চবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ৫০টি কক্ষ ভাঙচুর, আহত অন্তত ২০
আবাসিক এ এফ রহমান হলের দেয়ালে ছাত্রলীগের উপগ্রুপের চিকা মেরে আধিপত্য বিস্তার এবং হল দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামে আগমন উপলক্ষে একটি মিটিংয়ে বসার পর। দুটি পক্ষই দাবি করছে অপরপক্ষ আগে হামলা করেছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া এফ রহমান হলের প্রায় ৫০টি কক্ষ ভাঙচুর করেছে উশৃংখল নেতাকর্মীরা।
এদিন শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে চবির এএফ রহমান হলে মিটিংয়ে বসে চবি ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক উপ-গ্রুপ ভিএক্সের অনুসারীরা। গ্রুপটির নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আগামী ৪ ডিসেম্বর আমরা জনসভায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি বিষয়ে পরিকল্পনা করতে মিটিংয়ে বসেছিলাম। বিজয় গ্রুপের অনুসারীরা তখন আমাদের ওপর হামলা চালায়।
সংঘর্ষে জড়ানো পক্ষ দুটি হলো- শাখা ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয় ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স)। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে এএফ রহমান হলের অর্ধশতাধিক রুম ভাঙচুর করে বিজয়ের নেতাকর্মীরা। এসময় একজন শিক্ষককে মারধর করতে তেড়ে আসেন বিজয়ের এককর্মী। এছাড়া কর্মরত সাংবাদিকদেরও হত্যার হুমকি দেন বিজয় গ্রুপের একাধিক কর্মী। ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায় ছাত্রলীগের অনুসারীদের।
আরও পড়ুন: এবার শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের হামলা করলো বিজয়ের কর্মীরা
চবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভিএক্স গ্রুপের নেতা মারুফ ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যদিও বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ। তবে এখনও বগিভিত্তিক উপগ্রুপগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। পুরো ক্যাম্পাসে আজ পর্যন্ত কোনো গ্রুপ অন্য গ্রুপের চিকা মুছে ফেলছে এমন নজির নেই। কিন্তু গতকাল এএফ রহমান হলে আমরা কিছু জায়গায় চিকা মারার পর বিজয়ের অনুসারীরা সেগুলো মুছে দেয়, সেখান থেকেই মূলত দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রাতে আমরা মিটিংয়ে বসলে তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তবে পুরো সময়টা আমরা শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু বিজয়গ্রুপের অনুসারীদের একাধিকবার অতর্কিত হামলায় আমাদের ১৫ জনের বেশি আহত হয়েছে। গুরুতর আহত হওয়ায় বেশ কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।
চবি ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ও বিজয় গ্রুপের নেতা নয়ন চন্দ্র মোদক বলেন, আগামী ৪ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে আসবেন। সে উপলক্ষে আমরা নেত্রীকে স্বাগতম জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমরা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভাইয়ের নির্দেশে বিষয়টি মিটমাট করেছি। এছাড়া শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ওপরে যারা চড়াও হয়েছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের দুুটি পক্ষের মধ্যে চিকা মারাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হাটহাজারী থানা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন ছিলো। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশিরভাগ বিভিন্ন দায়িত্বে থাকার কারণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা যখন বিষয়টি মিটমাটের জন্য দুই পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছিলাম ঠিক তখনই একটি পক্ষ হলের পেছনের গেইট ভেঙে বিভিন্ন রুম ভাঙচুর করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে যারা জড়িত একটি তদন্ত কমিটি করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। পাশাপাশি হলের দেয়ালে থাকা সকল গ্রুপের চিকা মুছে দিবো আমরা। এছাড়া তিনি সংঘর্ষের সময় সাংবাদিকদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।