খেলার মাঠে দ্বন্দ্ব থামাতে গিয়ে আহত রাবি প্রক্টর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলায় রেফারির দেওয়া সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে হওয়া ঝামেলা ঠেকাতে গিয়ে মাথা ফেটে আহত হয়েছেন প্রক্টর। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ও রসায়ন বিভাগে আন্তঃফুটবল প্রতিযোগিতা চলছিল।নির্ধারিত সময়ে গোল শূন্য ছিল উভয়পক্ষ। তাই খেলা ট্রাইবেকারে গড়ায়। প্রথম দুটি শুটে গোল পায় রসায়ন বিভাগ।অপরদিকে প্রথম দুটি শুটে গোল দিতে ব্যর্থ হয় আইন বিভাগ। রসায়ন বিভাগের খেলোয়াড়ের তৃতীয় শুট গোলবারে সীমানা অতিক্রম করে ফিরে আসে। সেটাকে গোল হিসেবে ঘোষণা দেয় রেফারি। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত না মেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সেটা নিয়েই মূল ঝামেলার সূত্রপাত।
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার
তারপর গ্যালারিতে থাকা আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা গেট দিয়ে মাঠে ঢুকার চেষ্টা করলে বাঁধা দেয়া হয়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় স্টেডিয়ামে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক। তিনি দরজা দিয়ে ঢুকতে গেলে পিছন দিক দিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জোরে দরজা ধাক্কা দেয়, ফলে দরজার আঘাতে মাথা ফেটে আহত হন প্রক্টর।
সহকারী প্রক্টর ড. আরিফুল রহমান জানান, এঘটনায় আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ আছেন।
এঘটনা শৃঙ্খলাবোধের চরম অবক্ষয় বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, গত কয়েকমাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি মারামারি ও বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় কাম্য নয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতা বোধ কিংবা মেনে নেয়ার মানসিকতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। যা উন্নত মানসিকতার অন্তরায়। তাই এই সংস্কৃতি থেকে দ্রুত শিক্ষার্থীদের বেরিয়ে আসার কথা বলছেন তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরমান বাসার বলেন, গত কয়েক মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। যা খুবই নেক্কারজনক। এসব বিষয় মাঠে উপস্থিত শিক্ষকেরা আলোচনা করেই সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বেপরোয়া আচরণ ও সহিষ্ণুতার অভাবে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় রূপ নিয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের সমঝোতাবোধ ও মেনে নেয়ার মানসিকতার চরম অবক্ষয় বলে মনে করেন এ শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটেছে। তাদের মধ্যে সহিষ্ণুতাবোধ নেই। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষায় চরম অন্তরায়। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপের অভাব এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। কেননা কোন ঘটনার দৃশ্যমান শাস্তি কার্যকর না করার ফলেই আরো ঘটনার পথ প্রশস্ত হচ্ছে। তাই সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করলেই এসব অপ্রীতিকর ঘটনা বন্ধ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, প্রক্টরের সাথে যা ঘটেছে, সেটা একটা দুর্ঘটনাবসত ঘটেছে। তবে খেলাধুলা সম্প্রীতি বজায় রাখার একটি মাধ্যম। যার মাধ্যমে মানুষের মাঝে সম্প্রীতির সৃষ্টি হয়। তাই খেলাধুলা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকেই সহনশীল আচরণ বজায় রাখার কথা জানান এ অধ্যাপক।
এর আগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালে কৃষি অনুষদভুক্ত ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্স বিভাগ ও আইবিএ ইনিস্টিউটের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় আইবিএ শিক্ষার্থী সিনহা কর্তৃক ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোইজুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে সেদিনই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যা এখন চলমান।