জিপিএ-৫ না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ কি কমে যায়?

এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা এখন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন
এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা এখন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন  © ফাইল ফটো

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তারিখ প্রকাশ শুরু করেছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর মাধ্যমে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি, মেডিকেলসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে তারিখ জানিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত জানাতে পারে গুচ্ছসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

গত ২৬ নভেম্বর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কবে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা হবে, তা জানতে উদগ্রীব শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

এখন আসি মূল কথায়। দেশে স্বায়ত্তশাসিত ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে আসন আছে ৭০ হাজারের মতো। অথচ জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। সে হিসেবে শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিলেও অন্তত ২২ হাজার জন ভর্তি হতে পারবেন না। ফলে এইচএসসিতে ভালো ফল করলেও অনিশ্চয়তায় আছেন তারা।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে আসন আছে ৭০ হাজারের মতো। অথচ জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। সে হিসেবে শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিলেও অন্তত ২২ হাজার জন ভর্তি হতে পারবেন না।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, যারা জিপিএ-৫ পাননি, তারা কি ভর্তি পরীক্ষার রেসে পিছিয়ে পড়বেন? এর জবাব হলো না। কারণ, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা বুয়েট ও মেডিকেলসহ কিছু শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন সত্য। তবে এটাও ঠিক, ভালো শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও অনেকে হয়তো সামান্য নম্বর কম পাওয়ায় জিপিএ-৫ পাননি। কিন্তু তারা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ার যোগ্য।

আসল কথা হলো জিপিএ-৫ পেলেই কারও জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিশ্চয়তা নেই। তারা শুধু ভর্তি পরীক্ষার নম্বর বণ্টনে সামান্য এগিয়ে থাকবেন। তবে অন্যদের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করেই তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর কিংবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

আরো পড়ুন: কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কবে

একটা কথা মানতে হবে যে, জিপিএ-৫ না পাওয়ায় সামান্য পিছিয়ে থাকতে হয়। তবে এ জ্ঞাপ পূরণের সুযোগও আছে। আর তা হলো, ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা। অন্যরা যে নম্বর পেয়ে চান্স পাবে, তাদের চেয়ে ভালো বিষয় পেতে হলে ভর্তি পরীক্ষায় কয়েক নম্বর বেশি পেতে হবে জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের। এ জন্য প্রস্তুতির সময় আসলে এখনই। কারণ এখন প্রস্তুতি যতো ভালো হবে, ভর্তি পরীক্ষায় ততো ভালো নম্বর তোলা যাবে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য বলছে, দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় আসন আছে ১৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মতো। এর মধ্যে পাবলিক ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ হাজার আসন থাকে পছন্দের শীর্ষে। এইচএসসিতে পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার জন। সে হিসেবে সবাই ভর্তি হলেও প্রায় আড়াই লাখ আসন শূন্য থাকবে।

ভর্তি পরীক্ষায় মূল লড়াইটা হবে আসলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন নিশ্চিত করার জন্য। এক্ষেত্রে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাই যে শুধু এগিয়ে থাকবে, বিষয়টি মোটেও তা নয়। ভর্তি পরীক্ষার জন্য যারা নিজেদের যত বেশি ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারবে, তারা ততো ভালো করবে। এ জন্য সময় পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মাস। এ সময়ের পরিশ্রম ও কঠোর অধ্যাবসায় নিজের ভবিষ্যত ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী


সর্বশেষ সংবাদ