আকর্ষণীয় সিভি লেখার কৌশল

সিভি লেখার কৌশল
সিভি লেখার কৌশল  © টিডিসি ফটো

বলা হয় সিভি হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীর প্রতিচ্ছবি। একটি সুন্দর সিভি আপনাকে চাকরিদাতর কাছে সুন্দরভাবে তুলে ধরবে। তাই যার সিভি যত ভালো, তিনি তত এগিয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চাকরি জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত অনেক জরুরি একটা বিষয়। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এটির গুরুত্ব সবথেকে বেশি। বাংলাদেশে চাকরির যে পরিমান চাহিদা তার তুলনায় চাকরির খাত অনেক কম। এজন্য বেশ ভালো রকমের প্রতিযোগিতা করেই একজনকে চাকরি পেতে হয়। এ এক্ষেত্রে একটি মানসম্মত সিভি এই প্রতিযোগিতায় আপনাকে অনেকটা এগিয়ে রাখতে পারে।

প্রথম দেখাতেই যদি সিভিটা আপনার এমপ্লয়ারএর পছন্দ না হয়, আপনার ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পাওয়ার সুযোগ খুবই কম। অনেক এমপ্লয়ার এক পলক দেখেই সিভি টা পছন্দ না হলে সেটিকে রিজেক্ট করে দেয়। অতএব বলা যায়, একটি মানসম্মত সিভি আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: নানা মারা যাওয়ার খবরেও অনশন ভাঙেনি শাবিপ্রবির রুবি

অনেকেই মনে করেন, সিভি বড় ও ভারী হলে ভালো; কিন্তু এ ধারণা ভুল। বরং সিভিতে অল্প কথায় নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে হয়। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, নিয়োগকারীরা একটি সিভি দেখতে এক মিনিটের কম সময় ব্যয় করেন। ব্রিটিশ মানবসম্পদ (এইচআর) বিশেষজ্ঞ ডেভিড ডিসুজা ও রুথ কর্নিশের মতে, সিভি দেখার পর একজন প্রার্থীকে তিনটি কারণে সাক্ষাৎকারে ডাকা হয় না। কারণ তিনটি হলো—গতানুগতিক ধরনের সিভি, ভুল বানান ও মিথ্যা তথ্য। তাই সময় নিয়ে সঠিকভাবে তৈরি করুন নিজের সিভি। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান ও সিভি লাইব্রেরি অবলম্বনে নিখুঁত, সুন্দর ও আকর্ষণীয় সিভি লেখার কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো।

নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা: সিভির শুরুতে নিজের নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা থাকা উচিত। ‘কারিকুলাম ভিটা’ বা ‘সিভি’ দিয়ে শিরোনাম করা ঠিক নয়। নিজের নাম শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যোগাযোগের ঠিকানা স্পষ্ট করে লিখতে হবে। ই-মেইল ঠিকানা এবং মুঠোফোন নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই অংশে লিংকডইন প্রোফাইলের লিংক যোগ করলে ভালো। তবে লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য যেন হালনাগাদ থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্প্রতি তোলা ঝকঝকে ছবি ব্যবহার করতে হবে। ব্যক্তিগত প্রোফাইল

সিভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যক্তিগত প্রোফাইল। আপনার কর্মজীবনের লক্ষ্য এবং আপনি প্রতিষ্ঠানকে কী দিতে পারবেন, তা কয়েক লাইনে লিখতে হবে। আপনার ব্যক্তিগত বক্তব্য যেন সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন। দুই-তিনটি বাক্যের চেয়ে বেশি বাক্য ব্যয় করা অনুচিত।

পেশাগত অভিজ্ঞতা: আপনার আগের চাকরি, ইন্টার্নশিপ এবং কাজের অভিজ্ঞতা বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। কোথায় কোথায় চাকরি করেছেন, তা ক্রমানুসারে লিখুন। সদ্য স্নাতক পাস করা হলে ইন্টার্নশিপ যেখানে করেছেন, তার বিস্তারিত তুলে ধরুন। চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে সর্বশেষ যেখানে চাকরি করেছেন, সেটি লিখে বাকি প্রতিষ্ঠানের নামগুলো পর্যায়ক্রমে লিখুন। প্রতিষ্ঠানের নাম, সেখানে আপনার কাজের বিবরণ এবং আপনার অর্জন লিখতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠানে কত দিন কাজ করেছেন, সেটিও উল্লেখ করুন।

আরও পড়ুন: পরিমণির গায়েহলুদের ছবি প্রকাশ্যে

শিক্ষা: পেশাগত অভিজ্ঞতা অংশের মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখার ক্ষেত্রে আপনার সর্বশেষ ডিগ্রি যে প্রতিষ্ঠান থেকে, সেটি দিয়ে শুরু করে ক্রমানুসারে মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের নাম লিখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের পাশে পাস করার সাল এবং জিপিএ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল না পেয়ে থাকলে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ লেখা যেতে পারে।

প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা: যারা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন, তাদের জন্য এই অংশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাঁদের পূর্ববর্তী কোনো চাকরি করার অভিজ্ঞতা নেই। যিনি সদ্য স্নাতক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার তথ্যাদি বেশি সিভিতে যুক্ত করতে পারবেন, তিনি বাকিদের চেয়ে তত এগিয়ে থাকবেন। প্রশিক্ষণ ও কর্মশালাগুলো লেখার ক্ষেত্রে বিষয়, তারিখ ও স্থান উল্লেখ করতে হবে।

আকর্ষণীয় শখ: আমি বাইরে যাই, প্রকৃতি উপভোগ করি—এ ধরনের শখ যোগ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এগুলো বললে আপনি ব্যক্তি হিসেবে কেমন, তা ফুটে ওঠে না। বরং এমন কিছু শখের কথা লিখুন, যা আপনার নিষ্ঠা ও একাগ্রতা তুলে ধরে। দলগত যেকোনো ইভেন্ট ভালো শখ হতে পারে।

আরও পড়ুন: ছাত্র জীবনে অভিজ্ঞতা ছাড়াই আয় করার ৫ পদ্ধতি

ভাষা দক্ষতা: দেশে চাকরির জন্য বাংলা ও ইংরেজি জানা আবশ্যক। প্রমিত বাংলা ভাষা শেখার কোনো কোর্স করে থাকলে তা উল্লেখ করতে পারেন। আর ইংরেজি ভাষা দক্ষতার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস, টোয়েফল ও পিটিই পরীক্ষায় অংশ নিলে তার স্কোর লিখুন। এ ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানা থাকলে সেটিও উল্লেখ করুন।

কম্পিউটার দক্ষতা: এখন প্রায় সব চাকরির জন্য কম্পিউটার দক্ষতা আবশ্যক। সাধারণত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট জানা বাধ্যতামূলক ধরা হয়। এ ছাড়া ফটোশপ বা ভিডিও এডিটিং জানা থাকলে উল্লেখ করতে পারেন। এ বিষয়ে কোথাও প্রশিক্ষণ নিলে সাল–তারিখসহ উল্লেখ করুন।

রেফারেন্স: প্রার্থীর পরিচিত যেকোনো পেশার ব্যক্তির নাম রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। তবে সদ্য স্নাতকেরা তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের রেফারেন্স হিসেবে দিতে পারেন। যাঁর রেফারেন্স দেবেন, অবশ্যই তাঁর অনুমতি নিতে হবে। তাঁর নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে হবে।

অঙ্গীকারনামা: সিভিতে কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না। অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করতে হবে, আপনার সব তথ্য সঠিক ও নির্ভুল। লেখার নিচে আপনার স্বাক্ষর থাকতে হবে।

বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে-

ফন্টের ব্যবহার: টাইমস নিউ রোমান, অ্যারিয়্যাল বা ভারদানা ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন। ফন্ট সাইজ ১১–এর কম হওয়া যাবে না। মাঝেমধ্যে বোল্ড এবং হেডার অপশনও ব্যবহার করুন। তবে অবশ্যই কালো রঙ ব্যবহার করতে হবে।

আরও পড়ুন: আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়টি ভালো নেই: মুহম্মদ জাফর ইকবাল

বিশেষণ এড়িয়ে যান: পরিশ্রমী, মনোযোগী, উৎসাহী—এ ধরনের বিশেষণগুলো এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে কিছু অর্থবহ শব্দ ব্যবহার করুন। যেমন জবাবদিহি, লক্ষ্য ও অর্জন।

ছোট রাখুন: সিভি সংক্ষিপ্ত রাখুন, তবে ছোট করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা মুছে ফেলা যাবে না। গতানুগতিক নিয়মে দুই পৃষ্ঠায় সিভি শেষ করতে বলা হয়। আপনি কোন ধরনের চাকরিতে আবেদন করছেন, তার ওপর পৃষ্ঠা বাড়তেও পারে। তবে দুই পৃষ্ঠার সিভি দেখলে নিয়োগকর্তারা সাধারণত খুশি হন।

নির্ভুল হোন: নিয়োগকারীরা আপনাকে ভুলের ওপর বিচার করবে। সেটা হতে পারে বানানের ভুল, সিভির কাঠামোর ভুল অথবা বিরামচিহ্নের ক্ষেত্রে। তাই সিভি লেখার সময় সতর্ক থাকুন। কম্পিউটারে লিখলে স্বয়ংক্রিয় সংশোধন অপশন ব্যবহার করুন। সিভি তৈরি করার পর ভুল এড়াতে আরেকজনকে দিয়ে পড়িয়ে নিন।


সর্বশেষ সংবাদ