ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যান্টিন চালানোর দায়িত্বে সাবেক ছাত্র, খাবারের দাম ও মান নিয়ে সন্তুষ্টি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে চালু হয়েছে সোনার বাংলা ক্যান্টিন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে চালু হয়েছে সোনার বাংলা ক্যান্টিন  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সম্প্রতি চালু হয়েছে সোনার বাংলা ক্যান্টিন। ‘সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে চালু হওয়া এই ক্যান্টিনের বিশেষত্ব হলো সেটি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক এক শিক্ষার্থী। তার নাম আবু জাফর সোহাগ। তিনি ২০১২-১৩ সেশনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। সেই সাথে তিনি এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীও ছিলেন।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ আবাসিক হলের ক্যান্টিনের খাবার মান খুবই নিম্নমানের। সেখানে বাসি-পচা খাবার পরিবেশনের অভিযোগ অনেক পুরানো। এ অভিযোগের কারণে বিভিন্ন সময় ক্যান্টিনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে নতুন চালু হওয়া এ ক্যান্টিনের খাবার মান নিয়ে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাবেক এই শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষার্থীদের স্বল্প মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহ করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য।

ক্যান্টিনের খাবারের বিষয়ে হলের কনক আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বাড়িতে যেমন রান্না হয়, খাবারের স্বাদ অনেকটা এমন। খাওয়ার অন্যান্য হলগুলোর ক্যান্টিন খাবারের থেকে ভিন্ন রকম মনে হলো। অন্যসব ক্যান্টিনগুলোতে খেতে গেলে এক প্লেট ভাত খাওয়ার পর খেতে পারি না। অনেকসময় আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়। এখানে অনায়েসে দুই-তিন প্লেট ভাত খেয়ে ফেলতেছি। 

বঙ্গবন্ধু হলের মো. সোহেল নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য ক্যান্টিনে আমরা সবসময় সবজিটা পাই না। এখানে তিন/চারটা আইটেমের সবজি থাকে। সার্ভিস ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে। নতুন হিসেবে ভালোই সার্ভিস দিচ্ছে। তবে দেখার বিষয় এটা কতদিন দীর্ঘমেয়াদী হয়।

খাবার মান ভালো হওয়ায় অন্য হলের শিক্ষার্থীরা খেতে আসেন এই ক্যান্টিনে। তাদের মধ্যে একজন তানজিল হোসেন। তিনি জানান, আমি আমার বন্ধুর কাছে শুনেছি বঙ্গবন্ধু হলে একটা ক্যান্টিন চালু হয়েছে। যা অন্যান্য ক্যান্টিন থেকে ভালো। এখন খাওয়া-দাওয়ার পর মনে হলো, খাবারের মান যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে।

কবি জসীম উদ্দিন হলের শিক্ষার্থী আল-ফাত্তাহ বিশাল রাহুল জানান, অন্যান্য হলের ক্যান্টিন থেকে এখানকার খাবারটা বেশ সুস্বাদু এবং মানটা বেশ ভালো। খাবারটা খেয়ে পরিতৃপ্তি পাচ্ছি। নতুন ক্যান্টিন হিসেবে বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। 

শিক্ষার্থী হয়ে ক্যান্টিন পরিচালনার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু জাফর সোহাগ জানান, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে আসার পর হল ক্যান্টিনগুলোর বিদ্যমান সমস্যা আমাকে ভাবায়। শিক্ষার্থীরা মানসম্মত খাবার পাচ্ছিল না। পরে মনে হলো শিক্ষার্থীরা ও প্রশাসন যদি সহযোগিতা করে ভালো একটা খাবার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব। সেই চিন্তা থেকেই আমি ক্যান্টিন চালু করার সিদ্ধান্ত নিই।

খাবারের মান দীর্ঘমেয়াদী হবে কী না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টা খুবই প্রাসঙ্গিক। এর আগেও বেশ কয়েকটা ক্যান্টিন পরিচিতির জন্য ভালো খাবার পরিবেশন করেছে। পরবর্তীতে কয়েকদিন ভালো খাবার দেওয়া হয়নি। এটা মূলত তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছিল। এখানে আমার ক্ষেত্রে যতটা না বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য, তার চেয়েও এখানে সেবা ও মানবিক উদ্দেশ্যটা বড়। এখন পর্যন্ত ২৫ দিন হয়ে গেল। আশা রাখি, সামনেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

ক্যান্টিনটির তদারকের দায়িত্বে থাকা হলের আবাসিক শিক্ষক ড. সাইফুল হক জানান, আমাদের ফিউচার প্ল্যান হচ্ছে স্টুডেন্টদের নিয়ে প্রতিমাসে একটা মতবিনিময় সভা করা। সভায় শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে এটার মানটা আরও বাড়ানো। আমি এই ক্যান্টিনের খাবারের মানটা নিশ্চিত করতে চাই। তাছাড়া আমাকে প্রতি শুক্রবারে ঘন্টা দুয়েক দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করতে দেখবে। আমি মনে করি, এটা আমার একটা মিশন। আর এটা ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়েছি।


সর্বশেষ সংবাদ