উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিবেদন জমা দেয়নি ৮ বিশ্ববিদ্যালয়, অগ্রগতি নিয়ে ধোঁয়াশা

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের লোগো
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের লোগো  © ফাইল ছবি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর কমপ্লিশন রিপোর্ট বা শংসাপত্র প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে হয়। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পগুলোর সার্বিক চিত্র বুঝতে পারে তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। প্রকল্পের ব্যয়ে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, সেটিও বুঝতে পারে কমিশন। তবে আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো প্রজেক্ট কমপ্লিশন রিপোর্ট বা পিসিআর জমা দেয়নি। 

এ বিষয়ে ইউজিসির উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রকল্প শংসাপত্র জমা দেয়নি, এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে রিপোর্ট জমা দেবে। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেয়, সেজন্য তাদের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। মৌখিক এ নির্দেশনার পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ থেকে প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয় ইউজিসির কাছে।

৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পরিবর্তন হয়েছে। দায়িত্ব ছাড়ার আগে প্রকল্পের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে কাজ বুঝে দেওয়া হয়নি। ফলে প্রকল্পগুলোর পিসিআর তৈরি করা সম্ভব হয়নি। নতুন প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করে ইউজিসিতে জমা দেবে। 

পরবর্তীতে ইউজিসির উন্নয়ন ও পরিকল্পনা শাখা থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান প্রকল্পের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সরেজমিনে পরিদর্শনে যায় ইউজিসি। পরিদর্শন শেষে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের শংসাপত্র জমা দেয়নি বলে সামনে আসে।

পিসিআর জমা না দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যারা প্রকল্প ব্যয়ে ‘হেরফের’ করে। রড-সিমেন্ট, বালু থেকে শুরু করে সবকিছুর মূল্য বেশি দেখায়। পিসিআর রিপোর্টে কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তার সার্বিক বিবরণ তুলে ধরতে হয়। সরকার পরিবর্তনের পর এ রিপোর্টগুলো মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিপোর্ট জমা দিতে গড়িমসি করে থাকতে পারে।’

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রকল্পের শংসাপত্র জমা না দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পিসিআর জমা দিতে বলা হয়েছে। যারা পিসিআর জমা দেয়নি তাদের বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানকে অবহিত করা হয়েছে।’

আরো পড়ুন: মাধ্যমিকে ভর্তিতে ৫ শতাংশ কোটা পাবেন জুলাই আন্দোলনে আহত-নিহতদের পরিবারের সদস্যরা

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পরিবর্তন হয়েছে। দায়িত্ব ছাড়ার আগে প্রকল্পের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে কাজ বুঝে দেওয়া হয়নি। ফলে প্রকল্পগুলোর পিসিআর তৈরি করা সম্ভব হয়নি। নতুন প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করে ইউজিসিতে জমা দেবে। 

তালিকায় নাম আসা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ছোট কিছু প্রকল্প রয়েছে। এগুলো আগের উপাচার্যের আমলের। অনেক খাত থেকে টাকা তুলে নেওয়া হলেও প্রতিবেদন বুঝে দেওয়া হয়নি। আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে কল করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।


সর্বশেষ সংবাদ