অর্ধেক চিকিৎসক দিয়ে চলছে রাবি মেডিকেল সেন্টার, ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:৪৩ PM , আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০১ PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অধ্যয়নরত প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। কিন্তু সেই পদের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৮ জন। এভাবেই মোট চিকিৎসকের অর্ধেক নিয়েই চলছে রাবির মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কর্মরত চিকিৎসকরা। এতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা শিক্ষার্থীরা ।
মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা সেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেকোনো অসুখের চিকিৎসায় দেওয়া হয় শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ও ইনজেকশন। এছাড়াও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিতে নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও। অনেক সময় প্যারাসিটামলও পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ তাদের।
সর্বশেষ তথ্য বলছে, শূন্য ১৮টি পদের বিপরীতে চিকিৎসক পদে ১৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবরে। তবে তাদের মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় আটকে আছে নিয়োগ কার্যক্রম। পাশাপাশি মেডিকেল সেন্টারের তিনটি কিউএস মেশিনের মধ্যে দুইটি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এই মেশিনের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা তাদের স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, রোগীর ব্যবস্থাপত্র, ইলেকট্রনিক রেকর্ডে সংযোজন, রোগ অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নেয়াসহ নানা কাজে ব্যবহার করার সুযোগ পায়।
অন্যদিকে ইসিজি কার্যক্রম বন্ধ আছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অপারেটর না থাকায়। তথ্য বলছে, প্রায় আট বছর ধরে বন্ধ আছে ইসিজি সেবা। এছাড়াও গাইনি বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চর্ম বিশেষজ্ঞ বিভাগগুলো চিকিৎসকের সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না এখানকার শিক্ষার্থীরা।
মেডিকেল সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব বহুদিনের জানিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, তিনি চুলকানি সমস্যা নিয়ে গত সপ্তাহে মেডিকেল সেন্টারে যান। কিন্তু সেখানে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তার না থাকায় তিনি বাধ্য হয়ে মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার দেখিয়েছেন।
আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: মেধা আর অর্থ দুটোরই অপচয়
শিক্ষার্থীদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন জানিয়ে রাবির চিকিৎসা কেন্দ্রের ওষুধ সরবরাহ বিভাগের ইনচার্জ মো. শরীফুল ইসলাম জানান, প্রতিনিয়ত দুই শতাধিকের উপরে শিক্ষার্থী সেবা নিচ্ছে। আমাদের মেডিকেলে বর্তমানে ৫৯ পদের ওষুধ আছে। শিক্ষার্থীরা যদি শুধু নাপা বা প্যারাসিটামল পায় তাহলে অন্য ৫৭ পদের ওষুধ কাকে দিচ্ছি আমরা-বলে পাল্টা প্রশ্নও জানান তিনি।
মেডিকেল সেন্টারের প্রধান ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার জন্য এখানে আসেন কিন্তু আমরা তাদের যথাযথ সেবা দিতে পারছি না। এতে আমাদের নিজেদেরও খারাপ লাগে। তিনি বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেকগুলো বিভাগ ফাঁকা হয়ে পড়ে আছে। আমি উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য স্যারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা দ্রুত চিকিৎসকের শূন্য পদগুলোর নিয়োগ দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তখন শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো বলেও আশাবাদ জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. তবিবুর রহমান শেখ জানান, এখানে বিভিন্ন পদের ঔষধ শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে। আমাদের এই মেডিকেল সেন্টার থেকে মূলত প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তাই রোগীর অবস্থা দেখে শুরুতে আমরা এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে পারি না। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ওষুধ দিয়ে থাকি। এতে করে শিক্ষার্থীরা ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করে থাকে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। এটা তদন্তের বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। তাই যতক্ষণ সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেবে আমরা কোনো নিয়োগই দিতে পারবো না। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে আমরা নিয়োগ দিতে পারবো।
প্রসঙ্গত, গত ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।