বিসিএসের ভাইভা: যে ১০ বিষয়ে গুরুত্ব দিবেন
- ড. মু. আলী আসগর
- প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২২, ০৩:৪৩ PM , আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২২, ০৪:২৫ PM
২০০ নম্বরের ওপর বিসিএসের ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) অনুষ্ঠিত হয়। অনেকেই বলে থাকেন, এই ভাইভা আসলে একটা ভাগ্যের খেলা। ভাগ্য আপনার সঙ্গে থাকলে আপনি হিরো, আর না থাকলে জিরো। তারপরও ভাইভা বোর্ডে যাওয়ার আগে আপনার প্রস্তুতি যদি ভালো থাকে তবে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আত্মবিশ্বাস যে কোনো কাজের অর্ধেক সাফল্য নিয়ে আসে।
তবে ভাইভায় ফেল বা কম নম্বর পাওয়ার মুখ্য কারণগুলো হলো— বেয়াদবি করা, নার্ভাস থাকা, অস্বাভাবিক আচরণ করা, বেশি জানার ভাব করা, উচ্চারণে আঞ্চলিকতা থাকা, ব্যর্থতা স্বীকার না করে একগুয়ে থাকা, না পারলেও উত্তর দেওয়া, সঠিক উত্তর কম দেওয়া ইত্যাদি।
বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতিতে যা গুরুত্বপূর্ণ
১) ভাইভায় সাধারণত পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যথা ক) নিজ জেলা, খ) নিজ পঠিত বিষয়, গ) মুক্তিযুদ্ধ ঘ) সংবিধান, ঙ) সাম্প্রতিক বিষয়াবলি। এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন।
২) যদিও সিলেকশন বোর্ড কিছু প্রশ্ন বাংলায় করতে পারে, তবে অধিকাংশ প্রশ্ন ইংরেজিতে করার সম্ভাবনাই বেশি। ইংরেজি বলার জন্য এখন থেকেই অনুশীলন করতে হবে। ইংরেজি পত্রিকা থেকে ইংরেজি vocabulary (শব্দভাণ্ডার) নিয়মিত বৃদ্ধি করাটা জরুরী। ভুল হলেও ক্যারিয়ার সচেতন বন্ধুদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা করতে হবে। যে কোন পেশায় প্রবেশে ও সফল হতে ইংরেজিতে দক্ষতা অপরিহার্য।
৩) ১০০% প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সাধারণ বিষয়াবলী অর্থাৎ যা জানা উচিৎ, তা না পারলে ভাইভা বোর্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উত্তর জানা না থাকলে বিনীতভাবে সরি বা দুঃখিত বলবেন। নার্ভাস হয়ে চুপ করে থাকবেন না ও ভুল উত্তর দিবেন না।
৪) কিছু কমন প্রশ্ন নিজের মতো করে মনে ইংরেজিতে সাজিয়ে নেবেন। উদাহরণস্বরূপ, নিজের পরিচয় বিস্তারিত, পরিবার, এলাকা/শহর, জেলা, বিসিএস দেওয়ার উদ্দ্যেশ্য, ১ম ও ২য় ক্যাডার পছন্দের কারণ, নিজ পঠিত বিষয় ও ১ম/২য় পছন্দের সম্পর্ক, বর্তমান অবস্থা বা পেশা, স্মৃতিবহুল ঘটনা, শখ (হবি), শৈশব-কৈশোর,কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ইত্যাদি। আপনি যে সাবজেক্টে অনার্স ও মাস্টার্স করছেন, তার সঙ্গে আপনার পছন্দের ক্যাডারের কোনো সম্পর্ক আছে কি না বা কীভাবে আপনার একাডেমিক জ্ঞান পেশাগত কাজে লাগাবেন, তার একটা উত্তর সাজিয়ে নেবেন। ভাইভা বোর্ডে এগুলো বলার সময় মুখস্থের মত বলবেন না।
৫) নিজ জেলা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। যেমন, জেলার নামকরণের কারণ, আয়তন, প্রতিষ্ঠার তারিখ সহ সাল, উপজেলা ও থানার সংখ্যা, খ্যাতিমান ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্ত, প্রধান কৃষিপণ্য, শিল্পকারখানা (যদি থাকে), নামকরা নদ-নদী ইত্যাদি।
৬) ব্রিটিশ শাসনের শেষ পর্যায়, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, এগার দফা, বঙ্গবন্ধ, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।
৭) সর্বশেষ বাজেট সম্পর্কে একটা ধারণা রাখতে হবে; যেমন, মোট বাজেটের আকার, কোন খাতে কত বরাদ্দ, কত ঘাটতি, দেশের কততম বাজেট ইত্যাদি। অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২০ বা সর্বশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে বাছাই করে বেশ কিছু তথ্য জেনে নেবেন। জিডিপিতে বিভিন্ন খাতের অবদান সহ বিদ্যুৎ, গ্যাস, পরিবেশ, অবকাঠামোগত তথ্যাবলী ইত্যাদি।
৮ ) বাংলাদেশ সংবিধান সম্পর্কে এ লেখায় পূর্বে আলোচিত বিষয়গুলো বিসিএস ভাইভায় বেশি জিজ্ঞাসা করা হয়।
৯) ফরমাল রুচিশীল পোশাক পরে ভাইভা বোর্ডে যাবেন। পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে চুল আদর্শ মান পর্যন্ত ছেঁটে রাখা উচিত। মেয়েদের ক্ষেত্রেও আদর্শ মান বজায় রাখা উচিত। সকলের জন্য পরিচ্ছন্নতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
১০) ভাইভা কক্ষে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় যথেষ্ট সচেতন থাকবেন। সাধারণ ভদ্রতাগুলো মেনে চলবেন। যেমন, অনুমতি নেওয়া, সালাম দেওয়া, বিনয়ী থাকা, ইত্যাদি। তবে অতিবিনয়ী হয়ে কাঁচুমাচু করবেন না। কক্ষে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় সালাম সকলকে দেবেন না। শুধুমাত্র বোর্ডের সভাপতিকে লক্ষ্য করে একবার দেবেন। গলার স্বর অধিক উচ্চ বা অধিক নিম্ন না করে স্টান্ডার্ড মান বজায় রেখে প্রশ্নের উত্তর দিবেন। মাথা প্রয়োজন অনুযায়ী মুভ করে প্রশ্নের উত্তর দিবেন। কথোপকথনের সময় হাত নাড়াবেন না এবং পা ঝাঁকাবেন না। চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসতে যাবেন না ও লেখা ছাড়া টেবিলে হাত হেলান দিয়ে বসবেন না।
লেখক: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ ও সাবেক প্রাধ্যক্ষ, মতিহার হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়