ছাত্রলীগের নির্যাতনের প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন

রাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
রাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে কৃষ্ণ রায় নামের শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হলকক্ষে আটকে রেখে ছাত্রলীগ কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং হত্যার হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনের রাস্তায় এ  মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ক্যাম্পাস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ জায়গা কিন্তু আমার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সবথেকে অনিরাপদ। আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? আমার মেয়েরাও এ নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। মেয়েদেরকেও নির্যাতন করে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও করা হচ্ছে। আমরা উপরে ট্রেন চালাচ্ছি, কর্ণফুলীর নিচ দিয়ে ট্রেন চালাচ্ছি। পুরো বাংলাদেশকেই উন্নয়ন করে ফেলছি কিন্তু আমার ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকতে পারছে না। এ কেমন উন্নয়ন? 

আরো পড়ুন: শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নৈরাজ্য, প্রতিবাদে প্রতীকী অনশনে রাবি অধ্যাপক

তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ব র্যাংকিং নিয়ে চিন্তা করছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে পারছি না। কৃষ্ণ রায়ের উপর যে অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে প্রায় মৃতের মতো অবস্থা তার। তার বাবা নেই, অসহায় পরিবার থেকে উঠা আসা। সে এই নির্যাতনের চিত্র ভুলবে কীভাবে? আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। সমাধান না হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠবে বলে জানান তিনি।

লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সপ্নীল রহমান বলেন, এমন ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে চলতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্রের কাজ। এমন ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিন। তাহলে দেখা যাবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এমন ঘটনা আর ঘটবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন আর কোনো কৃষ্ণ রায় নির্যাতন না হয় প্রশাসনের কাছে সেই দাবি জানান তিনি।

এসময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে হলগুলো শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযোগিতা হারাচ্ছে। নিয়মিত সকল হলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে থাকার পরিবেশ নেই। আমার ছাত্র কৃষ্ণকে শিবির সন্দেহে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।

আরো পড়ুন: ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও: ইবির দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ

এ সময় তিনি আরো বলেন, যখন কৃষ্ণ বলেছে আমি হিন্দু তখন তারা (ছাত্রলীগ) বলে, তাহলে তো তোকে মেরে ফেলা আরও সহজ। তুই সংখ্যালঘু হওয়ায় কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না। ছাত্রলীগ এখন গুণ্ডাতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা গুণ্ডামীর মাধ্যমে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চায়। তাদের এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না থামলে আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানান। 

এদিকে, দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নৈরাজ্য ও নিপীড়নের প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে প্রতীকী অনশন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খাঁন। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খানের সাথে প্রশাসন ভবনের সামনে অনশনে যোগ দেন বিক্ষোভ সমাবেশ থাকা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রায় দুই শতাধিক  শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য,বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এক সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হলকক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে অত্র হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ