গুচ্ছ ভর্তিযুদ্ধ: স্বপ্ন পূরণে চাই কৌশলী প্রস্তুতি

  © টিডিসি ফটো

ছোট থেকেই একজন শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখতে শুরু করে যে বড় হয়ে সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট কিংবা উচ্চ পদস্থ কোন কর্মকর্তা হবে। সুতরাং সেই স্বপ্নকে লালন করে দিনের পর দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমও করে চলে একজন শিক্ষার্থী। ফলে উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে তাকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণের মাধ্যমে পৌঁছাতে হয় কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্যে।

তবে বহুল প্রতিযোগিতার সেই মঞ্চে পৌঁছাটাও অতটা সহজ কথা নয়। যেখানে পৌঁছাতে একজন শিক্ষার্থীকে পুড়তে হয় অনেক কাটখোট্টা, করতে হয় হাড়ভাংগা পরিশ্রম এবং হতে হয় সু-কৌশলী ও বহুমুখী গুণের অধিকারী। ফলে হাজারো শিক্ষার্থীদের ভিড়ে নিজের যোগ্যতাবলে একজন শিক্ষার্থীকে পৌঁছাতে হয় সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

প্রতিবারের ন্যায় এবারো সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলেছে দেশের হাজারো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। যাদের স্বপ্ন কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পছন্দের বিষয়ে উচ্চ ডিগ্রী অর্জন। সেই সব শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে এবছর দেশের অন্যতম বিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা।

এর আগে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিলেও এবছর বিশ্ব মহামারী করোনার বিরূপ পাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে নিজ যোগ্যতানুসারে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। ফলে শিক্ষার্থীদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।

তবে গুচ্ছ পদ্ধতির যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধারও কমতি নেই। গুচ্ছতে পরীক্ষা দিলে ইচ্ছে করলেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হবে না। পছন্দের সাবজেক্টও পাওয়াটাও কষ্টকর হবে। কেননা, এ বছর করোনার জন্য অটোপাশ দিয়েছে সরকার। যার ফলে এবছর তুলনামূলক ভাবে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রায় সবারই ভালো। সুতারাং যাদের জিপিএ কম তারা হয়তোবা প্রাথমিক সিলেকশনেই বঞ্চিত হবে। কারণ পরীক্ষার্থীদের তুলনায় আসন সংখ্যা বহুগুণ সীমিত।

তবুও যারা চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য মনোনীত হবে তাদেরকে অবশ্যই অভিনন্দন। তবে মনে রাখতে হবে চূড়ান্ত মনোনয়ই কিন্তু চান্স পাওয়া নয়। কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হলে অবশ্যই নিষ্ঠার সাথে পড়াশোনার পাশাপাশি হতে হবে সু-কৌশলী। সময়ের মূল্য দিতে হবে যথাযথ ভাবে এবং করতে হবে কঠোর পরিশ্রম। কেননা পরিশ্রম ছাড়া কখনোই সফলতা আসেনা।

গুচ্ছে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে হবে যেভাবে

গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার জন্য এখনো প্রায় দুই থেকে আড়াই মাস সময় আছে। কোন পরীক্ষার্থী যদি এই সময়টুকু সঠিকভাবে কাজে লাগায় তবে অবশ্যই তার চান্স হবে। অনেকেই প্রশ্ন থাকতে পারে দৈনিক কত ঘন্টা করে পড়লে চান্স পাবো? তাদের উদ্দেশ্য বলবো,পড়াশোনা ধরাবাঁধা ঘন্টায় সীমাবদ্ধ না রেখে কতটুকু পড়লে মনে রাখা যায় সেটুকু সময় অবশ্যই দিতে হবে। তবে ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীকে কৌশলী হতে হবে।

এজন্য অন্যদের থেকে নিজের প্রস্তুতি অনেকটা আলাদা হবে। প্রতিদিন বোর্ড বইয়ের পাশাপাশি বাজারে ভর্তি সহায়ক বইগুলো পড়তে হবে। এক্ষেত্রে গুচ্ছের জন্য ‘গুচ্ছ চ্যালেঞ্জ’ এবং প্রশ্নব্যাংকের জন্য ‘প্রশ্ন ব্যাংক চ্যালেঞ্জ’ বইটি পড়লে তুলনামূলক ভাবে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আমি আশাবাদী।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে যে টপিকগুলো আয়ত্ত করা প্রয়োজন

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে বাংলা, ইংরেজি ও তথ্য প্রযুক্তি থেকে প্রশ্ন হবে। সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে এই বিষয়গুলোতে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে এবং চান্স পাওয়ার জন্য অবশ্যই কিছু নির্ধারিত টপিক অবশ্যই আয়ত্তে রাখতে হবে।

বাংলা ১ম
বাংলা প্রথম পত্র বইটা ভালোভাবে রিভিশন দিয়ে শেষ করে ফেলতে হবে এবং রুটিন করে প্রতি সপ্তাহের একবার হলেও বই থেকে মডেল টেস্ট দিতে হবে। কেননা এ খান থেকেই অন্তত ৪-৫ টা প্রশ্ন হবে।

বাংলা ২য়
সমাস, সন্ধি, কারক, শব্দ, প্রকৃতি-প্রত্যয়, পারিভাষিক শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ ও সমার্থক শব্দ এই বিষয়গুলোতে বেশি নজর দেযার পাশাপাশি পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো পড়তে হবে।

ইংরেজি
Right form of verb, Preposition, voice change, narration, translation, changing sentence, synonym & antonym, correction এবং Identify of the part of speech এই টপিকগুলো ভালভাবে আয়ত্ত করার পাশাপাশি পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন পড়ে শেষ করতে হবে। সময় হলে বিসিএস পরীক্ষা প্রশ্ন গুলো দেখা যেতে পারে।

আইসিটি
এবছর ভর্তি পরীক্ষায় আইসিটি বিষয় নতুন সংযুক্ত হওয়ায় অনেকের মনে ভয় বিরাজ করছে। তবে ভীত না হয়ে একটু কৌশলে পড়াশুনা করলে সহজেই এখানে ভাল নম্বর পাওয়া সম্ভব। সেজন্য আলাদা কোনো বই না পড়ে টেক্সট বই ও এইচএসসি টেষ্ট পেপার্স থেকে জ্ঞানমূলক ধরনের এমসিকিউগুলো একটু ভালো করে পড়লেই যথেষ্ট।

এক্ষেত্রে যে টপিকগুলো বেশি নজর দিতে হবে
১। সংখ্যা পদ্ধতির সবগুলো রূপান্তর খুব ভালোভাবে জানতে হবে।
২। সংখ্যা পদ্ধতিতে যোগ, বিয়োগ, আগের ও পরের সংখ্যা, পরিপূরক এগুলো বের করা শিখতে হবে।
৩। লজিক গেটে লজিক সার্কিট থেকে লজিক ফাংশন ও লজিক ফাংশন থেকে লজিক সার্কিট তৈরি, সকল গেটের ইনপুট-আউটপুট কি হবে, সত্যক সারণীতে ইনপুট কত দিলে আউটপুট কত হবে, সরলীকরণ এবং সকল গেটের প্রতীক আকা ভালো করে শিখতে হবে।
৪। এইচটিএমএল থেকে কোনগুলো এম্পটি ট্যাগ কোনগুলো কন্টেইনার ট্যাগ এবং কোন ট্যাগের কি কাজ এগুলো জানলেই হবে।
৫। সি প্রোগ্রামিং থেকে সকল প্রজন্মের ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যাবহার ও মেইন বৈশিষ্ট্য গুলো জানতে হবে।
৬। সকল ফাংশন, কিওয়ার্ড, ভেরিয়বল, ডেটা টাইপ, কন্ডিশনাল স্ট্যাটমেন্ট,লুপ সম্পর্কে বুঝতে হবে। এছাড়া ছোট ছোট প্রোগ্রাম দেখে আউটপুট বলতে পারলেই হলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়