দ্রুত ওজন কমাতে ক্র্যাশ ডায়েট
চা বা কফি খেতেই পারেন। তবে অবশ্য দুধ আর চিনি ছাড়া। তিন বেলার খাবার পরই চা-কফি খাবেন না। খাবারেওজন দ্রুত কমাতে ক্র্যাশ ডায়েট প্ল্যান বেশ জনপ্রিয়। সাত থেকে দশ দিনে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব এতে। তবে এটা দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব নয়।
বসুন্ধরা সিটির গোল্ড জিমের সাবেক সিনিয়র ট্রেইনার জহিরুল হোসাইন জানালেন, অল্প সময়ে ওজন কমিয়ে তারপর ব্যালেন্স ডায়েটের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ওজন ধরে রাখতে পারলেই কেবল ক্র্যাশ ডায়েটের পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁর দেওয়া একটি ক্র্যাশ ডায়েট চার্ট নিচে উল্লেখ করা হলো। এতে সাত দিনে ৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। ক্র্যাশ ডায়েট চলাকালে প্রতিদিন অন্তত ১০ গ্লাস পানি পানের পরামর্শ দেন তিনি।
প্রথম দিন : কলা বাদে যেকোনো ফল অথবা জুস খাবেন সারা দিন। খাবারে রসাল ফল তরমুজ, আম, পেঁপে, কমলা, আনারস জাতীয় ফলে প্রাধান্য দিন। সারা দিনে যতবার খুশি খান, তবে শুধুই ফল।
দ্বিতীয় দিন : সবজি অথবা সবজি স্যুপ ইচ্ছেমতো সারা দিন খান। সিদ্ধ অথবা অল্প তেলে ভাপানো সবজিও খেতে পারেন। স্যুপ খেলে কোনো রকম মসলা ব্যবহার করা যাবে না।
তৃতীয় দিন : কলা বাদে যেকোনো ফল আর আলু বাদে যেকোনো সবজি খাবেন সারা দিন। মৌসুমি সব ধরনের ফলও খেতে পারবেন।
চতুর্থ দিন : সারা দিনে খাবেন ৮টি কলা, ৩ গ্লাস দুধ এবং ১ কাপ সবজি স্যুপ। আর যত খুশি পানি পান করুন।
পঞ্চম দিন : মাংস খাবেন। রুচি অনুযায়ী অল্প মুরগি বা গরুর মাংস বেশি করে টমেটো, কুমড়া বা লাউ দিয়ে রান্না করে খান। সঙ্গে সারা দিন প্রচুর পানি পান করুন।
ষষ্ঠ দিন : সারা দিন ইচ্ছেমতো সবজি আর মাংস খান।
সপ্তম দিন : ভাত বা রুটি খেতে পারেন । সঙ্গে ফল, জুস আর সবজি যত খুশি।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোন বৃষ্টিতে ভিজে গেলে করণীয়
ভাল-মন্দের ক্র্যাশ ডায়েট
ক্র্যাশ ডায়েটের ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। প্রথমেই ভালো কথা বলি। কোনো সার্জারি বা সিজারের আগে বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসক ক্র্যাশ ডায়েটের ফর্দ দিয়ে থাকেন। খুব অল্প সময়ে ওজন কমাতে যে কেউ এটা করতে পারেন। এ তো গেল ভালো দিক। মন্দ দিকও কম নয় ক্র্যাশ ডায়েটের। বারডেমের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা আখতারুন নাহার আলো বললেন, 'এটা একটা স্বল্পমেয়াদী খাদ্য-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। কঠোর খাদ্য-নিয়ন্ত্রণের ফলে ওজন দ্রুত কমবে ঠিকই, কিন্তু এ কারণে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয়।
অনেক সময় দেখা যায়, ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ হয় ঠিকই, কিন্তু পরে খুব কম সময়ের মধ্যে আবার আগের ওজন ফিরে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওজন আগের ওজনের চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ক্র্যাশ ডায়েট ১০ দিনের বেশি না চালানোর জন্য সতর্ক করা হয়। খুব বেশি দিন এ ধরনের ডায়েট মেনে চলতে গেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছাড়াও বাহ্যিক সমস্যা দেখা যায়। যেমন- ক্রমাগত মাথা ঘোরা, ঘুম না হওয়া, পেট ব্যথা, পেট খারাপ, দুর্বলতা ইত্যাদি। কাজকর্মে উৎসাহ না পাওয়া, সব কিছুতে আগ্রহ হারানো। এ ছাড়া চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়া অথবা ত্বকের সজীবতা হারানো ইত্যাদি সমস্যা হয়।'
১৫ দিনেই ওজন কমবে
খুব জরুরি না হলে ক্র্যাশ ডায়েট (কম সময়ে দ্রুত ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট) না মানাই ভালো। পুষ্টিবিদ এ বি সিদ্দিকী জানালেন, ক্র্যাশ ডায়েট ছাড়াও নিরাপদে আমরা ১৫ দিনে দুই থেকে আড়াই কেজি ওজন কমাতে পারি এবং এক মাসে ৪-৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। তাদের জন্য রইল ডায়েট চার্ট।
ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে একটা আস্ত লেবুর রস মিশিয়ে খান।
সকালের নাশতা: দুটি লাল আটার রুটির সঙ্গে এক বাটি সবজি ও একটি ডিমের সাদা অংশ, সঙ্গে সালাদ ১ বাটি।
সকাল ও দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে একটি মৌসুমি টক ফল।
দুপুরের খাবার : এক কাপ লাল চালের ভাত, সবজি এক বাটি, সামুদ্রিক মাছ এক পিস বা দেশী মাছ সপ্তাহে চার দিন। সপ্তাহের বাকি তিন দিন এক টুকরো করে মুরগির মাংস, এক বাটি ডাল। সঙ্গে এক বাটি সালাদ।
বিকেলের নাশতা : এক কাপ দুধ বা চিনি ছাড়া চা সঙ্গে দু-তিনটি বিস্কুট খেতে পারেন। অথবা এক বাটি টক দই বা ননিতোলা ঘোল।
রাতের খাবার : দুপুরের মতোই। তবে প্রতিদিনই ছোট মাছ খাবেন। মাংস খাবেন না। যাঁরা রাতে রুটি খান তাঁরা ভাতের বদলে দুটি লাল আটার রুটি খাবেন। রাতে ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাবেন।
শোবার আগে : এক গ্লাস ননি-বিহীন দুধ খাবেন। সারা দিনে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি অবশ্যই খাবেন।
ডায়েট ছাড়াও ওজন কমানো সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি আর সংযম। চলুন, জেনে নিই ১৫ দিনে ডায়েট চার্ট ছাড়া ওজন কমানোর উপায়
হফ্যাট বা চর্বিজাতীয় খাবার যেমন কেক, পেস্ট্রি, চকোলেট, কোল্ড ড্রিংকস, চিনি দেওয়া জুস, মিষ্টি থেকে খাবার তালিকা পুরোপুরি বাদ দিন। খাবারের সঙ্গে আলাদাভাবে কাঁচা লবণ খাবেন না।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপের যে মেসেজ ভুলেও দেখা যাবে না
প্রতি বেলার খাবার হবে ব্যালেন্স ডায়েট-সমৃদ্ধ। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার যেন সঠিক পরিমাণে থাকে। ভালো ফল পেতে প্রোটিন দিয়ে খাবার শুরু করুন। অল্প ভাত বা রুটির সঙ্গে প্রথমে সবজি না খেয়ে মাছ, মাংস বা ডাল খান। সবজি বা সালাদ খান শেষে। রাত ৮টার পর কার্বোহাইড্রেট-যুক্ত কোনো খাবার খাবেন না।
সকালের নাশতা যেনতেন-ভাবে করার অভ্যাস বাদ দিন। সকালের খাবার হবে সর্বাধিক প্রোটিনসমৃদ্ধ। মাংস চাইলে সকালেই খেয়ে নিন। দুপুরে এবং রাতে মাছ আর ডালেই সন্তুষ্ট থাকুন।
সুস্থতা আর সঠিক ওজনের জন্য ফল আর সালাদ খান। কম সময়ে ওজন কমাতে নিরাপদ ডায়েটের জন্য পুষ্টিবিদরা প্রতিদিন অন্তত ৫ সার্ভিং ফল ও সালাদ খাওয়ার পরামর্শ দেন। আধা বাটি সালাদ এক সার্ভিং হিসেবে ধরা হয়।
দ্রুত ওজন কমাতে আলু খাওয়া বাদ দিন। তবে সপ্তাহে এক-আধ-বেল তো মন চাইতেই পারে; কিন্তু প্রতিদিন নয়। দৈনিক খাবারে তেলের পরিমাণ যেন ২ চামচের বেশি না হয়। তেলে ভাজা খাবারের কথা বেমালুম ভুলে যান। অল্প তেলে বেকড করা খাবার খান। টক দই বা ঘোলও খেতে পারেন। এতে ক্যালসিয়ামের চাহিদা যেমন পূরণ হবে আবার ফ্যাটের ভয়ও থাকবে না। প্রতিদিন অন্তুত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। এতে দেহের পরিপাক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমান।র পর ঘণ্টা-খানেক বিরতি দিয়ে চা-কাফি পান করুন। বাড়তি ক্যালরি বা মেদ ঝরাতে শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। সঠিক ওজনের সঙ্গে এটি আপনার সুস্থতাও নিশ্চিত করবে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করুন। জিমে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। সাঁতার কাটা বা সাইক্লিং হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ ব্যায়াম।
যতই ডায়েটে থাকুন দাওয়াত বা বন্ধুদের আড্ডায় খাওয়াদাওয়া তো থাকবেই। একটু কৌশলী হোন এখানে। সব খাবার একসঙ্গে খেয়ে ফেলবেন না। প্রোটিন ও ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সালাদ, সবজি আর মাছ-মাংস খান। রাইস, রুটি অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার ছোঁবেন না।