শীত আসলে বাড়ে মাইগ্রেন, মুক্তি পাবেন যেভাবে

মাইগ্রেন দীর্ঘস্থায়ী ও অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়ে থাকে
মাইগ্রেন দীর্ঘস্থায়ী ও অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়ে থাকে  © সংগৃহীত

মাইগ্রেন দীর্ঘস্থায়ী ও অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়ে থাকে। মাইগ্রেনের যন্ত্রণা কম থেকে বেশি সব রকমই হতে পারে। উজ্জ্বল আলো, নির্দিষ্ট গন্ধ বা তীব্র আওয়াজের ফলে ব্যথা শুরু হতে পারে। এই অস্বস্তি মাথার এক ধার থেকে শুরু হতে পারে এবং দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাইগ্রেনের ফলে তীব্র মাথা যন্ত্রণার পাশাপাশি বমি, গা গোলানো, মুখে ও দেহে অস্বস্তিভাব দেখা দিতে পারে।

শীতকালে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা বেড়ে যায় হুট করেই। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে উইন্টার ব্লুজ নামক মানসিক বিষণ্ণতাও দেখা দেয় অনেকের। তবে এই আবহাওয়ার বদলে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হন মাইগ্রেনের রোগীরা। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার দরুন মাইগ্রেনের ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায় বেশ অনেকটা।

যার প্রধান কারণ হলো, শীতকালে সূর্যের দেখা কম পাওয়া। সূর্যের আলো কম পাওয়া মানেই হলো শরীরে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি। যার প্রভাব সরাসরি দেখা দেয় ক্রনিক মাইগ্রেনের রোগীদের মাঝে। আমেরিকান হেডেক সোসাইটির গবেষকেরা জানান, মাইগ্রেন আক্রান্ত রোগীদের মাথাব্যথা জনিত সমস্যা শীতকালে বেড়ে যায় প্রায় ৪২ শতাংশ পর্যন্ত।

বেশ কয়েকটি নিয়মকে প্রতিদিনের রুটিনে নিয়ে আসতে পারলে মাইগ্রেনের সমস্যা নিয়ে খুব বেশি ভাবতে না।

উষ্ণ থাকার চেষ্টা করা: শীত ও ঠান্ডা বাতাসের হাত থেকে নিজেকে যথাসম্ভব বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া মাইগ্রেনের সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয় অনেকটা। বিশেষত বাইরে বের হবার আগে মাথায় উলের টুপি বা ক্যাপ পরে নিতে হবে। মাথা, ঘাড় ও কপালের অংশকে বাইরের ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারলে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়বে না।

রোদের আলোর সংস্পর্শে থাকা: শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই রোদের আলো পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে যায়। তবে যখনই রোদের দেখা পাওয়া যাবে, চেষ্টা করতে হবে রোদের আলো পোহানোর জন্য। মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ার জন্য রোদের আলো তথা ভিটামিন – ডি এর অভাব সবচেয়ে বেশি দায়ী।

শীতের মধ্যে যথাযম্ভব ভিটামিন-সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং শীতকালীন সবজি ও ফল রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোন বেলায় খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না। গবেষণা সুপারিশ করে, খাবার না খাওয়ার ফলে মাইগ্রেনের ব্যথা তীব্র আকারে দেখা দেয়।

নিজেকে রাখতে হবে অ্যাকটিভ: শীতকালে যদিও কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকতে ভাল লাগে, কিন্তু সেই অভ্যাস যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। নিজেকে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক কাজের সঙ্গে জড়িত রাখার চেষ্টা করতে হবে। সেটা হতে পারে হাঁটাচলা, সাইকেল চালানো কিংবা দড়িলাফ দেওয়া।

আরও পড়ুন: শীতে যেসব কারণে ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা: জানেন কি, শীতকালেও শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়া খুব সহজেই শরীরকে শুষ্ক করে তোলে। পানির অভাবে স্বাভাবিকভাবেই মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। সেখানে যদি মাইগ্রেনের সমস্য থাকে, তবে তা প্রকট আকার ধারণ করবেই। তাই দিনভর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার চেষ্টা করতে হবে।

সোডিয়াম গ্রহণ থেকে দূরে থাকা: শীতকালে গরম পানীয় ও স্যুপ খেতে দারুণ ভালোলাগে। শীতকালীন সবজী ও মুরগীর মাংসের স্যুপ ধোঁয়া ওঠা স্যুপ যেমন সুস্বাদু, তেমনই স্বাস্থ্যসম্মত। তবে খেয়াল রাখতে হবে টেস্টিং সল্টের বিষয়ে। সোডিয়াম ও MSG অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করা হলে মাইগ্রেনের ব্যথা বেড়ে

যে সমস্ত খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে-

* ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত ও আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক

* বিভিন্ন ফল বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে

* সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়

* হার্বাল টি; হার্বাল টির মধ্যে বেছে নিতে পারেন গ্রিন টি।

* ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট

* ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম রয়েছে

* আদার টুকরো বা রস দিনে ২ বার পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন।

কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন

* চা, কফি, কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন টমেটো ও টকজাতীয় ফল খাবেন না।

* গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি

* আপেল, কলা ও চিনাবাদাম


সর্বশেষ সংবাদ