০৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪৭

পিএইচডি করবে রোবট, ক্লাস করবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে

চীনা কোম্পানির তৈরি রোবাট শুয়েবা-০১  © সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন অধ্যাপক। সামনে বসে তা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন একদল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সবাই রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ নয়। একজন নানান যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি রোবট। হ্যা, শুনতে অবাক লাগলেও এটিই সত্য। চীন এবার এমন এক মানবসদৃশ রোবট বানিয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া ফেলেছে। 

এটি বিশ্বের প্রথম কোনও রোবট হিসেবে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড্রয়েডআপ রোবোটিকসের সহযোগিতায় ইউনিভার্সিটি অব সাংহাই ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি তৈরি করেছে ‘শুয়েবা-০১’ নামের রোবটটি।

প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, অদূর ভবিষ্যতে মানুষের পরিবর্তে অধিক কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এটি এমন এক ধরনের প্রযুক্তি, যা বহু কাজ মানুষের মতো কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে অধিক বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম।

চীনের সংবাদ মাধ্যমটির তথ্যমতে, শুয়েবা-০১ এর উচ্চতা ১.৭৫ মিটার, ওজন প্রায় ৩০ কেজি। এটি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম। এছাড়া রোবটটির মুখ সিলিকন ত্বক ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, যা দেখতে একটি সুদর্শন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মতো। চশমা, শার্ট এবং ট্রাউজার পরে থাকা শুয়েবা-০১ মান্ডারিন ভাষায় মানুষের সঙ্গে কথা বলে।

গত ২৭ জুলাই চীনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাংহাই থিয়েটার অ্যাকাডেমি (এসটিএ) আনুষ্ঠানিকভাবে শুয়েবা-০১ চার বছর মেয়াদি পিএইচডি প্রোগ্রামে নাটক ও চলচ্চিত্র বিভাগে ভর্তি করে। রোবটির ডক্টরেট প্রোগ্রামের চীনা ঐতিহ্যবাহী অপেরার ওপর গবেষণা করবে। 

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক ব্যন্ডউইডথ পরিবহনে ৪ টেরাবাইট মাইলফলক অতিক্রম করল বাংলাদেশ

সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোবটটি আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু করবে। তবে শিক্ষাকালীন খরচ কত হবে, তা প্রকাশ করা হয়নি। সাংহাইয়ের খ্যাতনামা শিল্পী ও অধ্যাপক ইয়াং ছিংছিংকে রোবটটির পিএইচডি প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। 

তিনি জানিয়েছেন, শুয়েবা-০১ মঞ্চনাটক, চিত্রনাট্য রচনা ও মঞ্চসজ্জার মতো শৈল্পিক বিষয়ের পাশাপাশি গতি নিয়ন্ত্রণ এবং ভাষা উৎপাদনের মতো প্রযুক্তিভিত্তিক বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করবে। এছাড়া অন্য পিএইচডি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাসে অংশ নেবে, অপেরা অনুশীলন করবে এবং একটি চূড়ান্ত গবেষণামূলক থিসিসও জমা দেবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেকে সংশয়ও প্রকাশ করেছে। এসটিএ’র এক শিক্ষার্থী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘চীনা অপেরার জন্য প্রয়োজন গভীর অভিব্যক্তি ও স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। একটা রোবট কি সত্যিই সেই যোগ্যতা অর্জন করতে পারে?’ আরেকজন লেখেন, ‘চীনের অনেক শিল্প বিষয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থী এখনও মাসে ৩ হাজার ইউয়ান (৪২০ মার্কিন ডলার) পর্যন্তও পান না। তাহলে কি এই রোবট আসল শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত সম্পদ দখল করে নিচ্ছে?’