৪৫তম বিসিএস লিখিত: কৃষি বিষয়ের প্রস্তুতি

শেখ নাইমুর রশিদ লিখন
শেখ নাইমুর রশিদ লিখন  © টিডিসি ফটো

গেল ২৭ নভেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। তবে পরীক্ষা শুরুর তিনদিন আগে গত নভেম্বর ২৪ এ পরীক্ষা স্থগিত করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। ২৭ নভেম্বর শুরু হয়ে এ পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১১ ডিসেম্বর। তবে এখন এ পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানা যায়নি। পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হলে পরিবর্তিত সময়সূচি কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

পরীক্ষা যখনই হোক, প্রস্তুত থাকতে হবে প্রার্থীদের। বিসিএসে কৃষি পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা টেকনিক্যাল কৃষি ক্যাডারের জন্য কৃষি ১ম পত্র ও ২য় পত্রের ২০০ মার্কের ৪ ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ১৬টি অধ্যায় থেকে ১৫ সেট প্রশ্ন হয় ও ১৫নং প্রশ্নসহ (টীকা) যেকোনো ১০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। বাংলা ও ইংরেজি যেকোনো ভাষায় উত্তর করা যায়। তবে ইংরেজিতে উত্তর করা ভালো। এ বিষয়ে ভালো প্রস্তুতির জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হলো-

প্রয়োজনীয় বই
 ১. স্নাতকের নোটপত্র 
 ২. নবম-দশম-একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির কৃষি শিক্ষা
 ৩. আর্টিকেল ১৬ - মাহফুজ ও নিটোল
 ৪. এগ্রি রিটেন বিসিএস- মো. সাহাজুল ইসলাম 
 ৫. এগ্রি বিসিএস- মুখলেসুর রহমান মুকিত 
 ৬. বিসিএস লিখিত কৃষি - মো. জাকির হাসনাত (বাংলা ভার্সন) 
 ৭. কৃষি ডায়েরি-২০২৩

অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন
 ১. কৃষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান লিখুন। 
 ২. কৃষি উন্নয়ন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকারের সাফল্য ও গৃহীত পদক্ষেপ বর্ণনা করুন। 
 ৩. স্বাধীনতা পূর্ব ও স্বাধীনতা- পরবর্তী কৃষি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আলোচনা করুন। 
 ৪. বঙ্গবন্ধু ধান-১০০/ ব্রিধান-১০৫ (ডায়াবেটিস ধান), ব্রিধান-১০৬/পঞ্চব্রীহি ধানের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করুন।
 ৫.  স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে কৃষিতে কি কি পরিবর্তন আনতে হবে? ই-কৃষি নিয়ে বিস্তারিত লিখুন। 
 ৬. SDG/ ডেল্টা প্লান-২১০০ এর কৃষির সাথে সম্পর্কিত গোলগুলো লিখুন ও বাংলাদেশের অগ্রগতি বর্ণনা করুন। 
 ৭. সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ কি ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয় কি? 

অধ্যায়ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ টপিকসমূহ (১ম ও ২য় পত্র)

কৃষি ১ম পত্র
প্রথম অধ্যায় (মাঠ ফসল উৎপাদন): ধান, গম, পাট, আখ উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ফসলের বৈশিষ্ট্য, চা প্রক্রিয়াজাতকরণ, তৈলজাতীয় ও ডালজাতীয় ফসল উৎপাদনের সমস্যা ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়, পাট চাষ বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগ, ৫টি করে লবনাক্ত-বন্যা-খরা সহনশীল ধানের জাত ও জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম, বাংলাদেশের ক্রপিং সিজন ও কয়েকটি ফসলের উদাহরণ। 

দ্বিতীয় অধ্যায় (উদ্যান ফসল উৎপাদন): কলা, আলু, আম. পেঁয়াজ, রসুন উৎপাদন প্রক্রিয়া, টমেটো চাষের সমস্যা ও সমাধান, উদ্যানফসলের পোস্টহার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট (টমেটো, আলু), আনারস ও কাঁঠাল মধুপুরে, লিচু দিনাজপুরে, আম রাজশাহীতে, চা সিলেটে, পেয়ারা স্বরূপকাঠিতে, আলু পঞ্চগড়ে, ফুল যশোরে—কেন ভালো হয় (উক্ত অঞ্চলের এগ্রোক্লাইমেটিক কন্ডিশন বর্ণনা) । 

তৃতীয় অধ্যায় (সেচ ও নিষ্কাশন):  নিষ্কাশন ও সেচের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব ও মূলনীতি, সেচের পদ্ধতি, সেচ পানির উৎস, সেচের পানির  ফ্রিকোয়েন্সির ফ্যাক্টর, নিরাপদ সেচ পানির বৈশিষ্ট্য, লস অব ওয়াটার ফ্রম সয়েল, ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাবার কারণ, ফলাফল ও সমাধান।

চতুর্থ অধ্যায় (ফসলের পুষ্টি ও সার ব্যবস্থাপনা): জৈব সারের গুরুত্ব, জৈব সার কমে যাওয়ার কারণ, ফলাফল ও সমাধান, ৫টি গ্রিন ম্যানুরিং শস্যের বৈজ্ঞানিক নাম, প্রচলিত সারগুলোর নাম, রাসায়নিক সংকেত ও মিনারেলের পরিমাণ, জিংক-বোরন-পটাশিয়াম-ক্যালসিয়াম-আয়রন-ফসফরাসের কাজ ও ঘাটতির ফলাফল, ৫টি জৈব সার ও জীবনু সারের নাম।

পঞ্চম অধ্যায় (ফসলের রোগবালাই) ও ষষ্ঠ অধ্যায় (কীটনাশক): বায়ো ফার্টিলাইজার, বায়ো কন্ট্রোল এজেন্ট, ধান-পাট-আখ-আম-আলু-টমেটো-পেপে কাঁঠালের গুরুত্বপূর্ণ কীটপতঙ্গ-রোগবালাইসমূহ (জীবানুর বৈজ্ঞানিক নাম, আক্রমণের ধরন, কন্ট্রোল), ৫টি পরিবেশবান্ধব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ টেকনিক, বায়ো-বালাইনাশকের উপকারিতা, বালাইনাশকের নাম-প্রকারভেদ-পরিবেশ ও মানুষের উপর প্রভাব-মোড অফ অ্যাকশন, অর্গানোক্লোরিনেটেড বালাইনাশক নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ, IPM সংজ্ঞা-উপকারিতা-সীমাবদ্ধতা । 

সপ্তম অধ্যায় (কৃষি সম্প্রসারণ): সম্প্রসারণ প্রোগ্রাম পরিকল্পনার ধাপসমূহ, NAEP এর মূলনীতি, টেকনলজি ট্রান্সফার প্রসেস, ফিল্ড ট্রায়াল ও স্টেশন ট্রায়াল, কৃষিতে নারী-তরুনদের ভূমিকা ।

কৃষি ২য় পত্র 
প্রথম অধ্যায় (প্লান্ট জেনিটিক রিসোর্সেস): প্লান্ট জেনেটিক রিসোর্সের প্রকারভেদ-সংরক্ষণ-ব্যবস্থাপনা-এক্টিভিটি, জীববৈচিত্র্যতার প্রকারভেদ ও গুরুত্ব, জিন ব্যাংক, ইনসিটু-এক্সসিটু সংরক্ষণ । 

দ্বিতীয় অধ্যায় (ফসল উন্নয়ন): হাইব্রিড ভ্যারাইটি তৈরির উপায়, নতুন জাত উদ্ভাবন প্রক্রিয়া, মিউটেশন ব্রিডিং, SCA/NSB দ্বারা বীজ প্রত্যয়ন ও রিলিজ প্রক্রিয়া, ব্রিডিং অ্যাক্টিভিটিজ । 

তৃতীয় অধ্যায় (জৈবপ্রযুক্তি): বায়োসেফটি, টিস্যু কালচার, বিটি বেগুন উদ্ভাবন প্রক্রিয়া, এথিকাল ইস্যুস (GMO), মাইক্রোপ্রোপাগেশন, প্লাসমিড ও জিন স্থানান্তর প্রক্রিয়া । 

চতুর্থ অধ্যায় (প্লান্ট গ্রোথ রেগুলেটর (PGR): PGR সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ, ৫টি রাইপেনিং কেমিক্যাল ও তাদের ইফেক্ট, কালটারের ব্যবহার ও অপকারিতা, ম্যাচুয়েশন ও রাইপেনিং এর সময় ফলের পরিবর্তন, ক্লাইম্যাকটেরিক ফল- নন ক্লাইম্যাকটেরিক ফল, ইথিলিনের কাজ। 

পঞ্চম অধ্যায় (বীজ বিজ্ঞান): বীজের সংজ্ঞা, বীজ উৎপাদনের মূলনীতি, বীজের বিশুদ্ধতা নির্ণয় পরীক্ষা, বীজ অংকুরোদগমের প্রক্রিয়া ও ফ্যাক্টর। 

ষষ্ঠ অধ্যায় (আগাছা ব্যবস্থাপনা): সমন্বিত আগাছা দমন, ধান, পাট, গম, আখ ক্ষেতের কয়েকটি আগাছার বৈজ্ঞানিক নাম, কয়েকটি আগাছানাশকের নাম। 

সপ্তম অধ্যায় (পরিবেশ বিজ্ঞান): পরিবেশ দূষণের কারন ও প্রতিকার (মাটি, পানি, বায়ু), গ্রীনহাউজ ইফেক্ট ও কৃষি, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, লবণাক্ততা দূরীকরণের উপায়, টেকসই কৃষি। 

অষ্টম অধ্যায় (কৃষি বনায়ন): SALT এর ধাপসমূহ, কৃষি বনায়নের ভূমিকা, প্রকারভেদ ও উপকারিতা, কৃষি জমি কমে যাবার কারণ, বরেন্দ্র এলাকা/পাহাড়ি এলাকার কৃষির সমস্যা ও সমাধান । 

নবম অধ্যায় (অর্থকরী ফসল): ১০টি অর্থকরী ফসল ও ১০টি মেডিসিনাল প্লান্টের বৈজ্ঞানিক নাম, ৫টি নারকোটিক উদ্ভিদ, তৈল উদ্ভিদ ও পানীয় উৎপাদনকারী উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম,  চা ও রাবার প্রসেসিং । 

গুরুত্বপূর্ণ টীকা (Short notes): রসুন উৎপাদন (জিরো টিলেজ), ভাসমান সবজি উৎপাদন, বিকল্প ওয়েটিং ও ড্রাইং পদ্ধতি, পার্সিং পদ্ধতিতে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, আইপিএম/আইসিএম, ট্রু পটেটো সীড, সল্ট/জুম চাষ, ETL/EIL/MRL/LD-50, জিএমও/বিটি বেগুন, ডিএই/বিএআরসি/এনএআরএস, পিজিআর/ফাইটোহরমোন, জেনেটিক ইরোশন/জিন পুল, ক্রপ রোটেশন/ক্রপিং ইনটেনসিটি/ক্রপিং প্যাটার্ন//ক্রপ ডাইভারসিফিকেশন/ক্রপ ফোরকাস্টিং।

এলিলোপ্যাথি, শস্য-আগাছা প্রতিযোগিতা, খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য, SCA/NSB, কোয়ালিটি সীড, ব্যালান্সড ফার্টিলাইজার/বায়ো ফার্ট্লাইজার, ক্রপ রেটুনিং, পাটের রিবন রেটিং, মাশরুম চাষ, এইজেড, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষি, তামাক ও চায়ের কিউরিং, গ্রাউন্ডনাটের পেগিং, কলিফ্লাওয়ারের বাটনিং, রাবার তৈরি, হাইব্রিডাইজেশন, ফিল্ড ট্রায়াল, ডেমোনেসট্রেশন প্লট, বায়োগ্যাস ও বায়ো ফুয়েল, হাইড্রোপনিক্স, প্রাইমিং, বরেন্দ্র ভূমি, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, রেইন ফরেস্ট/ডেসিডিয়াস ফরেস্ট, সাপ্লিমেন্টারি সেচ, ক্রপ জোনিং, ভূমিহীন কৃষক, টিস্যু কালচার, জৈবপ্রযুক্তি।

গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য (Differences): ব্লাক চা-গ্রিন চা, সি৩-সি৪ উদ্ভিদ, সীড ভায়াবিলিটি-সীড ভিগর, ক্রপ রোটেশন-ক্রপিং প্যাটার্ন, আলুর ব্লাক হার্ট-হলো হার্ট, অ্যালে ক্রপিং-ইন্টার ক্রপিং, ব্রিডার বীজ-ভিত্তি বীজ-প্রত্যয়ন বীজ, অর্গানিক কৃষি-প্রচলিত কৃষি, ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট- লিফ স্ট্রিক, হাইব্রিড-আধুনিক জাত, বায়োলজিকাল ফলন-অর্থনৈতিক ফলন, খাদ্য নিরাপত্তা-নিরাপদ খাদ্য, ব্যাক ক্রস-টেস্ট ক্রস, ভার্মি কম্পোস্ট-ট্রাইকো কম্পোস্ট, বায়োডাইভার্সিটি-জেনেটিক ডাইভার্সিটি, ফিজিওলজিকাল ম্যাচুরিটি-হর্টিকালচারাল ম্যাচুরিটি, জৈব সার-অজৈব সার, পিজিআর-ফাইটোহরমোন, রিকালসিট্রান্ট সীড-অর্থোডক্স সীড ।

ভালো নাম্বার পেতে করণীয়
 ১. বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে পড়তে হবে।
 ২. লিখিত পরীক্ষায় বর্ণনামূলক প্রশ্নের চেয়ে ডাটাভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে। এতে ভালো মার্ক পাওয়া যায়। 
 ৩. টীকা উত্তর অবশ্যই করতে হবে। টীকা লিখতে অল্প সময় ব্যয় হয় ও অধিক নাম্বার তোলা যায়। 
 ৪. সংক্ষেপে প্রশ্নের উত্তর হবে ও পয়েন্ট আকারে লিখতে হবে। 
 ৫. প্রয়োজনীয় চিত্র, ডাটা-চার্ট-ডায়াগ্রাম সংযোজন করতে হবে ও তথ্যসূত্র দিতে হবে। 
 ৬. নির্ধারিত সময়ে সকল প্রশ্নের উত্তর লিখে শেষ করতে হবে। সময় ধরে লেখায় মনোযোগ দিতে হবে। 
 ৭. যে প্রশ্নগুলো ভালো লিখতে পারা যায়, সেগুলো আগে লেখা উচিত। 
 ৮. কৃষিভিত্তিক সাম্প্রতিক ঘটনা। নতুন জাত, নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

লেখক: কৃষি ক্যাডার, সুপারিশপ্রাপ্ত, ৪১তম বিসিএস


সর্বশেষ সংবাদ