এইচএসসি: কীভাবে নেবে শেষ সময়ের প্রস্তুতি

  © টিডিসি ফটো

সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজে সশরীরে ক্লাস শরু হবে। যথাসময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‍খুলে দেয়া হলে আগামী আগস্টেই চলতি বছরেরর এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি আগস্টে পরীক্ষা হয়েই থাকে তাহলে সময় খুব কম। 

হিসাব করলে হাতে সময় আছে মাত্র ৫ মাসের মত। ৫ মাস থাকলেও পড়ার মুখ্য সময় পাওয়া যাবে ৪ মাস। যেহেতু শেষের একটা মাস পরীক্ষার্থীদের রিভিশনসহ অনেক আনুসাঙ্গিক কাজ থেকে যায়। তাই এখন থেকে আর মাত্র ৪ মাস আছে। আর এই ৪ মাসে তোমাকে (পরীক্ষার্থী) জিপিএ-৫ ছিনিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাই তোমাদের জিপিএ-৫ ছিনিয়ে নিয়ে আসার জন্য সামনের ৪ মাসের রুটিন কেমন হতে পারে তাই বলে দিচ্ছি—

সময় মাত্র ৪ মাস। এতো পড়া কীভাবে গুছিয়ে পড়া যায়? এই পর্যন্ত অনেকেই আমাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করেছে। তাই আজ এই সময়ের জন্য কিভাবে একটা ইফেক্টিভ রুটিন বানানো যায় সেটা বলার চেষ্টা করবো।

তার আগে কিছু কথা না বললেই নয়। এতদিন যখন যেভাবে ইচ্ছা পড়েছো, অনেক শান্তিতে চলেছো, যখন যা ইচ্ছা করেছো। একদিন রাত ১১টায় ঘুমিয়েছো তো আরেকদিন ভোর ৪টায়। কিন্তু এখন আর এরকম উরাধুরা নিয়মে চললে হবে না। একটা স্পেসিফিক রুটিন তাই এখন খুবই দরকার। তা না হলে দেখা যাবে পরীক্ষা চলে আসবে কিন্তু তুমি সবগুলো বিষয় টাচ করতে পারবা না। কিন্তু পরীক্ষার আগের এই রিভাইস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রিভাইসের ইফেক্টিভনেসের উপরেই তোমার জিপিএ-৫ পাওয়া না পাওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই ভালোভাবে প্রিপারেশন কম্পলিট করতে হলে অবশ্যই একটা ভালো প্ল্যানিং ও একটি ভালো রুটিন থাকা আবশ্যক। এখানে কখন কোন কাজ করবা সব থাকতে হবে।

রুটিন বানানোর মৌলিক উপাদানগুলো হলো সময়, পড়াশুনা ও অন্যান্য কাজের লিস্ট এবং রেস্ট। এই চারটার সমন্বয়েই গঠিত হয় রুটিন।

একটা পারফেক্ট রুটিন বানানোর জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে—

১) সবসময় স্পেসিফিক রুটিন করবা। কবে কোন সাব্জেক্ট পড়বা, কতটুকু সময়ের মধ্যে কতটুকু শেষ করবা পুরো স্পেসিফিক রুটিন বানাতে হবে। আর চেষ্টা করবা একসাথে এক সপ্তাহের রুটিন বানানোর জন্য। এর কম সময়ের জন্য করলে বার বার রুটিন বানাতে টাইম নষ্ট হবে আবার এর চেয়ে বেশী দিনের সময়ের জন্য করলেও রুটিনটা ইফেক্টিভলি হবে না। কারণ এক সপ্তাহ পরে কখন কি হবে, না হবে তা কেউ বলতে পারেনা। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে কোন দিন কিরকম হতে পারে সেটার একটা অনুমান করা যেতে পারে।

২) এখন যে দিনের রুটিনটা করবা সেই দিনের প্রতিটা কাজ লিখে ফেল খাতায়। একটা লিস্ট বানাও যে কি কি করবা একটা দিনে। যেমন-ঘুম; পড়া; মাইন্ড রিফ্রেস করার জন্য রেস্ট; আবার পড়া; গ্রুপে এসে স্টাডি করা; আবার পড়া। 

৩) এবারের কাজ হলো তোমাকে খুজে বের করতে হবে যে সারাদিনে তুমি কখন কখন কতো ঘন্টা পড়তে পারবা। এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে প্রতি দুই ঘন্টা পর পর যেন ৩০ মিনিটের একটা ব্রেক থাকে। এসময়ে ব্রেইনে বেশি চাপ না ফেলাই ভালো, তাই ব্রেক নিয়ে নিয়ে পড়বা, এতে মনযোগ ধরে রাখা যাবে আর পড়াগুলোও ব্রেইনে দীর্ঘস্থায়ী হবে।

যেমন এভাবে করা যেতে পারে—
সকাল
০৯.০০ - ০৯.৩০- ফ্রেশ হওয়া
০৯.৩০ - ১১.৩০ - স্টাডি - ২ ঘন্টা
১১.৩০ - ১২.০০ - রেস্ট
১২.০০ - ০২.০০ - স্টাডি - ২ ঘন্টা
০২.০০ - ০৩.৩০ - নামাজ, লাঞ্চ
০৩.৩০ - ০৫.০০ - রেস্ট - ১.৫ ঘন্টা 
০৫.০০ - ০৭.০০ - স্টাডি ২ ঘন্টা
০৭.০০ - ০৭.৩০ - রেস্ট 
০৭.৩০ - ০৯.৩০ - স্টাডি - ২ ঘন্টা
০৯.৩০ - ১০.৩০ - নামাজ,  ডিনার
১০.৩০ - ১১.৩০ - গ্রুপে স্টাডি ১ ঘন্টা
১১.৩০ - ০২.০০ - স্টাডি ২.৫ ঘন্টা
০২.০০ - ০৯.০০ - ঘুম - ৭ ঘন্টা 

সুতরাং এভাবে করলে তুমি মোট সাড়ে ১০  ঘন্টা টেবিলে এবং ১ ঘন্টা গ্রুপে পড়াশোনা করতে পারবা। মোট সাড়ে ১১ ঘন্টা। যা পারফেক্টলি করলে আর কিছু লাগবে না গোল্ডেন এ প্লাস পেতে, বর্তমানে তোমার প্রিপারেশন যাই হোক না কেন। 

৪) এবার তোমার পড়ার সময়গুলো আবার আলাদা করে লিখে নাও। উপরের উদাহারণ থেকে বললে এভাবে—
০৯.৩০ - ১১.৩০ - ২ ঘন্টা
১২.০০ - ০২.০০ - ২ ঘন্টা
০৫.০০ - ০৭.০০ - ২ ঘন্টা 
০৭.৩০ - ০৯.৩০ - ২ ঘন্টা
১০.৩০ - ১১.৩০ - ১ ঘন্টা (গ্রুপ)
১১.৩০ - ০২.০০ - ২.৫ ঘন্টা

৫) প্রতিটা সাব্জেক্টের জন্য ১০ দিন সময় নিবা। প্রতিটি সাব্জেক্টের জন্য দিন বরাদ্দ হয়ে গেলে এবার তুমি আরেকটি কাজ করতে পারো। মনে করো, একটি সাব্জেক্টের ৭/৮টা অধ্যায় আছে। প্রতিটা অধ্যায়গুলোকে ভালো করে দেখে মনে মনে একটা হিসাব করে রাখো যে কোন চ্যাপ্টারটা পড়তে কতক্ষণ লাগতে পারে। এটা করার জন্য তুমি দেখতে পার কতোটা পেজ আছে সে অধ্যায়ে। মনে করে একটা অধ্যায়ে ৩০টা পেজ আছে। প্রতিটা পেজ রিডিং পড়তে তোমার ৪ মিনিট করে সময় লাগে। তাহলে মোট ১২০ মিনিটে বা ২ ঘন্টাতেই সেই অধ্যায়টা শেষ হয়ে যাবে। আবার ধরো, ৬টা ম্যাথ আছে, প্রত্যেকটা করতে ১০ মিনিট করে সময় লাগে মানে মোট ৬০ মিনিট বা ১ ঘন্টা। এভাবে হিসাব করে নাও, কোন অধ্যায় পড়তে কতোক্ষণ সময় লাগবে। এই ধাপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

৬) এবার প্রতিটা সাব্জেক্টের বিভিন্ন অধ্যায়ের জন্য সময়গুলো ভাগ করে নেওয়ার পরে কোন অধ্যায়টা কখন পড়বা সেটা প্ল্যান করে নাও। যেমন—

০৯.৩০ - ১১.৩০ - প্রথম অধ্যায় 
১২.০০ - ০২.০০ - দ্বিতীয় অধ্যায় 
০৫.০০ - ০৭.০০ - তৃতীয় অধ্যায় 
০৭.৩০ - ০৮.৩০ - চতুর্থ অধ্যায় 
০৮.৩০ - ০৯.৩০ - পঞ্চম অধ্যায় 
১১.৩০ - ১২.৩০  - ষষ্ঠ অধ্যায় 
১২.৩০ - ০১.৩০ - সপ্তম অধ্যায় 
০১.৩০-০২.০০ - গ্রুপের বিভিন্ন টেস্টের হোমওয়ার্ক। 

এগুলো শুধু উদাহারণ দিচ্ছি বুঝানোর জন্য। কেউ আবার এগুলাকেই হুবহু কপি মেরে ফলো করতে যেও না। তাহলে লাভ নাই। আবারও বলছি, এই রুটিনটা শুধু বোঝানোর জন্য, এটাকে হুবহু ফলো করা যাবেনা। এটা দেখে নিজের জন্য একটা বানাতে হবে। নিজের অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে নিজে প্রস্তুত করবা। 

আরেকটা বিষয় হলো, রুটিন বানানোটা যতটা সোজা, রুটিনটা মেইনটেন করাটা ঠিক ততোই বেশি কঠিন। যার কারণে একটা রুটিন বেশিদিন স্থায়ী হয় না। কয়েকদিন পর পর নতুন করে রুটিন বানাতে হয়, নতুন করে প্ল্যানিং করতে

হয় আবার। তাই এতে সময় অনেক বেশি নষ্ট হয় কেননা রুটিন বানাতেও বেশ সময় লাগে। তাই চেষ্টা করবা রুটিনটা কখনোই যেন ব্রেক না হয়। মানে তুমি যেন কোনমতেই তোমার প্ল্যানিং থেকে সরে না আসো।

যেমন— ধর আজ সকালে তোমার চার নম্বর অধ্যায় পড়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়েই হয়তো তোমার বন্ধু/বান্ধবী ঘুরতে যাবে, তোমাকেও ডাকছে। না। যাওয়া যাবে না। যতোই কষ্ট হোক, থেকে যেতে হবে বাসায়। যেটা প্ল্যান ছিল সেটাই করতে হবে।

সবাইকে ধন্যবাদ। সবাই সিরিয়াস হয়ে যাও। ৪ মাস কিন্তু ১২০ দিন। ৪ মাস বেশি মনে হলেও ১২০ দিন কিন্তু অনেক কম সময়।

লেখক: সিইও, ডিইউ মেনটরস


সর্বশেষ সংবাদ