অবৈধ হারে সিটিং অ্যালাউন্স নেন মন্ত্রণালয়-ইউজিসির প্রতিনিধিরাও

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি  © লোগো

অবৈধ হারে সিটিং অ্যালাউন্স নেয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ  শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি মনোনীত সদস্যদের বিরুদ্ধে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নির্বাহী কর্তৃপক্ষের ভূমিকা রাখে সিন্ডিকেট। বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষস্থানীয় এ পর্ষদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে একজন করে মনোনীত সদস্য থাকেন।

আইন ও নিয়ম মেনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ভূমিকা রাখতেই তাদের সিন্ডিকেটে মনোনয়ন দেয়া হয়।যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভায় যোগ দিয়ে অবৈধ হারে সিটিং অ্যালাউন্স নেয়ার অভিযোগ উঠেছে  মনোনীত সদস্যদের বিরুদ্ধেই।

নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত সিটিং অ্যালাউন্স প্রদানের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেট সভায় সদস্যপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স দেয়া হয়, যা ইউজিসি নির্ধারিত হারের দ্বিগুণের বেশি।

দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উচ্চহারে সিটিং অ্যালাউন্স প্রদানের অভিযোগ উঠলে গত বছরের শুরুরদিকে এর লাগাম টেনে ধরতে একটি নির্দেশনা জারি করে ইউজিসি।

ইউজিসির ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সিন্ডিকেট সভার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা, অর্থ  কমিটির সভার জন্য ন্যূনতম সাড়ে ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার এবং একাডেমিক কাউন্সিল ও নিয়োগ কমিটির জন্য ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।এছাড়া বহিঃস্থ সদস্যরা প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রকৃত যাতায়াত ভাড়া পাবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

যদিও সিটিং অ্যালাউন্স প্রদানের ক্ষেত্রে এখনো ইউজিসির নির্দেশনা মানছে না অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।নিয়ম না মানা এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে থাকা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির মনোনীত সদস্যরাও  সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অতিরিক্ত হারে সিটিং অ্যালাউন্স নিচ্ছেন।

বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেটে ইউজিসি মনোনীত সদস্য হিসেবে রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেকউপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।

নিয়ম অনুযায়ী, সিটিং অ্যালাউন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ইউজিসির নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা এ  অধ্যাপকের। 

যদিও সেটি না করে নিজেও অবৈধ হারে সভাপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নর্থ সাউথের সিন্ডিকেট সভায় গেলে খামে করে সিটিং অ্যালাউন্স দেয়, স্বাক্ষর দিয়ে তা নিই।কোন হারে সিটিং অ্যালাউন্স নিতে পারব, এ বিষয়ে ইউজিসি থেকে আমাকে কখনো কিছু জানানো হয়নি। ইউজিসির নির্ধারণ করে দেয়া সিটিং অ্যালাউন্সের হার বিষয়েও কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তিনি ।

ইউজিসি মনোনীত সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের সব সদস্যই এক।কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের, কে ভেতরের, এগুলো কোনো বিষয় নয়। সিন্ডিকেটের সব সদস্যের কাজই এক।

এদিকে জানা গেছে  একইভাবে  নর্থ সাউথের সিন্ডিকেট সভায় যোগ দিয়ে অবৈধ হারে সিটিং অ্যালাউন্স নেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক।  তিনি সরকারের পক্ষ থেকে ‘শিক্ষাবিদ বা শিক্ষানুরাগী’ কোটায় নর্থ সাউথের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব    করছেন।

এদিকে বড় অংকের সিটিং অ্যালাউন্স পেতে তদবির করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে মনোনয়ন নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।এছাড়া সন্তানকে বিনা পয়সায় পড়ানোসহ ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করতে কাঙ্ক্ষিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে মনোনয়ন পেতে ইউজিসিতে তদবির করেন অনেক অধ্যাপক।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উচ্চশিক্ষা তদারককারী ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ  বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আইন, সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা সব সিন্ডিকেট সদস্যের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে ইউজিসি কর্তৃক মনোনীত সদস্যের ভূমিকা বেশি হওয়াই কাম্য। যদি কোনো সদস্য ইউজিসি নির্ধারণ করে দেয়ার পরও এর বেশি অ্যালাউন্স গ্রহণ করেন, সেটি অনৈতিক বলে মনে করি। তাদের অতিরিক্ত হারে অ্যালাউন্স গ্রহণ থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।


সর্বশেষ সংবাদ