আজকের দিনটি শুধুই মায়েদের, আপনার জননীকে চমকে দেবেন যেভাবে

আজকের দিনটি শুধুই মায়েদের
আজকের দিনটি শুধুই মায়েদের  © সংগৃহীত

‘মা’ ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু তার পরিধি অসীম। সবার কাছে এই সত্যই প্রতিষ্ঠিত যে, মায়ের চেয়ে আপন কেউ নেই। মানুষের খুব প্রিয় অন্য যে কোনো কিছুর সঙ্গে যখন তুলনা আসে তখনো মায়ের সঙ্গেই তা করা হয়। মায়ের আসন সবার ওপরে। দেশ বা নিজের জন্মস্থানকেও মাতৃসম ভাবা হয়। মায়ের জন্য প্রাণ দিতেও পিছপা হয় না মানুষ।

আজ রবিবার বিশ্ব মা দিবস। আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯০৮ সালের ৮ মে। সঙ্গে উপহার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সাদা কারনেশন ফুল। সমীক্ষা বলছে, বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন অনেক বেশি মানুষ নিজের মাকে ফোন করেন, তার জন্য ফুল কেনেন, উপহার দেন।

মায়ের গর্ভেই সন্তানের জন্ম। জন্মের পর মাকেই শিশু সবার আগে চেনে। মায়ের বুকের হূত্স্পন্দন তার কাছে সবচে বেশি পরিচিত। মায়ের বুকের দুধে, শরীরের উষ্ণতায় সবার বেড়ে ওঠা। যাকে অবলম্বন করে বেড়ে ওঠা সেই ‘মা’ ডাকের মতো মধুর ডাক পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। মানুষের মুখে ফোটা প্রথম শব্দটি ‘মা’। 

একজন মায়ের কাছেও সন্তানের মুখ থেকে ‘মা’ ডাক শোনাটি সবচেয়ে ভালো লাগার মুহূর্ত। ‘মা’ শব্দটির সঙ্গে মিশে আছে মায়া-মমতা ও ভালোবাসা। অনেক সময় স্নেহের আধার এই মা পরিণত হন জাতীয় প্রেরণার প্রতীকে। মাকে নিয়ে লেখা হয়েছে শতসহস্র কবিতা, গান। সেই গানে ব্যক্তি মা যেমন রয়েছে তেমনি দেশকে মা সম্বোধন করেও লেখা হয়েছে গান, কবিতা। 

মা দিবস প্রতিদিন, প্রতিক্ষণের। এর জন্য বিশেষ দিন আবার কী দরকার? তবে এ রীতিকে বোধহয় একেবারে তাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়। প্রতীকী হলেও অন্তত একটা দিন তো মায়ের কথা, তার সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার কথা ভাবেন মানুষ।

আপনার জননীকে চমকে দেবেন যেভাবে
মায়েরা সারাজীবন সন্তানের জন্য ভাবেন। সন্তানের জন্মের পর থেকেই মায়েরা তাদের নিজেদের কথা ভাবা ভুলে যান। একজন মা তার সন্তানের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেন সেই ঋণ কখনোই শোধ করা সম্ভব নয়। তবে মাতৃ দিবসে মায়ের বিশেষ ও সেরা আয়োজন তার মুখে হাসি ফোটাতে পারে।

মায়ের কাছে থাকুন 
অনেক সময় কাজ কিংবা পড়াশোনার জন্য মায়ের থেকে দূরে থাকতে হয়। তাই বলে কি আজকের দিনে মায়ের জন্য কিছুই হবে না? একদমী না, দূরে থেকেও মাকে খুশি করতে পারেন।  মায়ের সঙ্গে ফোন দিয়ে কথা বলতে পারেন। অনেক সময় ব্যস্ততায় আমরা নিয়মিত কথা বলতে পারি না মায়ের সঙ্গে। আজ থেকেই এই অভ্যাস বদলে ফেলতে পারেন।  

একসঙ্গে বাগান করুন
আপনার মা বাড়িতে গাছপালা লাগান? বারান্দায়, উঠোনে, ছাদে ছোট ছোট টব সাজিয়ে ফুল ফোটান, ছোট ছোট সব্জির বাগান করেন? তাহলে বিশেষ দিনে আপনিও হাত লাগান মার সঙ্গে। একসঙ্গে মাটি খুঁড়ুন, পানি দিন, আগাছা তুলুন, যত্ন করুন বাগানের। এছাড়াও মাকে কিনে দিন সুন্দর ফুলগাছের চারা। তাতে ফুল ফুটবে যখন, মা মনে করবেন আপনার বিশেষ উপহারের কথা। 

নিজের হাতে মায়ের প্রিয় খাবার রান্না
মায়ের হাতে রান্না খেয়েই অভ্যস্ত প্রায় সকলে। ছোট থেকে বড় হয়ে গিয়েও এ নিয়ম বদলায় না অনেক সময়। আজকের দিনে আপনি নিজের হাতে মায়ের পছন্দের খাবার রান্না করতে পারেন। এমনকি মাঝে মাঝেই মায়ের জন্য রান্না করতে পারেন। এতে করে মা খুশিও হবে আর নিজের জন্য সময় পাবে। 

ফুচকা 
আপনার মা যদি ফুচকা খেতে ভালোবাসেন তাহলে তাকে অবশ্যই ফুচকা দিন। সঙ্গে তেঁতুল পানি, আলু মাখা দিয়ে আপনি বাড়িতে ফুচকা তৈরি করে দিতে পারেন। না হলে বাইরে বেরিয়েও কিন্তু আপনার মাকে ফুচকা খাওয়াতে একদম ভুলবেন না।

রসগোল্লা 
যদি আপনার মা মিষ্টি প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে তো আর চিন্তাই নেই। রসগোল্লা এনে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন। এতে খুশি হবেন আপনার মা।

দিনটি শুধুই মায়ের!

ঘুরতে নিয়ে যান মাকে
মায়ের যদি বছরভর ঘর থেকে না বেরোনোর সুযোগ বিশেষ না মেলে, তাহলে এ বছরের মাদার্স ডে-তে মাকে উপহার দিন একটা বেড়াতে যাওয়া। তা হোক না একটু অ্যাডভেঞ্চারাস কিছু। সচরাচর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আমরা যতটা আনন্দ করি, ততটা মা-বাবার সঙ্গে করব বলে ভাবি না। অথচ প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে মায়ের মন কতই না ভাল হয়ে উঠতে পারে!

উপহার দিন
আজ মায়ের পছন্দের কিছু আজ উপহার দিতে পারেন। যা তাকে আরও স্পেশাল ফিল করাতে পারে। মা দিবস উপলক্ষে দিতে পারেন কার্ড। এছাড়াও তার প্রিয় বই হোক অথবা বিশেষ মুহূর্তগুলোর একটি ফটো ফ্রেম, বা হোক না স্মার্টওয়াচ! কেবল আজকের দিনে নয় আপনার সুবিধা মত মাঝে প্রায় সময় মাকে উপহার দিতে পারেন। এমন একটা উপহার পেলে যে শুধু মা খুশি হবেন তাই নয়, আপনারা দু'জনেই দারুণ সুন্দর একটা সময় কাটাবেন, মানসিক ভাবে অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠবেন নিত্যনৈমিত্তিক কাজের চাপের মাঝে।

ঘর সাজান
মা দিবসে ঘর সাজাতে পারেন। মায়েরা ঘর সাজিয়ে রাখেন আজ থেকে মায়ের সঙ্গে এই দায়িত্ব আপনিও পালন করতে পারেন। মায়ের পছন্দের ঘর সাজানোর জিনিসপত্র কিনতে পারেন।মায়ের জন্য একটি বিশেষ পেইন্টিং তৈরি করতে পারেন। এমনকি মায়ের প্রিয় রঙের চাদর কিংবা পর্দা কিনতে পারেন।  

একসঙ্গে সিনেমা 
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাত জেগে সিনেমা দেখা, গেম খেলা-- এসব তো আমরা সবাই করি। কিন্তু এই বাঁধনছেঁড়া আনন্দের স্বাদ তো একটা দিন ভাগ করেই নেওয়া যায় মায়ের সঙ্গে! আপনার মা যদি সিনেমা দেখতে পছন্দ করে তাহলে দুজন একসঙ্গে সিনেমা দেখতে পারেন। বাবা ও মাকে সঙ্গে নিয়ে সিনেমা দেখলে দারুণ একটা সময় কাটবে। মায়ের পছন্দের সিনেমা গুলো দেখতে পারেন।    

শপিং
আজ মায়ের সঙ্গে শপিং করতে পারেন। যেহেতু গরম চলছে তাই মায়ের জন্য তার পছন্দের আরামদায়ক পোশাক কিনতে পারেন দুজন একসঙ্গে।

যেভাবে এলো মা দিবস: বর্তমানে প্রচলিত মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। গত শতাব্দীর শুরু দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা ভাবলেন। তার সে ভাবনা বাস্তবায়নের আগে ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মায়েদের জন্য উত্সর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মা দিবস পালন করা হয়। অনেকের মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে।


সর্বশেষ সংবাদ