১৫ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৪১

রিক্সায় চল; আরে ব্যাটা হেঁটে চল

চবি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের পঞ্চাশ বছরপূর্তি উৎসব  © টিডিসি ফটো

বন্ধু বললো রিক্সায় চল; তবে আরেক বন্ধু বললো, না, আরে ব্যাটা হেঁটে চল। কতদিন পর ক্যাম্পাসে আসছি, একটু হেঁটে নিই। কাটাপাহাড় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সাবেক দুই শিক্ষার্থী।  

'এসো মিলি পঞ্চাশের উৎসবে, গৌরবে অস্তিত্বে অনুভবে' স্লোগানে পালিত হয়েছে চবি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের পঞ্চাশ বছরপূর্তি উৎসব।

আজ উৎসবটির দ্বিতীয় এবং শেষ দিন ছিল। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আনাগোনা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্নের সাবেকসহ বর্তমান শিক্ষার্থীদের। 

প্রায় ২১০০ প্রাক্তন শিক্ষার্থী, তাদের পরিবারের সদস্য প্রায় ১০০০ ও বিভাগটির বর্তমান ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সর্বমোট চার হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছে এ উৎসবকে কেন্দ্র করে। 

দেশের বিভিন্ন পেশায় কর্মরত থেকেও ছুটে এসেছেন নিজের বিভাগের টানে। ষাটোর্ধ বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নতুন ব্যাচ সবাই একই রাস্তায়, একই পেন্ডেলে অবস্থান করতে দেখা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: মেডিকেলে প্রশ্নফাঁস: ‘থ্রি ডক্টরস’ ও ১২ শিক্ষার্থী নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

পুরনো ক্যাম্পাসকে নতুন করে জানতে এসেছেন প্রবীণ এবং সাবেক শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সাথে এবং পাশে বসে নতুনরাও শুনছেন নানান ইতিহাস। আবার পরিচিত এবং কাছের মানুষদের মুখোমুখি হয়ে হারানো অতীত রোমন্থনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। দীর্ঘদিন পরে সাক্ষাৎ পাওয়ার উচ্ছ্বাসে রঙিন হয়ে উঠে ক্যাম্পাসের পরিবেশ। 

বিভাগের ১৮ তম ব্যাচের নাজিম উদ্দীন বলেন, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের ফলে আমাদের অনেকের সাথে দেখা হয়েছে। আমার জানা মতে আমাদের ব্যাচ থেকেই সবচেয়ে বেশি আসছে। আমার মনে হচ্ছে আমি যেন সেই পুরোনো দিনের ক্যাম্পাস জীবনেই ফিরে গিয়েছি। 

তবে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আমার সব বন্ধুরা আজ আসেনি। অনেকেই মারা গিয়েছে। অনেকেই হয়তো চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

১৫ তম ব্যাচের সঞ্জিৎ দে বলেন, এই ক্যাম্পাসের ইতিহাস অনেক গভীর। জীবনের গৌরবোজ্জ্বল সময় কাটিয়েছি। আজকে পুনরায় শাটলে উঠবো। খুবই ভালো লাগছে। 

অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আজকে এখানে যারা এসেছে তাঁদের বেশিরভাগই দেশে প্রতিষ্ঠিত। চবি হিসাববিজ্ঞান বিভাগ অনেক সমৃদ্ধ। দেশের বিভিন্ন উচ্চ পেশায় কর্মরত আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা। 

আনন্দ মাখা এ উৎসবে মোট তিন পর্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। প্রথম পর্বে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আহবায়ক অধ্যাপক মো: হেলাল উদ্দিন নিজামীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, হিসাববিজ্ঞান বিভাগসহ আমাদের অনেক শিক্ষার্থীই দেশ বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত আছেন। তারা সেখানে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের শিক্ষকরা ছাত্রদের যথাযথভাবে গড়ে তুলতে পেরেছেন। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনগ্রসর মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করার জন্য এলামনাইদের নিকট আহবান জানান।

২য় পর্বে 'Contemporary Issues of Accouing' বিষয়ের উপর স্মারক বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক ড. ভবতোষ ব্যানার্জি। তিনি একাউন্টিং রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ইন্ডিয়ার সভাপতি ও ইন্ডিয়ান একাউন্টিং এসোসিয়েশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। 

৩য় পর্বে স্টার এলামনাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে ৯ ক্যাটাগরিতে সর্বমোট ১২৩ জন স্টার এলামনাইকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এতে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ একাউন্টিং এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এম. হারুনুর রশীদ। 

এছাড়াও, বিকেল ৪ টা থেকে নগরীর জি.ই.সি কনভেনশন হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। 

গত শুক্রবার বিকেলে নগরীর এম এ আজীজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা-উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।