রামেকে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিল রাবি প্রশাসন

হাসপাতালে রাবি শিক্ষার্থীরা
হাসপাতালে রাবি শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানায় এই অভিযোগপত্র জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম।

এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার বলেন, শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রামেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের জন্য একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কেননা সেদিন শিক্ষার্থীরা আহত ছাত্রকে হাসপাতালে নিলে সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা পাননি। তাই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু হাসপাতালের স্টাফ ও সংশ্লিষ্টরা তাদের অবরুদ্ধ করলে ঝামেলা বাঁধে। এসময় হাসপাতালের স্টাফ, ডাক্তার ও সংশ্লিষ্টদের আঘাতে গুরুতর আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। 

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ১৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এস. জে. এম শাহরিয়ার শহীদ হবিবুর রহমান হলে উপরতলার থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। এ অবস্থায় তাকে জরুরি চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।কিন্তু গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত শাহরিয়ারকে সেখানে কোন প্রকার চিকিৎসা প্রদান করা হয়নি এবং তাকে আইসিইউ-তে না নিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রেরণ করা হয়। ওয়ার্ডে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনেক ডাকাডাকির করলে বিলম্ব করে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্স আহত শাহরিয়ারের নিকট আসে এবং নানা অযুহাতে চিকিৎসা প্রদানে কালক্ষেপণ করতে থাকে। ফলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নেয়ার পর চিকিৎসায় বিলম্ব ও বিনা চিকিৎসায় শাহরিয়ারের মৃত্যু হয়। চিকিৎকেরা সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে শাহরিয়ারের বাঁচার সম্ভবনা ছিল বলে ছাত্রদের বিশ্বাস। 

অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়েছে, ডাক্তার/নার্সদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা এবং তাদের দায়িত্বে ও কর্তব্যে অবহেলাজনিত কারণে শাহরিয়ারের মৃত্যু ঘটায় রাবি শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। এহেন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। সেই সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড ও তার আশেপাশের ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক/ ইন্টানী/ নার্স/ব্রাদার/আনসার ও তাদের উচ্ছৃংখল সহযোগিরা ন্যাক্কারজনকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকার্ত শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে অকথ্য গালিগালাজ করে এবং আকস্মিকভাবে হামলা চালায়। তারা হামলাযর সময় লাঠি এবং শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত ধারালো যন্ত্রসামগ্রী দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুমানিক শতাধিক শিক্ষার্থীকে গুরুতরভাবে আহত করে। আহত শিক্ষার্থীদের অনেকে রাজশাহী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাই আহত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচারের জন্য মামলা এজহারভুক্ত করণে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাজপাড়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা মাহেদুল ইসলাম জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। এটা এজাহার ভুক্ত হবে কিনা সেটা উর্ধ্বতন কর্মকতাদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এরআগে, গত ১৯ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে উপরতলার থেকে পড়ে গুরুতর অবস্থায় রামেকে মারা যান শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী। তবে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসা অবহেলা ও কালক্ষেপণের অভিযোগ তোলেন আন্দোলন করেন রাবি শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে হাসপাতাল স্টাফ ও ইন্টার্ন ডাক্তারদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঝামেলা বাঁধে এবং হাসপাতালের জানালা, টবনহ বেশকিছু জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন রাবি শিক্ষার্থীরা। এসময় হাসপাতালের স্টাফদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে এবং তাদের আঘাতে গুরুতর জখম হন রাবির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। বর্তমানে তারা নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যদিকে ইন্টার্ন ও স্টাফদের লাঞ্চিত ও সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করার অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা রাবির তিনশো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় মামলার আবেদন দিয়েছে রামেক কর্তৃপক্ষ। তবে এই ঘটনায় জড়িত রাবি শিক্ষার্থীদের শাস্তির আওতায় আনতে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন করেছেন মেডিকেলের ইন্টার্ন ডাক্তাররা।  


সর্বশেষ সংবাদ