ভর্তি পরীক্ষায় আমি যেভাবে ‘ভুল না দাগানোর’ অভ্যাস করেছি
- মোহাম্মদ হারিসুল ইসলাম হিরো
- প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২১, ০৪:৩৮ PM , আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২১, ০৮:০৪ PM
একটা তথ্য দিয়েই শুরু করি। এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ইউনিট মিলিয়ে মোট ভর্তিচ্ছুর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮ জন। যেখানে মোট আসন সংখ্যা ১৮৮৯। এর অর্থ হচ্ছে, এবছর প্রতি আসনের বিপরীতে লড়ছেন ১৬৩ জন।
বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের সব থেকে বেশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়। ভিন্ন ধাঁচের প্রশ্ন প্যাটার্নের জন্য জাবির প্রশ্নপত্র বরাবরই আলোচিত। চূড়ান্ত প্রস্তুতির কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলব বলে আজকের এই লেখা।
শেষ সময়ের প্রস্তুতির কিছু দিক
জাবির জন্য স্পেশালাইজড মডেল টেস্টের বইগুলো দ্রুত সংগ্রহ করে সলভ করা শুরু করে দিন। মনে রাখবেন, ঢাবি আর জাবির প্রস্তুতির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ভর্তিচ্ছুদের একটা বড় অংশ ঝরে পড়ে ভুল দাগানোর কারণে। এই কয়দিনেই ‘ভুল না দাগানোর’ অভ্যাসটা তৈরি করে ফেলুন।
অনেকেই মনে করেন, হলে গিয়েই একবারে ভুল না দাগিয়ে সব ঠিক দাগিয়ে ফেলবেন। কিন্তু এটা একটা বড় অনুশীলনের বিষয়। আর এজন্য আপনাকে ‘ভুল না দাগানোর’ অভ্যাসটা এখনই গড়ে তুলতে হবে। আমি যেভাবে এগিয়েছিলাম-
জিইউ টেস্ট নামের একটা বই থেকে অনেকগুলি মডেলটেস্ট সলভ করেছিলাম। প্রতিটি মডেল প্রশ্নের ওপর তারিখ, সঠিক দাগানোর পরিমাণ আর ভুল দাগানোর পরিমাণ নোট করে রাখতাম। মাঝে মধ্যেই যাচাই করে দেখতাম, সঠিক দাগানোর পরিমাণ কতটা বাড়ল আর ভুল দাগানোর পরিমাণ কতটা কমলো।
পড়ুন: জাবি ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ, শুরু ৭ নভেম্বর
এভাবে অভ্যাস তৈরি করার ফল হিসাবে পরীক্ষার হলে ভুল দাগানোর পরিমাণটা অনেকখানি কমিয়ে আনতে পেরেছিলাম।
পরীক্ষার ঠিক আগে আগে জাবির জন্য স্পেশালাইজড সাম্প্রতিক ম্যাগাজিনগুলো, প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কিছু মডেল টেস্ট আসবে, সেগুলো দেখার চেষ্টা করবেন। আর এখন যেহেতু নতুন বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করার আর সুযোগ নেই, সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের পত্রিকা পড়ার সময়টা আপনি সাম্প্রতিক ভ্যাকসিনের চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
গাইড বইগুলো বিস্তারিতভাবে এখন না পড়ে মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় যে বিষয়গুলোতে আপনার সমস্যা হচ্ছে, নম্বর কম আসছে, সে জায়গাগুলো বারবার দেখে নিন।
জাবির সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নগুলো বিষয়ভিত্তিক হওয়ায় ভর্তিচ্ছুদের কাছে বেশ কনফিউজিং লাগে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইটি হতে পারে দারুণ একটা সমাধান। পাশাপাশি ‘খন্দকার’স জিকে’ বইটি শেষ সময়ের প্রস্তুতির জন্য খুবই ভালো একটি বই হতে পারে। পারলে এটা কয়েকবার শেষ করুন। বিশেষ বিশেষ অংশগুলো দাগিয়ে রাখুন, যেন পরীক্ষার আগের রাতে (এবং সকালে) আপনি সেগুলো দেখে যেতে পারেন।
ম্যাথের কিছু প্রশ্ন কিছু ইউনিটে প্রায় সব সময়ই আসে। যেমনঃ ঐকিক নিয়মের ম্যাথগুলো, অনুপাত, বীজগণিতের সূত্রের ওপর ভিত্তি করে কিছু প্রশ্ন আসে, জ্যামিতির কোণের ওপর কিছু প্রশ্ন থাকে, সংখ্যাতত্ত্বের ওপরও বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে—এই বিষয়গুলোর ওপর শেষ সময়ের দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ৮ম শ্রেণির গণিত বইটা ফলো করতে পারেন। বেশী প্র্যাক্টিস ও দুর্দান্ত শর্টকাট টেকনিকগুলোর জন্য ‘জাহাঙ্গীরনগরস ম্যাথ’ বইটা দেখতে পারেন।
আইকিউ-এর জন্য ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন কুইজগুলো সলভ করে ফেলুন, দারুণ কাজে দেবে। আজকাল দৈনিক পত্রিকাগুলোতে কুইজ দেয়া হয়, সেগুলোও সলভ করতে পারেন।
বাংলার জন্য বাংলা বোর্ড বই আর নবম-দশম শ্রেনীর এমসিকিউ বই দুটা চোখ বুলিয়ে নিন। ইংরেজিতে ভাল করতে হলে ভোকাবুলারি ও লিটারেচার অংশে ভাল করেত হবে। এজন্য GRE Hi Frequency Word List ফলো করতে পারেন।
পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু প্রস্তুতি
প্রবেশপত্রটির একাধিক প্রিন্ট করে রাখুন। এতে কোনো করণে এক কপি নষ্ট হলে কিংবা ছিড়ে গেলে অন্য কপিটা আপনাকে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে বাঁচাবে। ম্যাথের রাফ করার জন্য পেছনের সাদা অংশটিও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সতর্কতার জন্য অবশ্যই পরিদর্শকের অনুমতি নিয়ে নিতে হবে।
ম্যাথে খুব ভালো প্রস্তুতি থাকলে, একদম শুরুতে উত্তর দেবেন, অন্যথায় আমার মতো শেষেও উত্তর দিতে পারেন। মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাথগুলো সলভ করবেন।
আইকিউ-এর প্রশ্নগুলো এমন হয় যে এর প্রতিটি অপশনকেই সঠিক উত্তর বলে মনে হয়, এক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্কতার সঙ্গে শুধু সঠিক উত্তরটিই দাগানো উচিত। কনফিউজিং প্রশ্নগুলো বাদ দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে পুনরায় দ্রুত সেই প্রশ্নটা খুঁজে পাওয়ার জন্য একটা ছোট দাগ দিয়ে রাখুন প্রশ্নে।
পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে হলে যাবেন এবং আপনার পাশের (সামনে, পেছনে, ডান ও বামের) মানুষের সঙ্গে অবশ্যই কম কথা বলার চেষ্টা করবেন।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে, ‘মানুষের চেষ্টা যেখানে গিয়ে শেষ হয়, সৃষ্টিকর্তার সাহায্য সেখান থেকে শুরু হয়।’ তাই শেষ এই সময়ে অপ্রয়োজনীয় ইন্টারনেট ও সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেই দেখুন না একবার। ৬৯৭ একরের এই সবুজ প্রান্তর আপনাকে স্বাগত জানাবে।
আর একটা ব্যাপার হলো, কারও বলে দেওয়া নিয়মগুলো কোন লিখিত সংবিধান নয়, আপনি নিজ থেকে যে পথটাকে অনুসরণ করে প্রস্তুতি নেবেন, ভবিষ্যতে হয়তো সেই পথটাই অন্য অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা রইল।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়