রাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

সায়মার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
সায়মার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সায়মা আরাবী ইভার আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও  মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড রাবি শাখার সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। 

কর্মসূচিতে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম'র সভাপতিত্বে বক্তারা বলেন, দেশব্যাপী নারীদের উপর যে নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে তারই অংশ সায়েমা। সায়েমা সদা হাস্যোজ্জ্বল ছিল, সে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না। তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি এক ধরনের হত্যা। তাকে আত্মহত্যার প্ররোচনাদানকারী নাজমুল মাহবুব পলাশ এলাকার বখাটে হিসাবে পরিচিত। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

মানববন্ধনে সায়েমার মায়ের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অসীম নাবিল। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ছোট বেলাতেই সায়েমার সঙ্গে কৌশলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন একই গ্রামের নাজমুল মাহবুব পলাশ। বিষয়টি বুঝতে পেরে  সায়েমা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পলাশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু  পলাশ প্রায়শই তাদের বাড়িতে এসে বিয়ের জন্য হুমকি দিতো। গত ১৪ জানুয়ারি সায়েমার বিয়ে হয়। বিষয়টি জানতে পেরে  পলাশ  সায়েমার সঙ্গে থাকা অতীতে কিছু ছবি ও ভিডিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। পরবর্তীতে পলাশ ও তার সঙ্গীরা সায়েমাকে তুলে নিয়ে ফের বিয়ে করে।

আরও পড়ুন: আত্মহত্যার পর হাফেজি মাদ্রাসা ছাত্রের পায়ুপথে ‘যৌন নিপীড়নের চিহ্ন’

লিখিত বক্তব্যে সায়েমা’র মা দাবি করেন, জোরপূর্বক সম্ভ্রমহানির কারণে তার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯ জানুয়ারি অতিরিক্ত পরিমাণে ড্রাগ (ঔষধ) সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ২০ জানুয়ারি ভোর পৌনে ৬টায় মৃত্যুবরণ করেন ইভা।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড রাবি শাখার সভাপতি জান্নাত জানা বলেন, সারা দেশে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং তাদের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের সায়মা আপুকেও বিভিন্নভাবে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়েছে। আত্মহত্যার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে সেটাও থানা গ্রহণ করেনি। তাছাড়া তার আত্মহত্যার পর তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে, হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সঠিক বিচারের দাবি করছি।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেত্রী ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, বাংলাদেশের নারীরা কতটা কষ্টে পরে আছে তার একটি উদাহরণ হচ্ছে সাইমা। সে একা ছিল, পাশে কাউকে পায়নি। আত্মহত্যায় যে প্ররোচনা করেছে তার মতো অপরাধী আর কেউ হতে পারে না। তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সে জন্য আমরা ইতোমধ্যে একজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছি। আমরা পুলিশ কমিশনারের সাথে কথা বলবো। এই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।  

মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে অধ্যাপক কেয়া বলেন, আমরা প্রায়শই দেখি এধরনের ঘটনায় জড়িত আসামিরা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়। তাই আমরা দোষীদের  শাস্তি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- নারী নেত্রী কল্পনা রায়, সায়েমার বড় ভাই হারুন অর রশিদ প্রমুখ। মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের দু-শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence