সৌন্দর্য হোক প্রাকৃতিক, ভালো অভ্যাসে সুস্থ ত্বক
খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে সচেতন হলে ও সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে তবেই নিজের আসল সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হবে ভেতর থেকে। সুস্থ ও সুন্দর ত্বক, ডার্ক সার্কেলবিহীন চোখের কোল, প্রাণবন্ত হাসি- ব্যস এতেই চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে নিজের আসল সৌন্দর্য। চারপাশে ধুলাবালুসহ শুষ্ক আবহাওয়া। এর প্রভাব পড়ছে ত্বকের ওপর।
ফলে ত্বক হয়ে উঠছে রুক্ষ, খসখসে, প্রাণহীন। এ ছাড়া ত্বকে পড়ছে কালচে ছোপ ছোপ দাগ, ফুসকুড়ি, রোদে পোড়া ভাব এবং মরা কোষ জমে ত্বক হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য। এজন্য ত্বকে চাই বাড়তি যত্ন। প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপাদান দিয়েই এ সময় ত্বক সুন্দর রাখা সম্ভব।
ত্বক ভালো রাখার সহজ উপায় অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। সুন্দর, উজ্জ্বল ত্বক সুস্বাস্থ্যের প্রতিফলন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ত্বকের পরিচর্যার মাধ্যমে ব্রণ, কালচেভাব, রোদে পোড়াভাব, বলিরেখা ইত্যাদি কমানো সম্ভব। ত্বকের সমস্যা খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী উপকারী পণ্য ব্যবহার সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
সানস্ক্রিন ব্যবহার
ত্বকের যত্নে সানব্লক ব্যবহারের বিকল্প নেই। ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। রোদের প্রখর আলো ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন তৈরি করে। যা থেকে মেছতা ও বলীরেখা দেখা দেয়। রোদের ক্ষতিকর ইউভিএ, ইউভিবি ও ইউভিসি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সানস্ক্রিনের কোন বিকল্প নেই। এটা সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। তাই সব সময়ই বাইরে যাওয়ার সময় সানব্লক ব্যবহার করা প্রয়োজন। এতে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও কমে।
ত্বকের জন্যে খাবার খাওয়া
শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যেমন খাদ্যাভ্যাসের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন, একইভাবে ত্বককে সুন্দর ও সুস্থ রাখার জন্যেও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ভীষণ জরুরি। ‘আপনি তাই, যা খাবেন’ অর্থাৎ আপনার চেহারায় সেটাই প্রকাশিত হবে যা আপনি খাবেন। বাইরের অস্বাস্থ্যকর ও তেলযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া হলে তার প্রভাব চেহারায় দেখা দেয় খুব অল্প সময়ের মাঝেই। চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সবজি ও ফল রাখতে। পাশপাশি তৈলাক্ত মাছ খেতে হবে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়ার জন্য। যা ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ও তৈলাক্ততাকে ধরে রাখতে কাজ করবে।
সুষম খাদ্যাভ্যাস
সুষম খাদ্যাভ্যাস দেহে সঠিক ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এতে শরীর ও মন ভালো থাকে। ফলে চেহারা দেখতে চনমনে ও উজ্জ্বল লাগে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান
পানি পানের গুরুত্ব বলে শেষ করা সম্ভব নয়। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুস্থতায় এবং শারীরবৃত্তীয় কার্যকারিতার জন্য পানি অপরিহার্য এক উপাদান। এর সাথে ত্বককে ভালো ও প্রাণবন্ত রাখার জন্যে পানি পান আবশ্যক। পানি পানে ঘাটতি হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। যা থেকে বলিরেখা ও ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা অবধারিত।
আরও পড়ুন: ঘরে বসে পাকা চুল কালো করার ৫ উপায়
ঘুম
যে রাতে ঘুম কম হয় বা ভালো হয় না, সেদিন সারাদিন চেহারা মলিন হয়ে থাকে। ঘুম সরাসরিভাবে চেহারার উপর প্রভাব ফেলে দেয়। কারণ ঘুমের সময়ে শরীর তার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পায়, শারীরিক ও মানসিক চাপ এ সময়ে একেবারেই থাকে না।
স্কিন কেয়ার মেনে চলা
নিজের ত্বকের ধরণ বুঝে ত্বকের যত্নের জন্য নির্দিষ্ট একটি স্কিন কেয়ার রুটিন নির্ধারণ করতে হবে। ত্বক পরিষ্কার করা, ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করা, রাত্রিকালীন ত্বকের যত্ন- সবকিছুকেই একটি নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে। হুটহাট যেকোন উপাদান বা নিয়ম ত্বকের উপর প্রয়োগের ফলে অনেক সময় ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়।
এক্সফলিয়েশন বাদ না দেওয়া
ত্বকের যত্নের কথা যেখানে বলা হচ্ছে, সেখানে এক্সগলিয়েশনকে কোনভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। বিশেষত যাদের নিয়মিত বাইরে ঘোরাঘুরি করা হয়, এক্সফলিয়েশন তাদের জন্য আবশ্যক। ত্বকের মরা চামড়া ও ধুলাবালিকে পুরোপুরিভাবে দূর করার জন্য এক্সফলিয়েশন আবশ্যক। ফেসওয়াস বা ফেস মাস্ক ব্যবহারেও পুরোপুরিভাবে মুখের ত্বককে পরিষ্কার করতে পারে না। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এক্সফলিয়েটর ব্যবহার হবে সবচেয়ে উপকারী।
আরও পড়ুন: রাতের খাবার সঠিক সময়ে খাওয়া জরুরি, না হলে হতে পারে বিপদ
ত্বকের ধরন অনুযায়ী কিছু ভেষজ উপাদান ব্যবহারের নিয়ম
তৈলাক্ত ত্বক
দুই টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে এক টেবিল চামচ টমেটো পেস্ট, এক চা–চামচ লেবুর রস এবং এক চা–চামচ মধু একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে রেখে ২০ মিনিট পর হালকা কুসুম পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
শুষ্ক ত্বক
এক চা–চামচ দুধের সর, এক চা–চামচ কাঠবাদামের পেস্ট, আধা চা–চামচ কাঁচা হলুদ একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিয়ে ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি গভীর থেকে ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।
স্বাভাবিক ত্বক
স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে কোকো পাউডার এক টেবিল চামচ, গোলাপজল এক টেবিল চামচ, নারকেল তেল আধা টেবিল চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে সারা মুখে মেখে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এ উপাদানগুলো ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের যত্নে
প্রথমে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। এবার ছোলার ডাল বা মুগ ডালের বেসন এক চা চামচ, চালের গুঁড়া এক চা চামচ এবং পরিমাণমতো দুধ দিয়ে সারা মুখ দুই মিনিট হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আলতো করে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
স্বাভাবিক ত্বক
এক টেবিল চামচ নারকেল তেল, আধা চা-চামচ কর্পূর তেল, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে সারা মুখে মেখে পরিষ্কার করে নিন।