১৭ দিনেও জমা হয়নি ‘সাংবাদিক হেনস্তা’ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গত ৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) সদস্য ও দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি মারজান আক্তারকে ছাত্রলীগকর্মীরা হেনস্তা করেন। এ ঘটনার ১৭ দিনেও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান নেন সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা। এদিন সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত সবধরনের সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন থেকে বিরত থাকেন ক্যাম্পাসের সাংবাদিকরা।
চবিসাসের প্রচার, প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আজহারের সঞ্চালনায় আন্দোলনে বক্তব্য রাখেন চবিসাস সভাপতি মাহবুব এ রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম, অর্থ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক রোকনুজ্জামান, চবিসাস সদস্য মারজান আক্তার ও যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন।
চবিসাসের সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু বলেন, এ ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন চাকসুর কার্যক্রম নেই৷ চাকসু না থাকায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মুখপাত্র হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছে সাংবাদিকরা। যখন সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়, তখন মূলত সব শিক্ষার্থীর স্বাধীনতাই কেড়ে নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, যখন কোনও সাংবাদিক হেনস্তার শিকার হয় তখন অভিযুক্তরা বলেন, সাংবাদিক পরিচয় জানলে আমরা এমন কিছু করতাম না। তাহলে কি সাংবাদিক ছাড়া অন্য শিক্ষার্থীদের মারধর বা হেনস্তার অধিকার আছে তাদের? এ থেকে বোঝা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ক্যাম্পাসে নিরাপদ না।
চবিসাস সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন, এ ঘটনার পর প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে ১৭দিন পেরিয়ে গেলেও বিচার দূরের কথা, তদন্ত প্রতিবেদনও জমা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়ার এমন দীর্ঘসূত্রতা বিচারহীনতার নামান্তর।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী কিংবা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। যারা অভিযুক্ত তাদের সবার পরিচয় স্পষ্ট। প্রশাসন তাদের সবাইকে চিনে। এরপরও এতদিনে বিচার নিশ্চিত করতে না পেরে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পূর্বেও এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন সেসব ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যার ফলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এ ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত না করলে আমরা প্রশাসনিক সবধরনের সংবাদ বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।
আরও পড়ুন: চবিতে ছাত্রলীগ নেতার হাতে নারী সাংবাদিক হেনস্তা
অবস্থান কর্মসূচি শেষে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে চবিসাস।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, এ বিষয়ে আমি আগেও প্রক্টরিয়াল বডিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এরপরও আমি কথা বলবো প্রক্টরের সঙ্গে। যাতে দ্রুত এর বিচার হয়।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, আমরা সবসময় সাংবাদিকদের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখি। এ ঘটনার পরদিনই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদন হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ ফেব্রুয়ারি চারুকলার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ভিডিও ফুটেজ ডিলেট করতে চাপ প্রয়োগ ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন তারা। পুরো ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও গত ১৭ দিনে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
এ ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবিতে গত ১২ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি দুই দফায় আল্টিমেটাম দিলেও তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিতে পারেনি। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ে বিচারের দাবিতে চবি সাংবাদিক সমিতি ও ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা ২৬ ফেব্রুয়ারি কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এছাড়া কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করে অংশ নেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।