সাড়ে ৩২ হাজার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ: ৬০ দিনের শর্টকাট সাজেশন

  © টিডিসি ফটো

দেশ স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে ২০২১ সালের সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। ২০২১ সালের প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পদে ৩২ হাজার ৫৭৭ জন (সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২৪ অক্টোবর, ২০২০) শিক্ষক নিয়োগ দেবে বলে জানা গেছে।

এই ৩২ হাজার ৫৭৭টি পদের জন্য প্রায় ১৩ লাখ চাকরি প্রত্যাশী আবেদন করেছে। তার মানে প্রতি একটি পদের জন্য ৪০ জন চাকরী প্রার্থী প্রতিযোগিতা করবে। আরো সহজভাবে বললে, গড়ে প্রতি ৪০ জনে ১ জনে চাকরি পাবে।

এখন অনেকের মনে এমন প্রশ্ন উদয় হতে পারে-

১। এতো জনের মাঝে আমার এই চাকরিটা কি পাওয়া সম্ভব? (আবার, কেউ কেউ এটাও ভাবতে পারেন, এতো জনের মাঝে এই চাকরিটা আমার হবেই না!)
২। আবার কারো মনে এই প্রশ্ন উদিত হতে পারে, এই এতো অল্প সময়ে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব?
৩। আবার কেউ কেউ বলতে পারেন, যদি এতো অল্প সময়ে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভবপর হয়, তাহলে সেটা কীভাবে নেবো?

আমি চেষ্টা করবো উপরিউক্ত প্রশ্নগুলো উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেয়ার জন্য-

১। আপনি ভুলে যান কতজন চাকরির পরীক্ষা দেবে সেই সংখ্যাটির কথা। আপনি শুধু নিজের প্রতি এই আস্থা রাখুন যে, ৩২ হাজার নয় যদি ৩২ জনও নেয় তাহলে তাদের মধ্যে আমি একজন থাকবো, ইনশাআল্লাহ। এই কথা বলছি এই জন্য যে, মোট যে ১৩ লাখ প্রার্থী চাকরি জন্য আবেদন করেছে তার অধিকাংশই আছে এমন যে, কেবল চাকরি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জন্য শুধু এই পরীক্ষাটা দিচ্ছে; চাকরি পাওয়ার জন্য নয়।

আবার কিছু এমন আছে শুধু পরীক্ষার জন্যই পরীক্ষা দেয়া, তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বা প্রস্তুতি নেবে না। আবার কিছু এমন আছে যে, প্রস্তুতি নেয়ার ইচ্ছে আছে এবং চাকরিটা পাওয়ার ইচ্ছে আছে কিন্তু কী পড়বে আর কী বাদ দেবে; কোন টপিকটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোন টপিক কম গুরুত্বপূর্ণ সেটি না বোঝার কারণে ২ মাসে এই পরীক্ষাটির ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে না। অর্থাৎ কী পড়বে আর কী বাদ দেবে সেটা বুঝে ওঠতে ওঠতেই পরীক্ষার তারখি চলে আসবে। তখন স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা খারাপ হয়ে যাবে ভালো প্রস্তুতির অভাবে।

তাহলে বুঝা গেল- এই ১৩ লাখ চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে মূলত ১ লাখ থেকে দেড় লাখের মধ্যে মূল প্রতিযোগিতা হবে। সেখান থেকে প্রতি পদের জন্য গড়ে ৩ জনকে ভাইভাতে ডাকা হয়, তাহলে (৩৩৫৭৭*৩) ৯৭ হাজার ৭৩১ ভাইভার জন্য কল পাবে বলে আশা করা যায়। তবে, ভাইভার জন্য ডাক পাওয়া মানেই, চাকরি হয়ে যাওয়া নয়। প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনেকে ২-৩ বার ভাইভা দিয়েও চাকরি পায়নি। এমন অনেক নজির আছে। এর মূল কারণ এমসিকিউ প্রশ্নে ভালো নাম্বার তুলতে না পারা। মানে কোনোভাবে পাশ করা যাকে বলে। চাকরি পেতে হলে এমসিকিউ প্রশ্নে বেশি নাম্বার তুলতে হবে। এটাই মূল পরীক্ষা। এমসিকিউ পরীক্ষায় ভালো নাম্বার তুলতে পারলে ভাইভা খুব বেশি ভালো না হয়ে মোটামুটি হলেও চাকরি পাওয়া সম্ভব।

২। হ্যাঁ, এতো অল্প সময়ের মাঝে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। (মূলত, যাদের বাংলা ব্যাকরণ, English Grammar ও গণিতের উপর কিছুটা পড়াশোনা আছে তাদের জন্য এই বিষয়টা সহজসাধ্য। তবে ভালোভাবে এখন থেকে সময়কে কাজে লাগালে অন্যদের জন্যও অসম্ভব নয়। কারণ, ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বইয়ে কঠিন বিষয়গুলো একদম বেসিক থেকে সহজ করে দেয়া আছে। মনোযোগ দিয়ে পড়লে নিজে নিজ্বি সহজে বুঝতে পারবেন, আশা করি।)

৩। এবার আসি মূল কথায়, যেভাবে ২ মাসে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করবেন-

(ক) প্রথমে আপনি ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বই থেকে ৬****** (6 Star), ৫*****(5 Star), ৪**** (4 Star) এবং ৩*** (3 Star) দেয়া টপিকগুলো কমপক্ষে ৩ বার ভালো করে শেষ করুন। কারণ, আমরা বিগত প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন Analysis করে দেখেছি যে, এই টিপকগুলো থেকে পরীক্ষায় অধিকাংশ প্রশ্ন কমন আসে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে শেষ করতে পারলে আপনার কনফিডেন্স লেভেল অনেক বেড়ে যাবে এবং পরীক্ষায় নিয়ে আপনার দুঃশ্চিন্তা অনেকাংশেই কেটে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশের প্রথম সাজেশনভিত্তিক প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ গাইড ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বইয়ে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন Analysis করে দেয়া হয়েছে কোন টপিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আর কোন টপিক কম গুরুত্বপূর্ণ; কোন টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি আসে আর কোন টপিক থেকে প্রশ্ন কম আসে।

মনে রাখবেন, এবার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিয়োগ পরীক্ষা। এতো বড় সুযোগ ভবিষ্যতে পাবেন কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আগে শুধু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার পড়ুন, যেন পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার এইজন্য পড়তে হবে যে, যেন পরীক্ষায় কমন পড়লে সঠিক উত্তর মিস না হয়। বিগত সালের প্রশ্ন Analysis করে দেখা গেছে ম্যাক্সিমাম প্রশ্নই কমন টপিক থেকে আসে। কিন্তু পরীক্ষার হলে কনফিউজড হওয়ার কারণে ভুল উত্তর দিয়ে আসে; আর পরীক্ষায় পাশ না করতে পারার আফসোস থেকে যায়। আফসোস করে আর বলে, ইশ! এতো সহজ প্রশ্ন আসলো তারপরও ভালোভাবে উত্তর করতে পারলাম না।

প্রশ্ন কিন্তু সবসময় সহজই হয় দুই-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া। কিন্তু পরীক্ষার আগে উলটা-পালটা সব পড়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার পর মাথা ঘুলিয়ে যায় তখন প্রশ্ন কঠিন মনে হয়, পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পর আবার সেই প্রশ্নই অনেক সহজ মনে হয়।

(খ) এরপর পর্যায়ক্রমে ২** (2 Start) দেয়া টপিকগুলোভাবে শেষ করুন কমপক্ষে ২ বার।
(গ) তারপর বিসিএস প্রিলির ৪২তম-৩৫তম পর্যন্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো ব্যাখ্যাসহ ভালো করে পড়বেন (তবে ৪২তম-১০তম পর্যন্ত পড়তে পারলে আরো ভালো হয়)। কারণ বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্ন থেকে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। পাশাপাশি প্রতিদিন ২-৩টি করে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালে প্রশ্ন সমাধান করুন (‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বইয়ের একদম প্রথম দিকে বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান দেয়া আছে)

(ঘ) এরপর আপনি পরীক্ষা হলে পরীক্ষার দেয়ার আগে নিজে নিজে বাসায় বসে ঘড়ির সময় মডেল টেস্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে দেখুন, আপনি কত পান। মডেল টেস্ট বইটি বিষয়ভিত্তিক হলে ভালো। মান – বাংলা-২০, ইংরেজি-২০, সাধারণ-২০, গণিত-২০; এভাবে আলাদা করে দেয়া থাকলে। কারণ, মূল প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বর্তমানে এই প্যাটার্নে প্রশ্ন হয়। এইক্ষেত্রে “Authentic Publication” থেকে প্রকাশিত এমন বিষয়ভিত্তিক আলাদাভাবে করে দেয়া ‘Authentic Model Test & Short Suggestion’ মডেল টেস্ট বইটি দেখতে পারেন। এই মডেল টেস্ট বইটি কেবল পরীক্ষায় আসার মতো ৫০টি পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট সন্নিবেশ করা হয়েছে এভাবে বিষয়ভিত্তিক আলাদাভাবে প্রশ্ন আকারে।

ফলে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন, আপনি কোন বিষয়ে বেশি আর কোন বিষয়ে কম নম্বর পাচ্ছেন। যে বিষয়ে কম নাম্বার পাবেন, পরীক্ষার আগে সেই বিষয়টি ভালোভাবে ঝালিয়ে নিয়ে পারলে আশা করি ভালো করতে পারবেন।

(ঙ) আপনি ‘Authentic Model Test & Short Suggestion’ বই থেকে মডেল টেস্টগুলো ৫০ মিনিট সময় ধরে দিন। পরীক্ষার হলে যদিও সময় ৬০ মিনিট, সেখানে কিছু সময় সিস্টেমের জন্য নষ্ট হয়। তাই বাসায় আরেকটু কম সময় ধরে পরীক্ষা দিতে হবে। অন্তত ১০টি মডেল টেস্ট দেয়ার পর উত্তরপত্রের সাথে মিলিয়ে দেখুন আপনি মোট কত নাম্বার পান নেগেটিভ নাম্বার মাইনাস করার পর। যদি আপনি দেখেন যে মডেল টেস্টে ৭০ বা তারও বেশি নাম্বার পান তাহলে আপনার প্রস্তুতি ভালো হয়েছে বলে ধরে নেবেন। একইসঙ্গে পরীক্ষায় ভালো করবেন বলে বিশ্বাস রাখা যায়।

(চ) যদি মডেল টেস্টে ৫০ থেকে ৬৯ নাম্বার পান তাহলে ধরে নেবেন প্রস্তুতি মোটামুটি হয়েছে, চাকরি পেতে হলে আরো ভালো করতে হবে। আর যদি মডেল টেস্টে ৫০ নাম্বারের কম পান ধরে নেবেন আপনার প্রস্তুতি অনেক খারাপ, আরো ভালো করে পড়তে হবে। আর মডেল টেস্টে যে সাবজেক্টে কম নাম্বার পাচ্ছেন সেখানে জোর দেবেন, বেশি বেশি খাতায় লিখে লিখে পড়বেন।

(ছ) পড়ার টেবিলে বসে ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। তাহলে পড়ায় মনোযোগ বেশি আসবে এবং পড়া মনে বেশি থাকবে। এইভাবে প্রস্তুতি নিলে আশা করি ভালো ফল পাবেন।

মনে রাখবেন, ‘কম পড়বেন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গুছিয়ে পড়বেন।’ আরেকটি কথা মনে রাখবেন, ‘একটি ভালো বই আর আরেকটি ভালো সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে আপনার জীবন।’ ভুলে গেলে চলবে না- এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, নিজের সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে।

সকল সৎ পরিশ্রমীর জন্য শুভ কামনা রইল।
ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।


সর্বশেষ সংবাদ