বিসিএস শিক্ষা সমিতির নির্বাচনে কার পাল্লা ভারী?

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নির্বাচন
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নির্বাচন  © লোগো

আজ রবিবার (২০ মার্চ) বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র নির্বাচন। দীর্ঘদিন পরে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনেই সর্বোচ্চ ছয়টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। ফলে ১৫ হাজার ক্যাডার সদস্যদের এই নির্বাচনের প্রচারণা তুঙ্গে রয়েছে। ভোটারদের মুখে মুখেও রয়েছে নির্বাচনের খবর। ইতিমধ্যেই একাধিক প্যানেল থেকে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে আজমতগীর-জাফর প্যানেল, শাহেদ-রেহানা প্যানেল, তৌফিক-মাসুদ রানা প্যানেল, সরফরাজ-বাশার প্যানেল, নোমানি-শওকত প্যানেল, লাল-সবুজ প্যানেল এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও রয়েছেন। তবে সরফরাজ-বাশার প্যানেলের বেশিরভাগ সদস্যের প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় তারা ভোটের মাঠে নেই।

জানা গেছে, এবারের ভোটের মাঠে অনেকখানি এগিয়ে আছেন আজমতগীর-জাফর প্যানেল। এমনকি একাধিক জরিপেও এই প্যানেলের এগিয়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। এই প্যানেলে সভাপতি পদে রয়েছেন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর ও মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন সৈয়দ জাফর আলী।

অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক মহাসচিব, সহ-সভাপতিসহ একাধিক দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষা ক্যাডারে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তিনি অত্যন্ত পরিচিত মুখ। আর মহাসচিব প্রার্থী মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলী স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদেরও সদস্য সচিব। তিনিও শিক্ষা ক্যাডারে অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ। যুগ্ম মহাসচিব প্রার্থী হয়েছেন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার। যিনি দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের যে কারও প্রয়োজনে এগিয়ে যান বলে সুখ্যাতি আছে।

এছাড়া বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ এবং সিনিয়র-জুনিয়ররাই আজমতগীর-জাফর প্যানেলের প্রার্থী। যাদের সমর্থন দিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানী খান এবং অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। অপরদিকে, শাহেদ-রেহানা প্যানেলে সভাপতি প্রার্থী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী। যিনি সমিতির সাবেক মহাসচিব। গত কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের সাড়ে তিন বছর পরও নির্বাচন না হওয়ার পেছনে তাকেই দায়ী করেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা।

তারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন সমিতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় দাবি-দাওয়া আদায়ে পিছিয়ে পড়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। এছাড়া মাউশি অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার পরিচালক পদে থেকে সমিতির সভাপতি প্রার্থী পদে নির্বাচন করা নীতি-নৈতিকতা বিরোধী বলেও মত অনেকের। আর ইডেন মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোছা. রেহেনা পারভীন এই প্যানেলের মহাসচিব প্রার্থী।

তবে এই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় নির্বাচনে সেই প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন অন্য প্যানেলের প্রার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, নোমানি-শওকত প্যানেলের মহাসচিব প্রার্থী মো. শওকত হোসেন মোল্যা ভিন্ন ঘরনার রাজনৈতিক মতাদর্শের। কিন্তু শাহেদ-রেহানা প্যানেলের মহাসচিব প্রার্থী রেহেনা পারভীন অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও অপরিচিত প্রার্থী হওয়ায় শওকত হোসেন মোল্যার সঙ্গে সমঝোতা করেছে শাহেদ-রেহানা প্যানেল। তারা সভাপতি হিসেবে শাহেদুল খবির চৌধুরীকে সমর্থন দেবেন।

আর মহাসচিব হিসেবে শাহেদ-রেহানা প্যানেল শওকত হোসেনকে সমর্থন দেবেন। কিন্তু এই সমঝোতা ভালোভাবে নেননি শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। এতে দুই প্যানেলেরই জনপ্রিয়তা কমেছে। তবে সমঝোতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শওকত হোসেন। তবে এ ব্যাপারে জানার জন্য শাহেদুল খবির চৌধুরীকে ফোন দিলেও তিনি তা ধরেননি।

অন্যদিকে, শিক্ষা ক্যাডারের তরুন সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে লাল-সবুজ প্যানেল। তারা অল্প সংখ্যক পদে প্রার্থী দিয়েছেন। সভাপতি ও মহাসচিব পদে তাদের কোনো প্রার্থী নেই। তবে এই প্যানেলের জনপ্রিয় প্রার্থী মাউশি অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) চন্দ্র শেখর হালদার। যিনি কোষাধ্যক্ষ পদে প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। ভোটারদের আস্থা অর্জনে তিনি অন্য সকল প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে আছেন।

আমতগীর-জাফর প্যানেলের মহাসচিব প্রার্থী সৈয়দ জাফর আলী বলেন, বিভিন্ন কলেজে আমাদের নির্বাচনী কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় অনেক প্রার্থী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। যা নির্বাচনী বিধি লংঘন। তবে ভোটাররা সবাই সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার অধিকারি, তারা যোগ্য ব্যক্তিকেই বেছে নিবেন।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে শিক্ষা ক্যাডারের সকল সদস্য তাদের মনে আমাদের জায়গা দিয়েছেন। আমরা যেখানেই যাচ্ছি, বিপুল সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি, আমাদের পূর্ণ প্যানেল বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। শিক্ষা ক্যাডারের দাবি আদায়ে আমরা সবসময় সদস্যদের পাশে থাকবো। ইতিমধ্যে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি।

লাল-সবুজ প্যানেলের কোষাধ্যক্ষ প্রার্থী চন্দ্র শেখর হালদার বলেন, পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়েই আমাদের প্যানেল ঘোষণা করেছি। যেহেতু আমাদের প্রার্থী বেশিরভাগই নবীন তাই সভাপতি-মহাসচিবের মতো পদে আমরা প্রার্থী দেইনি। যেসব পদে আমরা প্রার্থী দিয়েছি সেখানে জয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী।


সর্বশেষ সংবাদ