দুই নৌকায় পা দেওয়া যাবে না, ‘ঘ’ ইউনিটের প্রস্তুতি হবে কৌশলী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটে কারা ভর্তি পরীক্ষা দেয়? ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি হতে কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে? এখানে চান্স পাওয়া কতটা সহজ বা কঠিন? সকল বিষয়ে বিশদভাবে জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার জাহিন রাইন—
ঢাবিতে প্রতি বছর ৫টি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান এর জন্য ‘ক’ বিভাগ, কলা এর জন্য ‘খ’ বিভাগ ও বাণিজ্য এর জন্য ‘গ’ বিভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। এছাড়া ‘চ’ ইউনিট রয়েছে যেসব শিক্ষার্থী চারু ও কারুকলা বিষয়ে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে চায় তাদের জন্য। বাকি যে ইউনিটটি রয়েছে সেটি হচ্ছে ‘ঘ’ ইউনিট বা বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট।
এখানে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেমন ভর্তি হতে পারে, তেমনি বাণিজ্য ও কলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও তাদের বিভাগ পরিবর্তন করে পড়াশোনা করতে পারে অন্য কোনো বিভাগের বিষয়গুলোতে।
বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য- সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এসএসসি এবং এইচএসসিতে তাদের একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জন করে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা লাভ করতে হয়। তুমি যদি ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিতে চাও, প্রথমেই মিলিয়ে নাও তুমি এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য কিনা।
আরও পড়ুন: আগে বায়োলজি শেষে গণিত দাগাবেন, ভালো শুরুতে মেজাজ হবে ফুরফুরে
আশা করি সবাই সুস্থ শরীর ও মন নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছো। আর মনে একটু ভয় হওয়াই স্বাভাবিক, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার ফল তুমি পাবেই। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক ভয় কাজ করে থাকে। পড়া নিয়ে অনেক ধরনের সাজেশন অনেকে দিয়ে থাকে, কিন্তু পড়ার বাইরেও কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। আজকে সেইগুলো নিয়ে তোমাদের সাথে কথা বলব।
প্রথমেই তোমাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে যে তোমরা কোন বিভাগের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করবে। অনেকেই আছে নিজের বিভাগের পাশাপাশি ‘ঘ’ বিভাগের প্রস্তুতি নিয়ে থাক। যদি কারোর ক/খ/গ ইউনিটের প্রস্তুতি ভালো থেকে থাকে তাহলে এর পাশাপাশি ‘ঘ’ ইউনিটের প্রস্তুতি নিতে পারো।
তবে যদি একটাতে ভালো প্রস্তুতি না নিয়ে আরেকটার প্রস্তুতি নিতে চাও তাহলে আগে নিজের ভালোর জন্য মন স্থির করে নাও যে কোনটার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবে। আগে একটার জন্য নিজেকে ভালো করে তৈরি করে নিয়ে তারপরে সময় থাকলে সেটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা উচিত। অন্যথায় সেটা দুই নৌকায় পা দেওয়ার মত হয়ে যাবে অনেকটা। তবে ‘খ’ বিভাগ এবং ‘ঘ’ বিভাগের পরীক্ষার বিষয় একই হওয়ায় তোমরা একই সাথে দুইটি বিভাগের প্রস্তুতি নিতে পারবে।
এবারে আসো ‘ঘ’ ইউনিটে প্রস্তুতির ব্যাপারে। যেকোনো পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সবার আগে সেই পরীক্ষার পূর্ববর্তী প্রশ্ন-উত্তরগুলো দেখে নেওয়া অতি জরুরী। কেননা, এই প্রশ্নগুলো থেকেই অনেক অংশে কমন চলে আসে। এছাড়াও প্রশ্ন-উত্তরগুলো ভালোভাবে সমাধান করলে অনেক অংশেই বোঝা যায় যে কোথা থেকে কি রকম প্রশ্ন আসবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রমের অধীনস্থ শিক্ষার্থীদের সাধারণত ‘ঘ’ ইউনিটে বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান- এই তিনটি বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। আর ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের বাংলার পরিবর্তে অ্যাডভান্সড ইংরেজির উত্তর করতে হয়। এখানে আমি তোমাদের বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি নিয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
এবারের ভর্তি পরীক্ষায়ও এমসিকিউ এবং লিখিত এই দুইটি অংশে পরীক্ষা হবে। আর এই দুইটি অংশে আলাদা করে পাস মার্ক তুলতে হবে। এছাড়া এমসিকিউ অংশে তিনটি বিষয়েই আলাদা করে পাস মার্ক তুলতে হবে।
বাংলার ক্ষেত্রে প্রথমেই তোমাদেরকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীর পাঠ্যবই এবং নবম-দশম শ্রেনীর ব্যাকরণ বইটি ভালো করে পড়তে হবে। তোমাদের জন্য সমাস, কারক, ভাষা (কোনটি কোন ভাষার শব্দ), ধ্বনিতত্ত্ব, যুক্ত ব্যঞ্জন বিশ্লেষণ, শব্দ সম্ভার, পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ, সংখ্যাবাচক শব্দ, দ্বিরুক্ত শব্দ, বচন, পদাশ্রিত নির্দেশক, উপসর্গ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, পদ প্রকরণ, পদ পরিবর্তন, ক্রিয়ার কাল ও ভাব, বাক্য প্রকরণ, বাক্য রূপান্তর, বাচ্য, যতি বা ছেদচিহ্ন, শুদ্ধিকরণ এই বিষয়গুলো অতি জরুরী। অধিকাংশ সময় এই বিষয়গুলো থেকেই বেশির ভাগ প্রশ্ন চলে আসে।
ইংরেজির জন্য বেশি বেশি করে গ্রামার অনুশীলন করতে হবে। তাছাড়া কিছু টপিক যেমনঃ Parts of Speech, Determiner, Tense, Right Forms of Verbs, Subject Verb Agreement, Degree, Transformation, Voice, Narration এই গুলোর বেসিক ক্লিয়ার রাখতে হবে। প্র্যাকটিস ছাড়া ইংরেজি গ্রামারকে নিজের আয়ত্তে আনা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। তাই তোমাদেরকে কষ্ট করে হলেও বেশি বেশি করে গ্রামার প্র্যাকটিস করতে হবে।
সাধারণ জ্ঞানের শেষ কখনই হয় না। যার কারণে এটা পরতে অনেকের কাছে কষ্ট করে মনে হয়। পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারবে যে কোথা থেকে প্রশ্নগুলো মূলত হয়ে থাকে। এছাড়াও সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রতিদিন পত্রিকা পড়তে হবে এবং মাসে মাসে একটি করে কারেন্ট আ্যফেয়ার্সও পড়তে হবে। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি খাতায় নোট করে রাখতে হবে।
লিখিত অংশ তোমার পূর্বের শিক্ষা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই চলে আসে, তাই লিখিত নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। বিভিন্ন টপিক নির্বাচন করে তোমরা সেইগুলোর উপর লিখা অনুশীলন করতে পারবে।
সর্বশেষ নিজের স্বাস্থ্যর দিকে খেয়াল রাখতে হবে, অনেকেই বলে যে ১৬-১৭ ঘন্টা না পড়লে চান্স পাওয়া যাবে নাহ। এটা সম্পূর্ণ ভুল একটি কথা। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম তোমার ব্রেনকে এবং শরীরকে সুস্থ রাখবে যা তোমাকে পড়তে সাহায্য করবে। পড়তে পড়তে অসুস্থ হয়ে গেলে ক্ষতি তোমারই হবে। তাই পরিমিত ঘুম এবং খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পড়ালেখায় মনোনিবেশ করবে। সকলের জন্য শুভকামনা।