পিঠ ব্যথা কেন হয়?

পিঠ ব্যথা সাধারণত নিচের পিঠের পেশি, লিগামেন্ট, মেরুদণ্ড, কশেরুকার সমস্যা থেকে তৈরি হয়
পিঠ ব্যথা সাধারণত নিচের পিঠের পেশি, লিগামেন্ট, মেরুদণ্ড, কশেরুকার সমস্যা থেকে তৈরি হয়  © সংগৃহীত

ব্যাক পেইন শব্দটি আমরা আজকাল বেশ শুনতে পাই। এই ব্যাক পেইন বা পিঠ ব্যথা সাধারণত নিচের পিঠের পেশি, লিগামেন্ট, মেরুদণ্ড, কশেরুকার সমস্যা থেকে তৈরি হয়। পিঠ ব্যথার কারণগুলোর ভেতর সবচেয়ে বেশি থাকে পিঠের পেশিতে চাপ পড়া এবং পিঠের কাঠামোগত সমস্যা।

একটানা চেয়ারে বসে কাজ করার ফলে মেরুদণ্ডের হাড়ে ব্যথা হয়। বসে কাজ করার সময় মেরুদণ্ডের জোর ও পেশিগুলোর যে শক্তি প্রয়োজন হয়, তার অনেকটাই হারিয়ে ফেলি আমরা। পরিচর্যার অভাবে বয়স বাড়ার অনেক আগেই ব্যথাজনিত সমস্যায় ভোগেন অনেকে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক পিঠ ব্যথা বা ব্যাকপেইনের কারণগুলো কী কী। 

১. পিঠের পেশিতে চাপ বা স্ট্রেইন: পিঠের পেশিতে অতিরিক্ত চাপ, ভারী বস্তু ভুলভাবে উত্তোলন এবং ভুল ভঙ্গিতে শরীরের আকস্মিক নড়াচড়াতে প্রায়ই পিঠে ব্যথা করে। অতিরিক্ত কাজ করার ফলেও পেশিতে চাপ পড়তে পারে। 

২. কাঠামোগত সমস্যা: কশেরুকা হলো মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকা চাকতি আকারের হাড়। এই হাড়গুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত। প্রতিটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানগুলোতে ডিস্ক নামক টিস্যু থাকে এবং কশেরুকাগুলোকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে। এই ডিস্কে আঘাত পিঠে ব্যথার সাধারণ কারণ।

কখনো কখনো এই ডিস্কগুলো ফুলে যেতে পারে, বেরিয়ে পড়তে পারে (হার্নিয়েট হওয়া), অথবা ফেটে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের স্নায়ুতে চাপ পড়ে। এগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি ব্যথা হয়  হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা ডিস্কগুলো কশেরুকা থেকে বেরিয়ে গেলে। বেরিয়ে পড়া ডিস্ক স্নায়ুতে চাপ দিলে পিঠ বা  কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথা, শিরশিরে অনুভুতি এবং অল্প থেকে প্রচণ্ড পরিমাণ ব্যথা হতে পারে।


৩. বাত বা আর্থ্রাইটিস: স্পাইনাল অস্টিওআর্থারাইটিস পিঠে ব্যথার একটি সম্ভাব্য কারণ। এই রোগে আপনার পিঠের নিচের জয়েন্টগুলোর কারটিলেজের অবনতি ঘটে যার কারণে মেরুদণ্ড চেপে আসতে পারে বা সংকীর্ণ হতে পারে, যা ব্যথার কারণ।

৪. অস্টিওপোরোসিস: হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস এবং হাড় পাতলা হয়ে যাওয়াকে অস্টিওপোরোসিস বলা হয়। এতে আপনার কশেরুকার ছোটো ছোটো ফাটল হতে পারে যেগুলো গুরুতর ব্যথার কারণ।

৫. পিঠে ব্যথার অন্যান্য কারণ: ওপরে দেওয়া কারণগুলোর বাইরেও আরো কিছু কারণেও আপনার ব্যাকপেইন বা পিঠে ব্যথা হতে পারে। 

মেরুদণ্ডের নিচের অংশে স্নায়ুর কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া। মেরুদণ্ডের ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। মেরুদণ্ডে ক্যান্সার বা টিউমার।  কিডনি সংক্রমণ বা কিডনি পাথর।

আরও পড়ুন: যে খাবারগুলো ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়

৬. ওজন: অতিরিক্ত ওজনের ফলেও ব্যথা হতে পারে। এ জন্য ওজন কমিয়ে ফেলা এবং কিছু হালকা ব্যায়াম করলে উপকার পাবেন।

৭. প্রযুক্তি: আমরা এখন অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। নানা ধরনের ডিভাইস ও গ্যাজেটের সঙ্গেই আমাদের দিন কাটছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা টানা ক্লাস করছে এবং অনেকে অফিসের কাজ করছে ল্যাপটপ বা মোবাইলে। এর জন্য অনেকে নতুন করে পিঠ ও কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

কী করবেন:

ব্যথা  কোনো  রোগ নয়, বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। তাই কোনো ব্যথাকেই অবহেলা করবেন না। যে কোনো ধরনের ব্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করবেন না। ব্যথার ওষুধ খেয়ে অল্প অল্প ব্যথা দমিয়ে রাখলে তা পরে তীব্র আকার ধারণ করে আপনাকে আরও বেশি বিপদে ফেলে দিতে পারে।

আর অনেক ক্ষেত্রে এটি বিপজ্জনকও। কারণ বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

তাই ব্যথার কারণ নির্ণয়পূর্বক প্রযোজ্য চিকিৎসা; ইলেক্ট্রোথেরাপি, ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি বা আইপিএম শুরু করা উচিত। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক ব্যায়াম করতে হবে। ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের ব্যথার ওষুধ সেবন করা উচিত না

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।


সর্বশেষ সংবাদ