বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়ন পড়তে চাইলে

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন অধ্যয়ন পরিবার
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন অধ্যয়ন পরিবার  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশের এবারের বাজেট সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকারও বেশি। স্বাভাবিকভাবেই আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এতো এতো বাজেট-বরাদ্দের পরও দেশের প্রান্তিক বা সব পর্যায়ের মানুষের উন্নয়ন সেভাবে হচ্ছে না কেন? এ প্রশ্ন শুধু আপনার না, সবারই। উন্নয়ন অধ্যয়নের কাজটা মূলত এখানেই। সমাজ-রাষ্ট্রের নানান সীমাবদ্ধতা মধ্য থেকে উন্নতি করার উপায় বাতলে দেয়ার কৌশল শেখায় মূলত উন্নয়ন অধ্যয়ন বা ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ। বলা যেতে পারে আজ এবং আগামীর ক্যারিয়ার উন্নয়ন অধ্যয়নে। 

গত এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয় ও ক্যারিয়ার পছন্দের মনস্তত্ত্বে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। নব্বইয়ের দশকে চালু হওয়ার পর থেকে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দৃশ্যপটে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন দেখা গেছে। চ্যালেঞ্জিং ভবিষ্যত, চাকুরির বাজারের চাহিদা এবং তরুণদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মৌল চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তোলতে বেশ আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম অফার করার চেষ্টা করছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো।

বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়ার বিষয়ের খুঁটিনাটি নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে এবার থাকছে উন্নয়ন অধ্যয়নে পড়াশোনার বিস্তারিত। উন্নয়ন অধ্যয়নে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, ভর্তি যোগ্যতা, পঠন পরিসর, খরচ, উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এ প্রতিবেদনে। 

উন্নয়ন অধ্যয়ন কী?
মূলত মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, মানবাধিকার, পরিবেশ, লিঙ্গ সমতা, যোগাযোগ ইত্যাদির উন্নয়ন তরান্বিত করার কৌশল পড়ার বিষয়ই হল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা উন্নয়ন অধ্যয়ন। উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত নানান বিষয়ের সমন্বিত জ্ঞানার্জনের সুযোগ থাকে এখানে। সামাজ ও রাষ্ট্রের ব্যবহারিক পর্যায়ে উন্নয়নের সংজ্ঞা, সীমাবদ্ধতা, কাজের পরিধি খুঁজে বের করে, সেসব সমস্যার ব্যবহারিক সমাধান নিয়ে পড়াশোনার বিষয় মূলত উন্নয়ন অধ্যয়ন। শুধু দেশে নয়, বিশ্বব্যাপী দরিদ্র পীড়িত মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তাদের সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে কথা বলে বিষয়টি। কিন্তু শুধুমাত্র দারিদ্র দূর করার নাম উন্নয়ন নয়, একইসাথে মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা-চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন।

পড়তে-পড়তেই চাকরি
উন্নয়ন অধ্যয়নে পড়াশোনা করা অবস্থায় আপনি চাইলে ভালো বেতনে খণ্ডকালীন চাকরিও করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিভিন্ন কল সেন্টার, এনজিও ও আন্তর্জাতিক এনজিও, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পায়। 

পাঠ্য বিষয়বস্তুর দিক থেকে মোটামুটি সব বিষয়ে আলোচনা করা হয় উন্নয়ন অধ্যয়নে। ফলে, চাকরির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের শিক্ষার্থীরা। বাস্তব ও কর্মমূখী শিক্ষা পদ্ধতির কারণে আজ এবং আগামীর ক্যারিয়ার বলা হচ্ছে উন্নয়ন অধ্যয়নকে।

উন্নয়ন অধ্যয়নে কী পড়ায়?
উন্নয়ন অধ্যয়নের সাথে বহুবৈচিত্রের বিষয় মিশানো থাকে। এজন্য এটাকে মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয় বলা হয়ে থাকে। সরকারি-বেসরকারি নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধ, লিঙ্গসমতা ও উন্নয়ন,রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ, সমাজবিজ্ঞান, সংস্কৃতি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, যোগাযোগ, উন্নয়নের কৌশল, গবেষণা পদ্ধতি ও প্রয়োগ, বাজেট ব্যবস্থাপনাসহ মানব উন্নয়নের মতো সব বিষয়ে গভীরভাবে জানার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। একইসাথে জ্ঞানের বহুধা বিস্তৃত পরিসরে কাজের সুযোগ থাকে। সহজ করে বললে, শিক্ষার্থীদের তত্ত্ব জেনে তা প্রয়োগ করে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের উপায় শেখানো হয়।

চাকরির বাজার কেমন?
বহুমাত্রিক এবং প্রায়োগিক বিষয় হওয়াতে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ডিগ্রীধারীরা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকে। একইসাথে, বহুমাত্রিক বিষয় হওয়ার কারণে এ বিষয়ের গ্রেজুয়েটদের কাজের পরিসর বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক। দেশি-বিদেশি নামকরা গবেষণা প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থা যেমন— ইউএন, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ ,আইডিবি, এডিবি, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ নানান দেশি ও আন্তর্জাতিক এনজিওতে উচ্চ বেতনে কাজের সুযোগ থাকে। 

খরচ কেমন হতে পারে? 
বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে ১ বছর এবং ২ বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রাম অফার করা হয়ে থাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে খরচ হতে পারে দুই থেকে তিন লাখ টাকার মতো। 

কোথায় পড়বেন?
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়নের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের প্রথম সারির এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এ বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে উন্নয়ন অধ্যয়নে পড়ার সুযোগ নেই। কিন্তু স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এধরণের বেশ কয়েকটি বিষয়ে ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে। 

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
মাস্টার্স ইন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
এখানেও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ভর্তি যোগ্যতা, খরচ ও অন্যান্য তথ্যের খুঁটিনাটি জানতে ঘুরে আসতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে- ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি; ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি। 

যোগ্যতা 
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে পড়ানো হয়। তবে দেশে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মাত্র স্নাতকোত্তর স্তরে উন্নয়ন অধ্যয়ন পড়ানো হয়। আবার আবার ভর্তির ক্ষেত্রে যোগ্যতা, সুযোগ সুবিধাও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন হতে পারে। যেমন বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এটি পড়ানো হয় পরিবেশ ও উন্নয়ন অধ্যয়ন নামের। এতে ব্যাচেলর পর্যায়ে ভর্তির জন্য যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বনিম্ন জিপিএ ২.৫০ অথবা ২.০০ থাকলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় মিলিয়ে সর্বমোট জিপিএ ৬.০০ থাকতে হবে। পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষায় গ্রহণযোগ্য নম্বর পেতে হবে, তবে জিপিএ-৫ পাওয়া ভর্তিচ্ছুরা কোনো ধরনের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হতে পারবেন।


সর্বশেষ সংবাদ