প্রকল্প জটিলতায় ১৯ মাস বেতন নেই পৌনে ৮শ’ শিক্ষকের
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গত ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন মো. সুমন হায়দার। তবে তার পদটি প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে না যাওয়ায় গত ১৯ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তিনি। তাই বকেয়া বেতন এবং চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনশনে নেমেছেন সুমন।
শুধু সুমনই নন; চাকরি স্থায়ীকরণ এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষকদের একটি বড় অংশ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
জানা গেছে, ২০১২ সালে স্কিল ট্রেনিং অ্যান্ড এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (স্টেপ) এর অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত ৭৭৭ জন শিক্ষক এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে চাকরি হলেও সেটি রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় সমস্যা সমাধানে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। সবশেষ অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন তারা।
জানতে চাইলে সুমন বলেন, আমরা আমাদের যোগ্যতা বলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। যদিও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষক সংকট রয়েছে; তবুও আমাদের বরখাস্ত করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা হলে আমরা বঞ্চিত হব।
আরও পড়ুন: নিয়ম না মানায় গড়ে উঠছে না ভালো বিদ্যালয়
অনশনরত আরেক শিক্ষক আহাদ আলী বলেন, আমরা কারিগরি শিক্ষার জন্য ১০ বছর উৎসর্গ করেছি। এখন আমাদের রাস্তায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভাগা শিক্ষক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. আক্তারউজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যারা অনশন করছেন তাদের চাকরি প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করছি।
জানা গেছে, ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের মান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ বর্ধিতকরণ প্রকল্প পরিচালনা করে সরকার। প্রকল্পের অধীনে ৫২টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ১ হাজার ১৫ জন শিক্ষকক নিয়োগ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মাদ্রাসাশিক্ষক গ্রেপ্তার
প্রকল্প শেষ হওয়ার পর শিক্ষকদের পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের বহাল রাখা হলেও তাদের পদগুলো রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এতে গত ১৯ মাস ধরে তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতন পাননি এবং তাদের পদ স্থায়ী করার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক এবং এটি দুঃখজনক যে তারা শ্রেণীকক্ষে না থেকে অনশনে করছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার পরিচালিত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর বেহাল দশা ও শিক্ষকের তীব্র ঘাটতির কারণে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলস্বরূপ হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে টিকে থাকার জন্য পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা না পেয়েই তাদের কোর্স শেষ করছে। তাই বর্তমান শিক্ষকদের বহিষ্কার করা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।