বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সাবজেক্ট চয়েজ: গুরুত্ব দিতে হবে ৫টি বিষয়
চলছে ভর্তিযুদ্ধ, ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীরা সবসময়ই একটি ব্যাপার নিয়ে বেশ দ্বিধায় থাকেন; তা হলো বিষয় নির্বাচন। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন আর একজনকে দেখে বিচার বিশ্লেষণ না করেই বিষয় নির্বাচন করে থাকেন। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবমুখী নতুন নতুন বিভাগ চালু করে। সঠিক তথ্য না জানার কারণে সুযোগ পেয়েও এসব বাস্তবমুখী (চাকুরির বাজারে চাহিদা সম্পন্ন) বিষয় শিক্ষার্থীদের আড়ালে চলে যায়। আপনি যে বিষয় নির্বাচন করতে চাচ্ছেন পড়াশুনা শেষে সেই বিষয়ের চাহিদা ও প্রতিযোগীর সংখ্যা কেমন হতে পারে তা আগে থেকেই ভাবা উচিত। কারণ আপনি যখন ভর্তি হচ্ছেন তখনকার চাহিদার চেয়ে আপনি যখন পড়াশুনা শেষ করে বের হবেন ওই বিষয়ের তখনকার চাহিদা এবং প্রতিযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশের শিক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি এবং অন্যান্য কিছু বাস্তবতার কারণে এই সাবজেক্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও রয়েছে ঝামেলা! আমাদের প্রত্যেকের পছন্দ ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে পছন্দের সাবজেক্ট নির্বাচনের সময় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। পারিপার্শ্বিক চাপ, ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের সুযোগ এবং আরও কিছু বিষয়ের কারণে আমাদের মাঝে খুব কম শিক্ষার্থীরই নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ হয়। তাই সাবজেক্ট নির্বাচনেও আমরা গতানুগতিক ধারা অনুসরণ করি এবং নিজের পছন্দকে উৎসর্গ করে দেই সেই স্রোতে। তবুও যারা নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে নিজের পছন্দের সাবজেক্টে পড়তে চান, তাদের জন্য রইল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সাবজেক্ট নির্বাচনের ৫ টিপস।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনীয় একাডেমিক ডকুমেন্টস কোথায় কিভাবে সত্যায়ন করবেন
তথ্যমতে, ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবজেক্ট চয়েজ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সাবজেক্টে পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তবে বাকি রয়েছে গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিন সবার আগে
দেশ ও সমাজের প্রেক্ষাপটে পারিবারিক ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক চাপে খুব কম শিক্ষার্থীই নিজের পছন্দ অনুযায়ী পড়ার সুযোগ পায়। বাবা-মা এবং অন্যান্য প্রিয়জনদের ভাললাগাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের ইচ্ছেকে উৎসর্গ করা অতি পরিচিত ঘটনা। তাই এরকম পরিস্থিতে সর্বোত্তম উপায় হল, পরিবারের অবাধ্য না হয়ে বরং আপনার পছন্দের সাবজেক্টের প্রতি আপনার ভাললাগার কথা জানান এবং আপনার প্রিয়জনদেরকে বুঝানোর চেস্টা করুন। নিশ্চই আপনার পরিবার আপনাকে বুঝবে। কারণ, তাঁরা আপনাকে ভালবাসে এবং আপনার ভাল চায়। তাই নিজের পছন্দকে বিলিয়ে না দিয়ে পরিবারকে বুঝানোর মাধ্যমে নিজের ভাললাগার বিষয়কেই প্রাধান্য দিন। এতে পড়াশুনার প্রতি আপনার অনীহা কখনই আসবেনা! বরং, একাডেমিক লাইফে আপনি নিজের সেরাটাই দিতে পারবেন।
ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবুন
বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনাটা পুরোটাই ক্যারিয়ারকে ঘিরেই। ভবিষ্যতে আপনি ক্যারিয়ার কিভাবে গড়বেন এর প্রায় পুরোটাই নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার উপর। তাই সঠিক সাবজেক্ট বেছে নেওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি চ্যালেঞ্জ। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আজকাল দেশের সংকুচিত চাকুরির বাজারের কথা ভেবেই বেশ কিছু চলমান চাহিদাপূর্ণ সাবজেক্টের দিকেই ঝুঁকে পড়ছেন। তবে ক্যারিয়ারের দিক থেকে সাবজেক্ট চয়েজে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। আমরা শুধু বর্তমান পরিস্থিতিই বেশি আমলে নেই এবং সে অনুযায়ী ভেবে থাকি। কিন্ত আমাদের ভাবনা হতে হবে আরও সুদূরপ্রসারী। শুধু ক্যারিয়ার নিয়েই ভাবলে চলবেনা। ক্যারিয়ারের সাথেও সামঞ্জস্যতা রাখতে হবে নিজের ভাললাগা-মন্দ লাগা। আপনার ভাললাগার বিপরীতে গিয়ে লোভনীয় ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটার মতো সাবজেক্ট কখনও চয়েজ করবেন না। সুদূরপ্রসারী ক্যারিয়ার ভাবনা, পছন্দের ক্যারিয়ার সেক্টর এবং ভাললাগা-মন্দ লাগার সামঞ্জস্যতাসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় বিবেচনা করে তবেই নির্বাচন করবেন পছন্দের সাবজেক্ট।
সাবজেক্ট নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়কেও গুরুত্ব দিন
সাবজেক্ট বাছাই করে নিতে বিবেচনায় রাখতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়কেও। কারণ আপনার পছন্দের সাবজেক্টের মান বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে অনেক সময় তারতম্য হয়ে থাকে। একেক সাবজেক্ট একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটও একটি ভাবনার বিষয়। আপনি পছন্দের সাবজেক্ট পেলেন হয়ত কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্ত দেখা গেল যে, ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার পছন্দের সাবজেক্টে সেশন জটের মাত্রা বেশি। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটা একটু গভীর ভাবনা চিন্তা করেই নিতে হবে। কারণ, পছন্দের সাবজেক্টের প্রতি ভালবাসা থাকলেও সেশন জট পরবর্তীতে আপনাকে ফেলে দেবে হতাশার সাগরে। যা ক্যারিয়ারে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলবে। তাই, সাবজেক্ট পছন্দের সময় অবশ্যই মাথায় রাখবেন আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন সেটি আপনার পছন্দের সাবজেক্টের জন্য কতটুকু উপযুক্ত।
আর্থিক সামর্থ্যকেও বিবেচনায় রাখুন
মনে রাখবেন, আর্থিক সামর্থ্যের বাহিরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সফলতা পেতে বেশ বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। আর, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষাও বেশ ব্যয়বহুল। বিশেষ করে, আমাদের দেশে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনার আর্থিক সামর্থ্য অনেকের নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ কিছুটা কম হলেও অনেক গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্যও সেটা কষ্টসাধ্য। অর্থাৎ সাবজেক্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী খরচেরও কিছুটা তারতম্য হয়। তাই, আর্থিক সামর্থ্যের ব্যাপারটি ভুলে গেলে চলবেনা। আপনি যে পছন্দের সাবজেক্ট পড়তে চাচ্ছেন সেই সাবজেক্টে পড়তে আনুমানিক সকল খরচের হিসেব আপনার সামর্থ্যের সাথে মিলিয়ে নিতে ভুলবেন না।
আরও পড়ুন: গবেষণা: জিপিএ বেশি পেতে গান শুনতে শুনতে পড়াশোনা করুন
সমন্বয় এবং অন্যান্য…
যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সাবজেক্ট নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই সর্বোপরি, বিচক্ষণতার সাথে নির্বাচন করতে হবে সঠিক সাবজেক্টটি। পোস্টে উল্লেখিত পরামর্শ ছাড়াও পছন্দের বিষয় নির্বাচনে রয়েছে আরও অনেক ভাবনার বিষয়বস্তু। সেগুলো নিয়েও ভাবুন এবং অবশ্যই সব কিছুর সমন্বয় করেই সিদ্ধান্ত নিবেন। তবেই আপনার সিদ্ধান্ত আপনাকে সঠিক সাবজেক্টটি বেছে নিতে সহায়তা করবে।
রাজধানীর স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের খাদ্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিউর রহমান মনে করেন, বিভাগ নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া উচিত। তা হলো-
১. বিষয়ভিত্তিক চাকরির বাজার এবং ওই বিভাগে পড়াশুনা সম্পন্ন করা ছাত্রছাত্রীদের বর্তমান অবস্থা।
২. চাকরি না পেলেও ওই বিষয়ে পড়াশুনার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ আছে কি-না।
৩. উক্ত বিভাগের শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা (কতজন ডক্টরেট ডিগ্রী), গবেষণাপত্র ও বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
৪. উক্ত বিভাগের সুযোগ সুবিধা বিশেষ করে গবেষণা সুবিধা ও একাডেমিক কাজকর্মের ধারাবাহিকতা।
৫. সর্বোপরি বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতা ইত্যাদি ।