পায়ের আকৃতি বলে দেবে আপনার ব্যক্তিত্ব
কথা, আচরণ, হাসি আমাদের ব্যক্তিত্বের অনেকটাই বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রশাস্ত্র অনুযায়ী আপনার শারীরিক গঠনও আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানান দেয়। আর তেমনই এক অংশ পায়ের আকৃতি। পায়ের বিভিন্ন আকার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায়।
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন দেশে এই নিয়ে বিশেষ চর্চা ও গবেষণা আছে। ভারতে সামুদ্রিকবিদ্যায় ব্যাপক ভাবে চর্চা করার প্রমাণ রয়েছে। আমাদের সবার পায়ে ৫ আঙুল থাকলেও পায়ের আকার কিন্তু মোটেও এক নয়। রোমান পা, পিজেন্ট বা বর্গাকার পা, গ্রিক পা এবং মিসরীয় পা। চার ধরনের পায়ের আকৃতি আপনার ব্যক্তিত্বের অনেক কিছুই বলে দেয়।
পৃথিবীতে যত মানুষ আছেন, তাদের বেশির ভাগের পায়ের আকার প্রধানত চার ধরনের।
রোমান পা: এই পায়ের আকারে বুড়ো আঙুল থেকে পর পর তিনটি আঙুল একই মাপের হয়ে থাকে। পায়ের বাকি দুটো আঙুল ক্রমান্বয়ে ছোট হয়। সমুদ্রশাস্ত্রে এসব পায়ের অধিকারী ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও দেহের আকারের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকে। এরা সাধারণত জন্মগতভাবেই ঘরের থেকে বাইরের জীবনে বেশি সময় দেন। এদের অনেকেই অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, ভ্রমণকারী ও আবিষ্কারক প্রকৃতির হয়ে থাকেন।এরা ভাল ব্যবসায়ী ও জনবক্তা হয়ে থাকে। এরা নিজের ক্ষতি স্বীকার করে অন্যের উপকার করে থাকে।
পিজেন্ট বা বর্গাকার পা: এই পায়ে পর পর পাঁচটি আঙুল দেখতে প্রায় একই মাপের হয়ে থাকে। ফলে পা দেখতে বর্গাকার লাগে। এই পায়ের আর একটা নাম হল পিজেন্ট পা। এই পায়ের অধিকারীরা অন্যের প্রয়োজনের প্রতি বেশি দৃষ্টি দিয়ে থাকে এবং অন্যের ব্যাপারে খুব স্পর্শকাতর প্রকৃতির হয়ে থাকে। এরা ধৈর্যশীল, বাস্তববাদী ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সমাজের বিভিন্ন কাজে এদের ডাক পড়ে সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে। মানুষের উপকার করতে ভালোবাসে। খুব স্পর্শকাতর প্রকৃতিরও হয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: করোনা-বন্যায় পেছাতে পারে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা
গ্রিক পা বা মর্টনস পা: এই পায়ের বৈশিষ্ট হচ্ছে, বুড়ো আঙুলের পর যে দ্বিতীয় আঙুলটি আছে, সেই আঙুলটি পায়ের সব আঙুলের থেকে আকারে বড় হয়ে থাকে। যার জন্য এই পা-কে মর্টনস পা বলে। প্রাচীন গ্রিসের মানুষ এই জাতীয় পায়ের অধিকারী ছিলেন। এই কারণে এরা সুন্দরের চর্চায় অন্য সব জাতীর থেকে এগিয়ে ছিল। সারা পৃথিবীর যত মানুষ আছে তার ১৩ শতাংশ (মতান্তরে ২২ শতাংশ) এই পায়ের অধিকারী। স্ট্যাচু অফ লিবার্টির এই আকারে পা দেখানো হয়েছে যেখানে পায়ের দ্বিতীয় আঙুলটি বড়। এই পায়ের অধিকারীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায়। এরা কর্তৃত্বপ্রিয় প্রকৃতির হয়ে থাকে। তাই এই পায়ের মানুষেরা জন্ম থেকেই নেতা হয়ে থাকে। এদের অন্য সকলকে ম্যানেজ করার ক্ষমতা বেশি থাকে এবং সবার সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকে। বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রাচীন রাজা বা রাজপরিবারের লোকদের এই পায়ের অধিকারী হতে দেখা যায়।পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এদের বুদ্ধি এবং আইকিউ অন্যদের থেকে বেশি হয়। ইউরোপে একটা বিশ্বাস চালু আছে, নীল চক্ষু, নীল রক্তের মতো গ্রিক পা-ও রাজকীয় ভাবের দ্যোতক। এরা শিল্পী, খেলোয়ার, ও বিভিন্ন পরস্পর বিরোধী সৃষ্টিশীল কাজে বিখ্যাত হয়ে থাকে।
একটা ভারতীয় লোকগাথায় আছে, ঈগলচক্ষু মাতা তার পুত্রদের বলছেন, বিয়ের পাত্রী খোঁজার সময় যে মেয়ের পায়ের দ্বিতীয় আঙ্গুল বড় এমন মেয়েকে তুমি তোমার পাত্রী হিসেবে নির্বাচন করবে। কারণ এরা সব ধরনের কাজের যোগ্য হয়ে থাকে। বহু মহাপুরুষ এই ধরনের পায়ের অধিকারী। এই পা-কে আবার ফ্লেম ফুট-ও বলে, কারণ এরা খুব মোটিভেটেড ও আবেগপ্রবপণ প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই কারণে এদের জীবন হয় খুব স্ট্রেসফুল। ধারণা করা হয়, সারাবিশ্বে সব মানুষের মধ্যে মাত্র প্রায় ১৩ শতাংশই এ ধরনের পায়ের অধিকারী হয়ে থাকেন।
মিসরীয় পা: মিসরের কথা শুনলেই কেন যেন রানি কিউপ্রেট্রার কথা মনে হয়। তার দেশের নাম অনুসারে এই পায়ের আকৃতির নামকরণ করা হয়েছে। এটাই সব থেকে কমন টাইপের পা। একটা পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, শতকরা ৫৫ ভাগ মানুষ এই জাতীয় পায়ের অধিকারী হয়ে থাকে। এই পায়ের বৈশিষ্ট হচ্ছে, এই পায়ের বুড়ো আঙুল সব আঙুলের থেকে বড় হয়ে থাকে। তারপর ক্রমান্বয়ে পর পর আঙুলগুলো ছোট হতে থাকে। সাধারণত প্রকৃতিগত ভাবে এরা গোপনচারিতা ভালবাসে। সহজে মনের কথা অন্যকে খুলে বলে না। এদের মধ্যে রহস্যগত ভাব রয়েছে। সহজে এদের প্রভাবিত করা যায় না। এরা সামাজিক ও বন্ধুত্বপূর্ন ব্যবহার সবার সঙ্গে করে থাকে। এরাও নানা ধরনের সৃষ্টিশীল কাজে জড়িত থাকে।