সেটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন। 

রেজিস্ট্রার প্রবীণ কুমারের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। এসময় ঢাবির সিন্ডিকেট সদস্যগণ, বিভিন্ন হলেএ প্রাধ্যাক্ষবৃন্দ, অফিস প্রধানগণ, অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence